সৌদিতে ওমরাহ ও ট্যুরিস্ট ভিসা স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কায় ওমরাহ পালন ভিজিট ভিসা সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে সৌদি সরকার। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ যাত্রীদের নিচ্ছে না কোনো ফ্লাইট। গতকাল ঢাকা, সিলেট চট্টগ্রাম থেকে কোনো ফ্লাইট ওমরাহ সৌদি ভিজিট ভিসা যাত্রীদের নেয়নি। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে। পরিস্থিতিতে অনিশ্চয়তায় পড়েছে প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশী ওমরাহ যাত্রী। তবে শ্রমিক ভিসায় সৌদি আরবগামী বাংলাদেশীরা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকছেন।

গতকাল এক বিবৃতিতে সৌদির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, স্থগিতাদেশ সাময়িক। তবে কবে নাগাদ স্থগিতাদেশ তুলে নেয়া হবে, তা নির্ধারণ করা হয়নি। আগামী জুলাইয়ের শেষ দিকে হজের সময়সূচি নির্ধারিত রয়েছে। স্থগিতাদেশের সিদ্ধান্ত হজের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে কিনা, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়।

উল্লেখ্য, মদিনায় মসজিদে নববিতে প্রবেশাধিকারও স্থগিত করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সৌদি আরবে করোনাভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হননি। তবে মধ্যপ্রাচ্যের কোনো কোনো দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। সতর্কতা হিসেবে সৌদি আরব পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছে।

সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ প্রসঙ্গে বলেন, সৌদি সরকার নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা আমাদের মানতে হবে। কবে ওমরাহ যাত্রীরা পুনরায় সৌদিতে ঢোকার সুযোগ পাবেন, সেটা দেশটির সরকারের ওপর নির্ভর করছে।

এদিকে সৌদি সরকারের এমন সিদ্ধান্তের ফলে সৌদি আরবে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কারণে ভিসা হওয়ার পরও বাংলাদেশের প্রায় ১০ হাজার যাত্রীর ওমরাহ পালন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। গতকাল সকাল থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এমিরেটস এয়ারলাইনসের ইকে-৫৮৩, কাতার এয়ারওয়েজের কিউআর-৬৪১, এয়ার অ্যারাবিয়ার জি৯-৫১৮, সৌদি এয়ারলাইনসের এসভি-৮০৯ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিজি-০৪৯ ফ্লাইটে তিন শতাধিক ওমরাহ যাত্রীর জেদ্দা মদিনা যাওয়ার কথা ছিল। তবে সৌদি সরকারের হঠাৎ সিদ্ধান্তে তারা শাহজালালে এসে ভোগান্তিতে পড়েন। গতকাল যে ফ্লাইটগুলো সৌদি আরব গেছে, সেগুলো ওমরাহ যাত্রীদের নেয়নি। সৌদি সরকারের পরবর্তী নির্দেশনা ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশের যাত্রীদের মতো বাংলাদেশের ওমরাহ যাত্রীরাও দেশটিতে প্রবেশ করতে পারবেন না।

প্রসঙ্গে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘আজ (গতকাল) সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি নোটিস জারি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, পৃথিবীর সব দেশের ওমরাহ ভিসা ইস্যু স্থগিত করা হয়েছে। পাশাপাশি ভিজিট ভিসাও। ওমরাহ যাত্রীদের সৌদি আরবে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার কথাও বলা হয়েছে।

তিনি জানান, এখন প্রায় ১০ হাজার ওমরাহ ভিসা করা আছে। ১০ হাজার ভিসার বিপরীতের প্রায় পাঁচ হাজার টিকিট কাটা হয়েছে। এর মধ্যে দুই হাজার টিকিট লো-কস্ট এয়ারলাইনসের, যেগুলো নন-রিফান্ডেবল। সেখানে কোটি টাকার মতো টিকিট কাটা আছে। ভিসার জন্য সৌদি সরকারকে আইবিএনের মাধ্যমে এরই মধ্যে ২০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। সাধারণ ক্যারিয়ারে যে তিন হাজার টিকিট কাটা আছে, সেগুলোর জন্যও আর্থিক ক্ষতি হবে। আর সেখানে যে হোটেল ভাড়া করা আছে, এজন্য মূল্য আগেই পরিশোধ করতে হয়। ভিসা ফি হোটেল ভাড়া আর ফেরত পাওয়া যাবে না। সব মিলিয়ে ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকা এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে, যা আর ফেরত পাওয়া যাবে না। ক্ষতি হবে এজেন্সি ওমরাহ যাত্রীদের।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-ইমিগ্রেশনজানান, বিভিন্ন এয়ারলাইনস থেকে আমাদের ওমরাহ ভিসাপ্রাপ্ত যাত্রীদের ইমিগ্রেশন না করানোর মৌখিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে শ্রমিকরা সেসব দেশে যেতে পারছেন। আপাতত শ্রমিকদের ভয় পাওয়া বা বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। শ্রমিকদের জন্য ইমিগ্রেশন কোনো বাধা নেই।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন