শ্রোতারা ভালো গান শুনতে পাচ্ছেন না

কিংবদন্তি আব্বাসউদ্দীন, ছোট নানি ফেরদৌসী রহমান, নানা মুস্তাফা জামান আব্বাসী, মা নাশিদ কামালএমন গুণী মানুষদের উত্তরাধিকারী। নিজে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন মিউজিকে। ফুয়াদের মিউজিকে ভ্রমর কইও গিয়া গানের মাধ্যমে অল্প বয়সে পেয়েছিলেন খ্যাতি। গেয়েছেন সিনেমায়ও। তিনি আরমীন মূসা নিজের কাজ, ইন্ডাস্ট্রি, পরিকল্পনা, করোনার ক্রাইসিস ইত্যাদি নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন হাসান জামিল

কেমন আছেন? কী কাজ করছেন?

ভালো আছি, ব্যস্ত আছি। পিএসএ বানাচ্ছি বাসায় বসে। বিশ্বাস করবেন না, সময় আমি সবচেয়ে ব্যস্ত। পিএসএ মানে পাবলিক সার্ভিস অ্যানাউন্সমেন্ট, করোনার জন্য। ভয়েস ওভার দিচ্ছি। আমি আসলে ভাগ্যবান যে নিজেকে ইউজফুল করতে পারছি।

কী কাজ করছিলেন এর আগে?

২৬ মার্চ মিনিটের একটা মিউজিক ভিডিওর জন্য কাজ শুরু করেছিলাম, ছয়জনকে ট্রিবিউট করে। সেটা হলো না বলে সবার মন খারাপ। পরে অনলাইনের মাধ্যমে বাসায় বসে লিপ দিয়েছি সবাই। সেটার অংশ হিসেবে মিনিটের একটা কাজ বাসায় বসে রিলিজ করেছি।

গত ১০-১৫ বছরে ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে, আপনি কীভাবে দেখেন?

গত ১০ বছরের মধ্যে পাঁচ বছর ভেতরে থেকে নোটিস করেছি, পাঁচ বছর বাইরে থেকে নোটিস করেছি। সেটা হচ্ছে আগে আমাদের একটা ইনিশিয়েটিভ ছিল। ফেরদৌসী রহমানরা ছিলেন; লাকি আখন্দ, হ্যাপি আখন্দ, ফেরদৌস ওয়াহিদরা গান করছেন; তারপর মাইলস, এলআরবি ঢুকল। ইন্টেলেকচুয়াল মিউজিশিয়ানরা জায়গাটা ডমিনেট করতেন, চর্চা করা প্রডিউসাররা তখন গানে ভালোটা পুশ করতেন। এখন পুশ করছেন  না, হালকা হচ্ছে প্রায় সব।

মানে একজন আর্টিস্টের কাজ হচ্ছে গণরুচি তৈরি করা, সেখানে এখনকার আর্টিস্টরা গণরুচিতে গা ভাসাচ্ছেন।

একজ্যাক্টলি! এটাই বলতে চাইছি। প্রত্যেক দেশেই একটা ব্যালান্স থাকে। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকায়ও ম্যাসকে নাচানোর গান আছে, আবার ফরিদা পারভীনও আছেন।

প্রযুক্তি বা যন্ত্রের যে উল্লম্ফন, সেটা সহজ করে দিচ্ছে কিনা?

সেটা তো সব দেশেই হয়েছে। কিন্তু আমেরিকার বিলবোর্ড টপচার্ট দেখেন, টপচার্টে জাস্টিন টিম্বারল্যাক থাকবে, আরিয়ানা গ্রান্ড থাকবে। যারা সত্যিই ভালো গান করছেন। হ্যাঁ, তারাও মজার গান করছেন, শ্রোতারাও নাচছে, কিন্তু তারা কখনো মূল জায়গাটা ছাড়েন না।

মানে মেইনস্ট্রিম ইন্ডাস্ট্রি শাসন করেন?

ম্যাস আসলে লস করছে, ভালো গান শুনতে পাচ্ছে না। সব হারিয়ে যাচ্ছে। ইউটিউবে -১০ হাজার ভিউজের মধ্যে এগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। যেখানে বেশি পপুলার মানে প্রথম দিনে ১০ মিলিয়ন হয়ে গেল, আবার এক বছরের মধ্যে কারো মনেও থাকবে না। এগুলো মোমেন্টারি কিছু।

আপনার ঘাসফড়িং কয়ারের কী অবস্থা এখন?

এই যে আপনাকে যেটা বললাম, ৪০ জনের প্রজেক্ট। ৪০ জনের প্রজেক্ট তিন মাস ধরে প্রিপেয়ার্ড করেছিলাম। আসলে এলআরবি, লাকি আখন্দ, রেনেসাঁ বিদেশীদের করা বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে গান শুরু করেছিলাম।

আপনার এশিয়ান স্কলারশিপ ছিল। মিউজিকে? আপনার বেসিক সাবজেক্ট কী ছিল?

অ্যারেনজিং মিউজিক অ্যান্ড লাইভ প্রডাকশন। মিউজিক ডিরেকশন যেটাকে বলে। ওটার ওপর পড়াশোনা করেছি এবং লাইভ প্রোডাকশনে কাজ করেছি। মানে মিউজিক্যালি ম্যানেজ করা, লাইভ কনসার্টে যেটা হয়। ৩০-৪০ জনের যে কনসার্টে কাজ হয়। ৪০ জনের একেক অংশ কী হতে পারে, কে কোথায় ঢুকবে, কে কোথায় বের হবে, কোথায় সবাই থাকবে, কোথায় একজন থাকবেএটা নির্দেশনা দেয়াই অ্যারেনজিং।

আপনার ভ্রমর কইও গিয়া তো জনপ্রিয় হয়েছিল।

আমি আসলে খুব কম গাই গানটা। আমি তখন লেভেলে পড়ি যখন গানটা রেকর্ড হয়, ফুয়াদ আল মুক্তাদিরের স্টুডিওতে। জাস্ট মজা করার জন্য আমরা গানটা রেকর্ড করেছিলাম।

আব্বাসউদ্দীনের গান নিয়ে আপনার কোনো পরিকল্পনা আছে কি?

আমার ঘাসফড়িং কয়ার তো আব্বাসউদ্দীনের গান করে। আমি একটা গান রেকর্ড করেছি, এখনো ছাড়া হয়নি। এখন আমি কোনো ফোক গান যদি আমার ভয়েস দিয়ে গাই, সেটার সাউন্ডটা খুবই অন্য রকম হয়, অত অথেনটিক হয় না। একটা গান রেকর্ড করেছি এবং আমার ইচ্ছা আছে আমার গলায় নয়, নতুন অনেক ভালো ফোক আর্টিস্ট আছেন, তাদের গলায় গান করানো। মরে যাওয়ার আগে এই কাজ করে যাব।

আর কী করছেন?

আমার কবিতার বইয়ের কাজ ধরছি। এডিট করছি।

কবিতা ইংরেজিতে নাকি বাংলায়?

ইংরেজিতে। এটা আসলে আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম যে কোনো একদিন আমি আমার সব কবিতা একসঙ্গে বের করব। তো এখন কাজ করছি।

বাংলায় লেখার ইচ্ছে আছে কখনো?

আমি আনফরচুনেটলি ইংলিশ মিডিয়ামে পড়েছি এবং ১৮ বছর বয়স থেকে বিদেশ ছিলাম। আমার বাংলা চর্চাটা খুবই খারাপ। আমি নিশ্চিত বাইরে সবাই খুব সমালোচনা করে এজন্য, কিন্তু আমি খুবই সচেতন এবং আমি খুবই লজ্জিত। আমি চেষ্টা করি।

আপনার ওপর আপনার মা বা ছোট নানির প্রভাব কী রকম?

অসম্ভব! মানে মিউজিক্যালি আমরা খুবই আলাদা জনরার। কিন্তু তাদের ডিসিপ্লিন, তাদের প্যাশন, তাদের গানের সঙ্গে সম্পর্ক দেখে বড় হয়েছি এবং এটাই মেইন প্রভাবটা। আম্মুর নিজের একটা কথা, গানকে সারা জীবন বন্ধু করে রাখো। গান সঙ্গ দেয়া থেকে শুরু করে স্পিরিচুয়াল, ইমোশনাল, মেন্টাল হেলপ...সব জায়গায় আপনাকে সহযোগিতা করবে। এটাই আমি পরিবার থেকে শিখেছি।

নিজের সংসার নিয়ে কিছু ভাবছেন?

একদমই না।

আপনি কি গান শেখাচ্ছেন কোথাও?

যখন আমাদের পারফরম্যান্সের লো সিজন থাকে, তখন আমি শিশুদের গান শেখাই।

সময়টা নিয়ে আপনার শ্রোতাদের কিছু বলতে চান

এখন আমাদের যারা হিরো ডাক্তার, হেলথ ওয়ার্কার, তাদেরকে বেশি সাপোর্ট দেয়া দরকার। তাছাড়া বাড়িতে সমর্থ মা বা স্ত্রী সব কাজ করেন, কিন্তু এখন আমরা বাড়িতে আছি, সবাই যেন সহযোগিতা করি বাসার কাজগুলো করতে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন