করোনা মোকাবেলায় করণীয় সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী

নির্দেশনা পালনে সবাই সচেষ্ট হোক

দেশব্যাপী চলমান ছুটির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে টেলিফোন কনফারেন্স করলেন দীর্ঘ সময় ধরে। এতে বেশকিছু নির্দেশনা তিনি দিয়েছেন। ছুটি বাড়ানো, ঘরে থাকা, সতর্ক হওয়া, দরিদ্রদের সহায়তা প্রদানসহ বেশকিছু নির্দেশনা তিনি মাঠ প্রশাসনকে দিয়েছেন। তিনি বলেন, দুর্যোগ এলে তা সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করতে হবে। সেজন্য সবাইকে সেভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। এতে ভীত হওয়ার কিছু নেই। মনের জোর থাকতে হবে। অনেক দুর্যোগ আমরা মোকাবেলা করেছি। ইনশা আল্লাহ, দুর্যোগ মোকাবেলা করে যাচ্ছি এবং করে যাব। আমরা বিজয়ী জাতি। মুক্তিযুদ্ধ করে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। এখানেও আমরা বিজয় অর্জন করব ইনশা আল্লাহ। করোনাভাইরাস নিয়ে বিশ্বপরিস্থিতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক উন্নত দেশে দেখছি অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। রোগ সংক্রমিত হচ্ছে। সব মেরুকরণ ভেঙে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে  ভূখণ্ডের দিক থেকে আমরা ছোট। জনসংখ্যার দিক থেকে বিশাল। অবস্থার মধ্যে থেকেও আমরা যথেষ্ট সচেতনতা সৃষ্টি করতে পেরেছি। এজন্য যারা কাজ করেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। সবাই নিজেদের জায়গায় থেকে যার যার দায়িত্ব পালন করেছেন বলেই এটা আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, জীবন পড়ে থাকবে না, চলবে। সেদিকে লক্ষ রেখে আমাদের কাজ করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জনগণকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। তবে এই সুরক্ষা করতে গিয়ে মানুষকে কষ্ট দেয়াটা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। করোনা থেকে জনগণকে সুরক্ষার জন্য জনকল্যাণে নির্দেশনা পালন করতে হবে। সবাইকে যার যার জায়গায় থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

নববর্ষ উৎসব বন্ধ থেকে শুরু করে ছুটি আরো বাড়ানোর কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। নিঃসন্দেহে প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জনগণ আশ্বস্ত হয়েছে। তার বক্তব্যে গরিব মানুষের জন্য আশার বাণী মিলছে। কথা হলো, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আমলে নিয়ে প্রশাসন মাঠ পর্যায়ে কতটা ভূমিকা রাখবে। প্রধানমন্ত্রী করোনা প্রতিরোধে আবারো শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। কিন্তু হতাশার বিষয় হলো, জনগণ এটি পরিপালন করছে না। সরকারের খাদ্যসহায়তা কার্যক্রম সমন্বিতভাবে এখনো চালু হয়নি। বেসরকারি উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমধর্মী কিছু পদক্ষেপ নেয়া হলেও গ্রামে সরকারের কার্যক্রম পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ঢাকায় টিসিবির ট্রাকে ময়দা, চিনি, ডাল, তেল প্রদান করা হলেও তা চাহিদার তুলনায় স্বল্প। এখানে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে না। বণিক বার্তায় প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, প্রায় দুই কোটি দিনমজুুর কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তাদের অধিকাংশই দিন আনে দিন খায়। তাদের খাদ্যের সংস্থান করা বড় এক চ্যালেঞ্জ। স্থানীয় প্রশাসন সহজেই তাদের চিহ্নিতপূর্বক খাদ্যসহায়তা প্রদান করতে পারে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে কীভাবে কাজে ব্যবহার করা যায়, তারও পরিকল্পনা থাকা আবশ্যক। কেননা এত বৃহৎ কার্যক্রম সরকারের একার পক্ষে বাস্তবায়ন কঠিন বৈকি। তাছাড়া অপচয় অপব্যবহার রোধে কঠোর নজরদারিরও প্রয়োজন রয়েছে।

ব্যবসা-বাণিজ্য অর্থনীতিতে এক ধরনের স্থবিরতা নেমে এসেছে। অবস্থায় নিম্ন আয় খেটে খাওয়া মানুষ, যাদের কিনা সঞ্চয় নেই, তাদের অবস্থা শোচনীয় পর্যায়ে চলে এসেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতি কতদিন চলতে পারে, সেটি বিবেচনায় নিয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা হাতে নেয়া প্রয়োজন। দিনমজুর নিম্ন আয়ের মানুষদের খাদ্য বাসস্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যঝুঁকিও যেন না থাকে, সেটি সতর্কতার সঙ্গে দেখতে হবে। সব মিলিয়ে একটি সমন্বিত উদ্যোগ খুব দ্রুত গ্রহণ না করলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। বাংলাদেশ এখনো করোনার ঝুঁকিতে আছে এমন কোনো তথ্য নেই। তার পরও সতর্ক থাকতে হবে। তবে শিশু বৃদ্ধরা ভাইরাসের প্রভাবে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম। তার পরও মুহূর্তে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য সতর্কতা জারি করা হয়েছে। হাসপাতালগুলোয় বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ভাইরাস বাংলাদেশে বিস্তার ঘটতে পারে। তাই আমাদের সতর্ক হতে হবে। সতর্কতাই আমাদের ভাইরাস থেকে প্রথমত দূরে রাখতে সাহায্য করবে। ভাইরাস প্রতিরোধে আমাদের উদ্যোগ নিতেই হবে। করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হতে হবে। একই সঙ্গে কোথাও কোনোভাবে যেন আতঙ্ক ছড়ানো না হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা জরুরি। এক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। প্রশাসনের কাজ তদারকির জন্য গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো যেতে পারে। দরিদ্রদের খাদ্যসহায়তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। একই সঙ্গে করোনা-পরবর্তী অবস্থা মোকাবেলায় কর্মপরিকল্পনা থাকা আবশ্যক।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন