আগামীকাল ৪২তম এল ক্ল্যাসিকো খেলতে নামবেন লিওনেল মেসি।
এ
সংখ্যাটি নেহাত কম নয়, যা বুঝিয়ে দিচ্ছে মেসির বয়স হয়েছে।
পাশাপাশি এটাও বলে দিচ্ছে, মেসি আরো পরিপক্ব।
সেই ১৮ বছর বয়সে প্রথম ক্ল্যাসিকো খেলতে নেমেছিলেন।
তারপর বেলা গড়িয়েছে অনেক।
ব্যক্তিগত ও ক্লাব পর্যায়ে একের পর এক সাফল্য পদানত হয়েছে।
তবে এসব অর্জনের পরিক্রমায় সময়ও গড়িয়ে গেছে অনেক।
তবে বয়স বাড়লেও মেসি এখনো নিজের সেরা সময়কে পেছনে ফেলেননি।
তাই ফুটবলের এই জাদুকরের শেষ দেখতে আরো কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।
তবে প্রশ্ন হচ্ছে, বার্সার হয়ে শেষ করতে পারবেন তো মেসি? বিশেষ করে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় দুই পক্ষের মাঝে জলঘোলা হয়েছে অনেক, যা নিশ্চিতভাবেই সমর্থকদের জন্য আনন্দদায়ক কিছু নয়।
মেসি যখন বার্সায় আসেন, তখন ক্লাবটির হয়ে দুনিয়া কাঁপাচ্ছিলেন রোনালদিনহো নামের এক জাদুকর।
অনুশীলনে প্রথম সেশন শেষ করেই রোনালদিনহো বলেন, ‘সে
(মেসি) বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় হতে যাচ্ছে।’ ব্রাজিলিয়ান সেনসেশনের এই ভবিষ্যদ্বাণীকে অক্ষরে অক্ষরে সত্যি প্রমাণ করেছেন মেসি।
এমনকি সেই বাণীকেও ছাড়িয়ে এগিয়ে গেছেন অনেক দূর।
তার সময়ে একমাত্র ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ছাড়া অন্য কেউ ছুঁতে পারেনি সেই উচ্চতা।
তবে চূড়ায় ওঠার এ অভিযাত্রায় বারবার নিজেকে ভেঙেছেন মেসি।
দুর্দান্ত উদীয়মান তরুণ প্রতিভা হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা মেসি এখন কিংবদন্তি।
এ
মুহূর্তে খেলা ছেড়ে দিলেও সর্বকালের সেরাদের একেবারে সংক্ষিপ্ত তালিকায় ঠাঁই পাবেন তিনি।
এর
মাঝে বিয়ে করে সংসারী হয়েছেন, আছে স্কুলগামী সন্তানও।
নিজের ছত্রচ্ছায়াতে তাদেরও বড় করছেন মেসি।
মাঠে খেলায় ও ডাগআউটে অনেককেই পেয়েছেন মেসি।
কেউ ছেড়ে গেছেন, আবার কেউ ফিরে এসেছেন।
কিন্তু একটা নীতির ব্যাপারে এখনো অটল থেকে গেছেন মেসি।
তিনি নিজের আশপাশে সেসব মানুষকে রাখতে চান, যাদের তিনি বিশ্বাস ও পছন্দ করেন।
শুরুতে রোনালদিনহো ও ডেকোর কাছ থেকেই সেই বিশ্বাস ও আস্থাটা পেয়েছিলেন তিনি।
সাম্প্রতিক সময়ে তাকে একই ধরনের অনুভূতি দিয়েছেন বন্ধু লুইস সুয়ারেজ।
আর
পারিবারিকভাবে স্ত্রী আন্তোনেল্লা ও সন্তানরাও তাকে দিয়েছে ভরপুর আত্মবিশ্বাস এবং জাগ্রত করেছে দায়িত্ববোধও।
এ
ব্যাপারগুলোও মাঠে এবং মাঠের বাইরে মেসিকে আরো বেশি দায়িত্ববোধ ও পরিণত আচরণে
সাহায্য করেছে।
খেলোয়াড়ি দিক থেকে ক্লাবে মেসির অবস্থানও এই সময়ের মাঝে বদলে গেছে অনেকটাই।
একের পর এক সাফল্যের প্রতিদানস্বরূপ ক্লাবও মেসিকে দিয়েছে অপার স্বাধীনতা।
সাধারণত ইউরেপিয়ান শীর্ষ ক্লাবগুলোয় কোচই একই সঙ্গে নেতা ও ডিরেক্টরের ভূমিকা পালন করেন।
কিন্তু বার্সায় ব্যাপারটা একটু ভিন্ন।
যেখানে মেসিই হচ্ছেন নেতা এবং সেই অনুসারেই পরিচালিত হন ক্লাবের দায়িত্বে থাকা কোচ।
আর
এ
প্রক্রিয়ায় বেরিয়ে আসে মেসির সেরাটাও।
অবশ্য তার কথা না শুনেও কোনো উপায় নেই।
তিনি এমন খেলোয়াড়, যিনি একাই ম্যাচ বের করে আনতে পারেন।
এমনকি ডাগআউটে বসেও কোচকে নানা ধরনের পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করে থাকেন ছয়বারের ব্যালন ডি’অরজয়ী।
কুইক সেতিয়েনের অধীনে অবশ্য সংগ্রাম করছে বার্সা।
মেসিও বুঝতে পারছেন দল এখন সেভাবে খেলতে পারছে না।
এর
মানে, দলকে আরো শক্তিশালী করতে হবে এবং সেটি কীভাবে করতে হবে, তা মেসির চেয়ে আর কেইবা ভালো জানেন।
এর মাঝে অবশ্য বার্সার সঙ্গে মেসির টানাপড়েনের ঘটনাও সামনে এসেছে।
ক্লাবের ফুটবল ডিরেক্টর এরিক আবিদালের সঙ্গে কথার লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েন ‘এলএম
টেন’।
আবিদাল বলেছিলেন, খেলোয়াড়দের কারণেই বিদায় নিতে হয়েছে আগের কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দেকে।
তার এমন মন্তব্য মানতে পারেননি মেসি।
প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
মেসি বলেন, সবারই নিজ নিজ কাজের ব্যাপারে দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন।
পরে তিনি আরো বলেন, ‘আমি
জানি না তিনি কী ভেবে এটা বলেছেন।
কিন্তু আমি আক্রান্ত হয়েছি।
আমি মনে করি, খেলোয়াড়রাও আক্রান্ত হয়েছে।’
মেসির প্রতিক্রিয়া সেদিন বার্সায় গৃহযুদ্ধের আভাসও দিয়ে রাখে।
যদিও দ্রুত রুদ্ধদ্বার বৈঠকের করে আপাত এ সমস্যার সমাধান করে বার্সা কর্তৃপক্ষ।
এ
ঘটনা মূলত অনেকগুলো বিষয় সামনে নিয়ে আসে।
প্রথমত, প্রমাণ দেয় ড্রেসিরুমে মেসি কতটা প্রভাবশালী সেটা।
এছাড়া ক্লাবের ওপর মেসির অসন্তুষ্টির বিষয়টিও সামনে আসে।
এমনকি এ ইস্যুর জের ধরে মেসি বার্সা ছেড়ে ম্যানচেস্টার সিটিতে চলে যেতে পারেন বলেও খবর প্রকাশিত হয়।
যদিও এসব গুজব খুব বেশি ডালপালা মেলেনি।
তবে সাময়িকভাবে চাপা পড়লেও এখন বার্সেলোনা মেসির ভবিষ্যৎ সত্যিকার অর্থেই প্রশ্নবিদ্ধ।
তিনি শেষ পর্যন্ত বার্সায় নিজের ক্যারিয়ারের ইতি টানবেন কিনা, এ প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ।
অবশ্য আর্জেন্টাইন গ্রেট নিজে অনেকবার বলেছেন, তিনি ক্যারিয়ার শেষ করতে চান নিজ দেশের ক্লাব নিউয়েলস ওল্ড বয়েজের হয়ে।
তবে যে অঞ্চলে এ ক্লাবটির অস্তিত্ব, তার আর্থসামাজিক অবস্থা মোটেই বিষয়টিকে সমর্থন করে না।
সেক্ষেত্রে অনেকেই ধরে নিয়েছিল, মেসি হয়তো বার্সাতেই নিজের ক্যারিয়ারের ইতি টানবেন।
এর
আগে তাকে যখনই জিজ্ঞেস করা হয়েছে তিনি বলেছেন, ‘দুই
পক্ষই যতক্ষণ পর্যন্ত খুশি থাকবে, কেন নয়?
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সেই খুশির দিন কি শেষ হচ্ছে? অনেক কিছুই এখন বার্সার পক্ষে নেই।
ইউরোপে সাফল্য নেই অনেক দিন।
লা
লিগাও এবার বেশ হুমকির মুখে।
তার ওপর দলও ঠিক মনমতো পাননি তিনি।
গত
মৌসুমে খুব করে চেয়েছিলেন নেইমারকে আনতে।
দল
তাকে আনতে পারেনি।
তাই আগামী মৌসুমে দল কেমন হয়, তার ওপরও নির্ভর করছে অনেক কিছু।
নয়তো নতুন কোনো গন্তব্যের সন্ধানে নামতেই পারেন ‘এলএম
টেন।’ বিবিসিতে প্রকাশিত গিলিয়েম বালাগের কলাম অবলম্বনে।