সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ইদলিব প্রদেশে সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর হামলায় কমপক্ষে ৩৩ জন তুর্কি সেনা নিহত হয়েছে।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদবিরোধী বিদ্রোহীদের সঙ্গে জোটবদ্ধ তুর্কি বাহিনীকে লক্ষ্য করে পরিচালিত বিমান হামলায় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
খবর বিবিসি।
এদিকে তুরস্ক বলছে, সিরিয়া সরকারের প্রায় ২০০টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে ফিরে এসেছে তুর্কি বাহিনী।
সিরিয়ার মিত্র রাশিয়া বলছে, জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে যৌথ তত্পরতার সময় সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর আক্রমণের মুখে পড়ে তুর্কি সৈন্যরা।
তবে এ অভিযানে রাশিয়ার অংশগ্রহণের বিষয়কে নাকচ করে দেয়া হয় দেশটির পক্ষ থেকে।
দশকব্যাপী চলতে থাকা সংঘাতের এ পর্যায়ে ইদলিব প্রদেশটি এখন তুর্কি সমর্থিত আসাদবিরোধী বিদ্রোহীদের দখলে রয়েছে।
উল্টো দিকে রাশিয়া সমর্থিত সিরিয়ার সরকারি বাহিনী বিদ্রোহী অধ্যুষিত এ অঞ্চলকে মুক্ত করতে চাইছে।
প্রদেশটির দখল নিয়ে কিছুদিন দুই পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে লড়াই চলছে।
বিদ্রোহীরা কিছুদিন আগে এ প্রদেশের সারাকেব শহরের দখল নেয়।
এরপর সিরিয়ার সৈন্যরা পুনর্দখল নিতে গতকালের এ হামলা চালাল।
সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুর্কি প্রদেশ হাতায়ের গভর্নর রাহমি দোগান গতকাল জানিয়েছেন, বাশার আল আসাদ সমর্থিত বাহিনীর বিমান হামলায় ৩৩ জন তুর্কি সৈন্য নিহত হয়েছে।
আহতদের এরই মধ্যে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে, তবে কারো অবস্থাই গুরুতর নয়।
হামলার ঘটনার পর পরই রাজধানী আঙ্কারায় জরুরিভাবে উচ্চপর্যায়ের নিরাপত্তা বৈঠক করেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান।
বৈঠকের পর পরই সিরিয়ার অভ্যন্তরে স্থল ও আকাশপথে হামলা চালায় দেশটি।
তুর্কি প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকবার জানান, এ অভিযানে হতাহতের পাশাপাশি সিরিয়া সরকারের কয়েকটি হেলিকপ্টার, ২৩টি ট্যাংক, ২৩টি আর্টিলারি কামান ও দুটি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, তুর্কি সৈন্যরা ইদলিব প্রদেশের বেহুন অঞ্চলে নুসরা ফ্রন্ট জঙ্গিদের সঙ্গে যৌথভাবে সিরিয়ার সৈন্যদের ওপর হামলা চালায়।
এরপর সিরিয়ার সরকারি বাহিনী কর্তৃক বিমান থেকে নিক্ষেপ করা গোলার আঘাতে তুর্কি সৈন্যরা হতাহত হয়।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়, বেহুন এলাকায় যাতে তুর্কি সৈন্যরা লক্ষ্যবস্তু না হয়, তা নিশ্চিত করতে তুরস্কের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে।
কিন্তু সেখানে তুর্কি সৈন্যদের তত্পরতা সম্পর্কে আগে থেকে কোনো তথ্য ছিল না।
তুর্কি প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকবার রাশিয়ার দাবিকে অস্বীকার করেছেন।
তিনি দাবি করেন, বেহুন অঞ্চলে তুর্কি সৈন্যদের অবস্থান সম্পর্কে অবহিত ছিল রাশিয়া।
নিহত সৈন্যদের আশপাশে কোনো সশস্ত্র সৈন্যের অবস্থান ছিল না বলেই হামলার তাত্ক্ষণিক জবাব দেয়া সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।
এছাড়া সিরিয়া বাহিনীর হামলায় অ্যাম্বুলেন্স পর্যন্ত রেহাই পায়নি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
যুদ্ধের এ অবস্থায় তুরস্ক চায় যেসব এলাকায় দেশটি সামরিক পর্যবেক্ষণ ক্যাম্প স্থাপন করেছে, ওই এলাকা থেকে সিরিয়া তার সরকারি বাহিনী প্রত্যাহার করুক।
এর
আগে ওই এলাকাগুলোয় সিরিয়া বাহিনীর অগ্রযাত্রা রুখতে দেশটি সিরিয়াকে হুমকিও দিয়েছিল।
কিন্তু সিরিয়া ও রাশিয়ার পক্ষ থেকে ২০১৮ সালের যুদ্ধবিরতি রেখা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
কারণ রাশিয়া অভিযোগ করছে, আর্টিলারি ফায়ারের মাধ্যমে তুর্কি সমর্থিত বিদ্রোহীরাই যুদ্ধবিরতি রেখা লঙ্ঘন করেছিল।