কভিড-১৯: এপ্রিলে নিয়ন্ত্রণে আসবে, বলছেন চীনা বিশেষজ্ঞ

বণিক বার্তা অনলাইন

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮৫৮ জনে। এছাড়া আক্রান্ত হয়েছেন ৮৩ হাজার ২৬৯ জন। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস এপ্রিলের শেষের দিকে নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে বলে জানিয়েছেন চীনের বিশেষজ্ঞরা।

চীনের শীর্ষস্থানীয় সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ঝং নানশান বলেছেন, আমরা নিশ্চিত যে এপ্রিলের শেষের দিকে মূলত এই মহামারি নিয়ন্ত্রণে আসবে। তিনি বলেন, ভাইরাস বিস্তারের কেন্দ্র উহানকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়াসহ চীনের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার কারণেই বিস্তার ততোটা ভয়াবহ রূপ নিতে পারেনি। 

এর আগে তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি বা শেষ নাগাদ ভাইরাস সংক্রমণ সর্বোচ্চে পৌঁছাবে। ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আক্রান্তের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে বলে গতকাল বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গঠিত বিশেষজ্ঞ টাস্ক ফোর্সের প্রধান ঝং। তিনি বলেন, আমরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই বলছি, এপ্রিলের শেষ নাগাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। 

ডাক্তার ঝং চীনের ন্যাশনাল ক্লিনিক্যাল রিসার্চ সেন্টার ফল রেসপিরেটরি ডিজিসের পরিচালকও। তিনি বলেন, সংক্রমণের সংখ্যা আরো কমানো যেত যদি কর্তৃপক্ষ শুরুর দিকে ব্যবস্থা নিতে পারতো। একই সঙ্গে চীনের সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনকে (সিডিসি) আরো ক্ষমতা দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। তার নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থার এ শাখাটি যে কোনো বিষয়ে প্রথমে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে। এই স্থানীয় কর্তৃপক্ষই পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে সে সিদ্ধান্ত নেয়।

চীনা বিজ্ঞানীরা নতুন ধরনের রোগজীবাণু প্রথম শনাক্ত করেন ৩১ ডিসেম্বর। আর ভাইরাসের নতুন প্রজাতিটি আলাদা করতে সক্ষম হন ৩ জানুয়ারি। স্থানীয় ও জাতীয় সিডিসিকে বিষয়টি জানানো হয় ৭ জানুয়ারি। ডা. ঝং বলেন, আমাদের সিডিসির কাজের আওতা খুব ছোট। এটা একটা কারিগরি বিভাগ। এ সংস্থার কাজকর্ম সেভাবে গুরুত্ব পায় না। বিভিন্ন দেশে সিডিসি সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কাজ করে। এমনকি তারা কোনো বিষয়ে ঘোষণা দেয়ার প্রয়োজন মনে করলে সেটি সরাসরিই দেয়। 

অভিযোগ রয়েছে, সিডিসি বিষয়টি সময়মতো জানালেও স্থানীয় প্রশাসন প্রথমে তা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তারা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রিপোর্ট করে। কর্মকর্তাদের এই অবহেলার বিষয়টি পরে কেন্দ্রীয় সরকারের বৈঠকেও উঠে আসে। বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে শাস্তিস্বরূপ দায়িত্ব থেকে সরিয়েও নেয়া হয়।

এদিকে প্রাণঘাতী এই করোনাভাইরাসে শুধু চীনের মূল ভূখণ্ডেই আক্রান্ত হয়েছে ৭৮ হাজার ৮২৪ জন, মারা গেছে ২ হাজার ৭৮৮ জন। দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ২২ এবং মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। জাপানি প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেসে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৭০৫ এবং মৃত্যু হয়েছে চারজনের।

ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে আছে ইতালি। মাত্র এক দিনের ব্যবধানে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৫০ জনে এবং মারা গেছেন ১৭ জন।। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে ইরানে আগ্রাসন সবচেয়ে বেশি। এখন পর্যন্ত ২৪৫ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ২৬ জন।

জাপানের বিভিন্ন স্থানে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১৮৬ এবং মারা গেছে ৪ জন। সিঙ্গাপুরে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৬। হংকংয়ে ৯৩ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে দুই জনের, যুক্তরাষ্ট্রে ৬০ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। কুয়েতে ৪৩ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং থাইল্যান্ডে আক্রান্তের সংখ্যা ৪০।

এদিকে নিউজিল্যান্ডে প্রথম কভিড- ১৯ এ আক্রান্তের খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।

অপরদিকে ফ্রান্সে ৩৮ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে দুই জনের। এছাড়া বাহরাইনে আক্রান্ত ৩৩, তাইওয়ানে আক্রান্ত  ৩২ এবং মৃত্যু ১ এবং অস্ট্রেলিয়ায় ২৩, মালয়েশিয়ায় ২২, জার্মানিতে ২১, ভিয়েতনামে ১৬, যুক্তরাজ্যে ১৫, আরব আমিরাতে ১৩, কানাডায় ১২, স্পেনে ১২, ম্যাকাউতে ১০, ইরাকে ৬, সুইজারল্যান্ডে ৪ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।

ফিলিপাইনে ৩ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে একজন। ক্রোয়েশিয়া, গ্রিস, ভারত ও ইসরায়েলে ৩ জন করে আক্রান্ত হয়েছেন। অস্ট্রিয়ায়, ফিনল্যান্ড, ওমান, পাকিস্তানে, রাশিয়ায় ও সুইডেনে ২ জন করে এই ভাইরাসে আক্রান্ত। একজন করে আক্রান্ত হয়েছেন আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, বেলজিয়াম , ব্রাজিল, কম্বোডিয়া, ডেনমার্ক, মিসর, এস্তোনিয়া, জর্জিয়া, লেবানন, নেপাল, নেদারল্যান্ডস, উত্তর মেসিডোনিয়ায়, নাইজেরিয়া, নরওয়ে, রোমানিয়া এবং শ্রীলঙ্কায়।

গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথমবারের মতো ধরা পড়ে করোনাভাইরাস। এখন পর্যন্ত এটি বিশ্বের অন্তত ৫৮টির বেশি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। 

সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, স্ট্রেইট টাইমস

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন