মহেশখালীতে শিল্পায়নে ২০ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ

লবণ উৎপাদনের জমি কমায় বিকল্প খুঁজছে বিসিক

সুজিত সাহা চট্টগ্রাম ব্যুরো

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় লবণ চাষ হয় ২০ হাজার একর জমিতে, যা মোট লবণচাষীয় জমির এক-তৃতীয়াংশ কিন্তু উপজেলাটিতে ব্যাপক আকারে শিল্পায়নের প্রভাবে সংকুচিত হয়ে আসছে লবণ চাষের জমির পরিমাণ দেশীয় চাহিদা মেটাতে বাধ্য হয়ে উপকূলীয় জেলা, উপজেলায় বিকল্প জমি খুঁজছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্প করপোরেশন (বিসিক) তবে চরাঞ্চলে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন পরিকল্পনার জন্য সেটিও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে এতে নতুন লবণ চাষের জমি নিয়ে বিপাকে রয়েছে বিসিক          

সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুযায়ী, দেশে ৬০ হাজার একর জমিতে লবণ উৎপাদন হয় এর মধ্যে কক্সবাজারের সাতটি চট্টগ্রামের একটি উপজেলায় উৎপাদিত লবণ দেশের মোট চাহিদা মেটায় কক্সবাজারে আটটি উপজেলার মধ্যে উখিয়া ছাড়া সাতটি উপজেলায় লবণ চাষ হয় এছাড়া চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে সীমিত পরিসরে লবণ চাষ হয় কক্সবাজার চট্টগ্রামসহ ৬০ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ হলেও শুধু মহেশখালীতে চাষ হয় ২০ হাজার একর জমিতে, যা মোট জমির ৮৮ শতাংশ চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে চাষ হয় সাড়ে সাত হাজার একর জমিতে কিন্তু মহেশখালীতে গভীর সমুদ্রবন্দরের কাজ, বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ একাধিক ভারী শিল্প-কারখানা স্থাপনের কাজ চলমান থাকায় লবণ চাষের জমির পরিমাণ কমে আসছে কয়েক বছরের মধ্যে উপজেলায় লবণ চাষের জমি কমেছে তিন হাজার একর এসব কারণে দেশে চাহিদা অনুযায়ী লবণ উৎপাদন ধরে রাখতে বিকল্প জমি খুঁজছে বিসিক

লক্ষ্যে ২০১৯ সালের শুরুতে চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে পরিবেশবান্ধব লবণ শিল্পপার্ক স্থাপনে ২৫ হাজার একর জমি চেয়ে চিঠি দেয় বিসিক এর পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে চিঠিও দেয় বিসিক কর্তৃপক্ষ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বিসিকের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা সরেজমিন সন্দ্বীপ শিল্পপার্কের জমির বিষয়ে তদারকিও করেন তবে অপ্রতুল জমি জেগে ওঠা চর বেজাকে দেয়ার পরিকল্পনা থাকায় সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ও 

বিসিক সূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রায় শতভাগ লবণই উৎপাদন হয় কক্সবাজারে কিন্তু রোহিঙ্গা সমস্যার পাশাপাশি মহেশখালী, চকরিয়াসহ অঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলায় নানামুখী শিল্পায়ন হচ্ছে এসক কারণে আগে প্রতি বছর গড়ে ২০ হাজার জমিতে লবণ চাষ হলেও সর্বশেষ গত বছর লবণ উৎপাদন হয়েছে ১৭ হাজার একর জমিতে

জানতে চাইলে সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিদর্শী সম্বৌধি চাকমা বণিক বার্তাকে বলেন, সন্দ্বীপে লবণ শিল্পপার্ক স্থাপনে আমাদেরকে চিঠি দেয়া হয়েছে তবে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের পরিকল্পনা ছাড়াও লবণ শিল্পের জন্য জমি দেয়া সম্ভব নয় আমরা এরই মধ্যে বিষয়টি জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে জানিয়েছি

বিষয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, উপকূলীয় এলাকার চরাঞ্চলের জমি অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য দেয়া হবে সন্দ্বীপের জাহাজ্জার চরের প্রায় হাজার ২০০ একর জমি এরই মধ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য বরাদ্দ দিতে প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে উপকূলীয় এলাকা হলেও সন্দ্বীপের বর্তমান ভূমি কাঠামো লবণ চাষের উপযোগীও নয় বলে আমরা মনে করছি ফলে বিসিকের প্রস্তাব অনুযায়ী লবণ শিল্পপার্কের জন্য জমি বরাদ্দ দেয়া সম্ভব না- হতে পারে

বিসিকের তথ্যানুসারে, দেশে লবণের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১৮ লাখ টন গত মৌসুমে উপকূলীয় এলাকায় লবণ উৎপাদন হয়েছে ১৮ লাখ ২৪ হাজার টন চলতি মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ লাখ ৫০ হাজার টন সর্বশেষ গত নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে লাখ ৬০ হাজার টন আগামী ১৫ মে পর্যন্ত লবণ উৎপাদনের মৌসুম রয়েছে মাতারবাড়ী ইউনিয়ন থেকে তিন হাজার একর জমি কমে যাওয়ায় চলতি মৌসুমেও চাহিদার বাড়তি লবণ উৎপাদন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে বিসিক 

সার্বিক বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে বিসিকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক আহমেদ জামাল নাসের চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, বিসিক এখন পর্যন্ত চাহিদা অনুপাতে উদ্বৃত্ত লবণ উৎপাদন করছে কিন্তু ক্রমান্বয়ে লবণ চাষের জমি কমে এলে চাহিদার চেয়েও উৎপাদন কমে যাবে এসব কারণে বিসিক ভবিষ্যৎ চিন্তা করেই বিকল্প খুঁজছে সন্দ্বীপে লবণ চাষের ইতিহাস রয়েছে সন্দ্বীপের চরাঞ্চল থেকে লবণ চাষের জমিও চাওয়া হয়েছে নিশ্চয়তা পাওয়া গেলে লবণ শিল্পপার্ক তৈরির মাধ্যমে দেশের চাহিদা মেটাতে উৎপাদন বাড়াতে কাজ করবে বিসিক

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন