গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ল ৫.৩%

নিজস্ব প্রতিবেদক

গ্রাহক পর্যায়ে খুচরা পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে সরকার। খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে দাম দশমিক শতাংশ বাড়ানোয় প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনতে হবে গড়ে টাকা ১৩ পয়সায়। বিদ্যমান হারে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দাম পড়ছে গড়ে টাকা ৭৭ পয়সা। এদিকে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে দশমিক শতাংশ। আগামী মার্চ থেকে বর্ধিত মূল্য কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)

কমিশনের আদেশে বলা হয়, আবাসিকের লাইফ লাইন গ্রাহকদের বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে টাকা ৭৫ পয়সা (শূন্য থেকে ৫০ ইউনিট), সাধারণ গ্রাহকদের ক্ষেত্রে টাকা ৭৫ পয়সা (শূন্য থেকে ৭৫ ইউনিট), এরপর সাধারণ গ্রাহকদের প্রথম ধাপে টাকা ১৯ পয়সা, দ্বিতীয় ধাপে টাকা ৭২ পয়সা (৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট), তৃতীয় ধাপে টাকা (২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট), চতুর্থ ধাপে টাকা ৩৪ পয়সা (৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিট), পঞ্চম ধাপে টাকা ৯৪ পয়সা (৪০১ থেকে ৬০০) ষষ্ঠ ধাপে ১১ টাকা ৪৬ পয়সা (৬০০ ইউনিটের ঊর্ধ্বে)

সেচ বা কৃষিকাজে ব্যবহূত প্রতি ইউনিট টাকা ১৬ পয়সা। ক্ষুদ্র শিল্পের ক্ষেত্রে ইউনিটপ্রতি  বিদ্যুতের দাম গড়ে টাকা ৫৩ পয়সা। নির্মাণ খাতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ১২ টাকা। শিক্ষা, ধর্মীয় দাতব্য প্রতিষ্ঠান হাসপাতালের ক্ষেত্রে টাকা পয়সা। রাস্তার বাতি পানির পাম্পের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম টাকা ৭০ পয়সা। ব্যাটারি চার্জিং স্টেশনের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট গড়ে টাকা ৬৪ পয়সা। বাণিজ্যিক অফিসের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট ঘণ্টায় গড়ে ১০ টাকা ৩০ পয়সা। এছাড়া অস্থায়ী ভিত্তিতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে প্রতি ইউনিট ১৬ টাকা।

বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রভাব মূল্যায়নে কমিশন জানিয়েছে, লাইফ লাইন গ্রাহকের (আবাসিক) ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিল বাবদ ব্যয় বাড়বে মাসে থেকে ১৭ দশমিক ৫০ টাকা।

নতুন মূল্যহার অনুযায়ী, নিম্ন মধ্যবিত্ত গ্রাহকের (আবাসিক) গড়ে মাসে বিল বৃদ্ধি পাবে ৪৪ টাকা (প্রায় দশমিক শতাংশ), মধ্যবিত্ত গ্রাহক (আবাসিক) বিল বৃদ্ধি পাবে গড়ে ১১৪ টাকা (প্রায় দশমিক শতাংশ), সেচ গ্রাহকদের বাড়বে ১৮৮ টাকা ( দশমিক শতাংশ), ক্ষুদ্র শিল্প গ্রাহক ৮১০ টাকা ( দশমিক শতাংশ), মাঝারি শিল্প গ্রাহকের ১৭ হাজার ৩৪০ টাকা (প্রায় দশমিক শতাংশ), বৃহৎ শিল্প গ্রাহকের জন্য লাখ ৭০ হাজার টাকা (প্রায় দশমিক শতাংশ)

গতকাল বিইআরসির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল। নতুন মূল্যহার অনুযায়ী, পাইকারি বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি দশমিক শতাংশ বাড়িয়ে টাকা ১৭ পয়সা করা হয়েছে, যা আগে ছিল টাকা ৭৭ পয়সা। এছাড়া বিদ্যুতের সঞ্চালন মূল্য বা হুইলিং চার্জ ভারিত গড় শূন্য দশমিক ২৭৮৭ টাকা থেকে দশমিক শতাংশ বাড়িয়ে শূন্য দশমিক ২৯৩৪ টাকা করা হয়েছে।

বিদ্যুতের এমন দাম বৃদ্ধির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমদানীকৃত কয়লার ওপর শতাংশ হারে ভ্যাট ধার্য, ক্যাপাসিটি চার্জের পরিমাণ বৃদ্ধি, অপচয় ব্যয় বৃদ্ধি, তুলনামূলক কম মূল্যে পল্লী বিদ্যুতের অধীনে সমিতিগুলোর অধিক পরিমাণ বিদ্যুৎ ক্রয় বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে দাম বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া ঋণের অর্থে যেসব বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হয়েছিল, সেগুলোর সুদ পরিশোধ প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের ওপর ১০ পয়সা হারে ডিমান্ড চার্জও বিদ্যুতের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ।

গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ার প্রভাব সম্পর্কে বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়, তার ৫৮ শতাংশের বেশি বিদ্যুৎ ক্রয় করেন পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকরা। তাদের জন্য আমরা টাকা ৭৫ পয়সা প্রতি ইউনিটের মূল্য নির্ধারণ করেছি।

বিদ্যুৎ না কিনেও কেন্দ্রগুলোকে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়ার প্রভাবে দাম বেড়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে কমিশন সদস্য বজলুর রহমান বলেন, চুক্তি অনুযায়ী যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ রয়েছে, সেগুলো মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত থাকবে। আর মেয়াদ শেষ হওয়া কেন্দ্রগুলোর যাতে আর মেয়াদ বৃদ্ধি করা না হয়, সেজন্য কমিশনের আদেশে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কমিশন সদস্য মকবুল--ইলাহী চৌধুরী, রহমান মুরশেদ, মোহাম্মদ আবু ফারুক মোহাম্মদ বজলুর রহমান।

প্রসঙ্গত, বিদ্যুতের মূল্যহার পরিবর্তনে বিতরণ সঞ্চালন কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবের ওপর গত বছরের ২৮ নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গণশুনানির আয়োজন করে বিইআরসি। ৯০ দিনের মধ্যে কমিশনের সিদ্ধান্ত জানানোর বিধান রয়েছে।

সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানো হয়। সে সময় ইউনিটপ্রতি ৩৫ পয়সা বা দশমিক শতাংশ হারে মূল্য বাড়ানো হয়, যা একই বছরের ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়। তবে ওই সময় পাইকারি বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানো হয়নি। সর্বশেষ ২০১৫ সালে পাইকারি বিদ্যুতের মূল্য ১৮ দশমিক ১২ শতাংশ বাড়ানো হয়।

বিদ্যুতের দাম বাড়ানোয় শিল্প খাতগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) একই ধরনের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন পোশাক শিল্প মালিক সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিটিএমএ বলেছে, বিভিন্ন গ্রাহক শ্রেণীর খুচরা বিদ্যুতের মূল্যহার প্রতি কিলোওয়াট দশমিক ৭৭ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে দশমিক ১৩ টাকায় নির্ধারণসহ অন্যান্য চার্জ বৃদ্ধি টেক্সটাইল খাতের বিদ্যমান অবস্থানকে বিশেষ করে ক্ষুদ্র মাঝারিমানের উইভিং মিল এবং বৃহদাকার স্পিনিং মিল যারা গ্রিড পাওয়ার ব্যবহারের মাধ্যমে মিল পরিচালনা করছে, তাদের বিপর্যস্ত করবে। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিটিএমএ কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি কর্তৃক তাদের উৎপাদিত বিদ্যুতের মান নিয়ে যে প্রশ্ন তার সমাধানের জন্য যেসব বিষয় উত্থাপন করা হয়েছে, তা বিবেচনায় নেয়া হয়নি।

বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, নানামুখী ব্যয়ভারে শিল্প এমনিতেই বিপর্যস্ত। পাশাপাশি আছে করোনার মতো বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট। রকম অবস্থায় বিদ্যুতের দাম বাড়ায় প্রতিযোগিতা সক্ষমতা নিয়ে মারাত্মক সংকটের মধ্যে পড়বে রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো। আর স্থানীয় বাজারনির্ভর শিল্পগুলো রুগ্ণ হয়ে যাবে।

এদিকে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির মতো ব্যয়ভারগুলো বহন করা এখন শিল্পের জন্য কষ্টকর বলে মন্তব্য জানিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি . রুবানা হক। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, গত চার বছরে আমাদের ব্যয় বেড়েছে ২৯ দশমিক ৪০ শতাংশ। যেহেতু নিয়মিতভাবে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, কাজেই কোনো ধরনের ব্যয় বৃদ্ধির ভার বহন করার অবস্থা নেই। সিদ্ধান্তটি শিল্প সহায়ক নয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন