‘সেলফোন দিয়ে ছবি নির্মাণেও পরিমিতিবোধ জরুরি’

আজ থেকে শুরু হচ্ছে দুই দিনব্যাপী ষষ্ঠ ঢাকা আন্তর্জাতিক মোবাইল চলচ্চিত্র উৎসব। ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ বা ইউল্যাব ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে উৎসবটি অনুষ্ঠিত হবে। উৎসবটির অন্যতম জুরি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন মাটির প্রজার দেশেখ্যাত প্রযোজক নির্মাতা আরিফুর রহমান। টকিজের মুখোমুখি হয়ে মোবাইল চলচ্চিত্র উৎসব নিয়ে নিজের মূল্যায়ন অবস্থান তুলে ধরেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রুবেল পারভেজ

ঢাকা আন্তর্জাতিক মোবাইল চলচ্চিত্র উৎসবে বছরের আয়োজনে জুরি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। কেন আয়োজনে যোগ দিতে উৎসাহী হলেন?

চলচ্চিত্র নির্মাণে আমার আগ্রহ অনেক দিনের। প্রচেষ্টার শুরুই হয়েছিল একটি সেলফোন দিয়ে। আমার মা আমাকে সেলফোনটি কিনে দিয়েছিলেন। আমি যেখানে পড়াশোনা করেছি সেখানে অর্থাৎ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃতির দৃশ্য ধারণ শুরু করেছিলাম। আমার তখনই মনে হতো, সেলফোন দিয়েও স্বপ্ন বাস্তবায়নের চর্চা করা যায়। যে কারণে মনে হয়েছে রকম একটি উৎসবে অংশগ্রহণ করাটা ভালোই হবে। এতে করে নিজের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের পাশাপাশি এখানে অংশগ্রহণকারী তরুণদের কাছ থেকেও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারব।

কয়েক বছর ধরে উৎসবটি নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। আয়োজন নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ জানতে চাই?

সত্যি বলতে কি, এর আগে উৎসব নিয়ে বিস্তারিত তেমন কিছু জানার সুযোগ হয়নি আমার। এমনকি পৃথিবীর অন্যান্য দেশে অনুষ্ঠিত সেলফোন ফেস্টিভ্যালগুলোতেও আমার যাওয়া হয়নি। উৎসবের মাধ্যমে এবারই প্রথম যাওয়া হবে আমার। এর ফলে আমার কৌতূহল বেশি বেড়ে গিয়েছে। মনে হচ্ছে এখানে যোগ দেয়াটা হবে আমার জন্য বিশেষ অভিজ্ঞতার।

অত্যন্ত দামি যন্ত্রপাতি ছাড়া চলচ্চিত্র নির্মাণ সম্ভব নয়এমন ধারণার বিপরীতে অল্প খরচে সেলফোনের মাধ্যমে চলচ্চিত্র নির্মাণের সম্ভাবনা কতটুকু বাস্তব করা সম্ভব?

ভালো ব্যাপারটি হলো যেহেতু রকম উৎসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আগ্রহে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, একটি ফিল্ম ক্লাব এটিকে সংগঠিত করছে। শিক্ষার্থীরা আসলে নিরীক্ষাধর্মী কাজ করতে আগ্রহী থাকে, তাদের হাতে যা থাকে, তাই নিয়ে তারা তাদের চিন্তাগুলোকে বাস্তব করে তোলার সৎ সাহস রাখে। এজন্য উৎসবটিও গুরুত্বপূর্ণ। এটা যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসরের বাইরে অন্য কেউ আয়োজন করত তাহলে হয়তো এতে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে এত উৎসাহবোধ করতাম না। কারণ রকম আয়োজনে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের রকম প্লাটফর্মগুলো হয় একেবারেই স্বাধীন, অবাণিজ্যিক মৌলিক চিন্তা প্রকাশের জায়গা। আমার মনে হয়েছে, ইউল্যাবের উৎসবটি বিষয়গুলোই ধারণ করে।

ফরাসি নির্মাতা জাঁ ককতো বলেছিলেন, এমন একদিন আসবে যেদিন ক্যামেরা হবে কলমের মতো আর ফিল্ম হবে কাগজের মতো। সেই স্বপ্ন কতদূর এগোচ্ছে বলে মনে করেন?

আমার মনে হয়, কলম কলমের মধ্যে থাকুক, কাগজ কাগজের মধ্যে। এও মনে হয়, আমাদের সবারই কাগজের বই কিনেই পড়া উচিত। বিপরীতে সিনেমা বানানোর আগে সেটা মগজে ধারণ করা উচিত এবং উপযুক্ত মাধ্যমেই তার প্রকাশ করা উচিত। যথেচ্ছ ব্যবহার করলে এটি টুল হয়ে যাবে, খেয়াল রাখতে হবে এমনটি যেন না হয়।

বিচারক হিসেবে কাজ করতে গিয়ে কোন কোন বিষয়ের প্রতি বেশি গুরুত্ব আরোপের চেষ্টা করছেন?

এরই মধ্যে প্রতিযোগিতার জন্য ছবিগুলো দেখে ফেলেছি। ছবিগুলো দেখার ক্ষেত্রে আমার প্রথম বিবেচনার জায়গা ছিল, চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রতিযোগীরা তাদের সেলফোনটাকে কতটা সৃষ্টিশীল উপায়ে ব্যবহার করেছে। সেটা মোটেও এমন নয়, একটি ভালো গল্প তারা বলতে পেরেছে, এর অর্থ হলো কতটা পরিমিত সংযতভাবে মাধ্যমটিকে কাজে লাগিয়েছে। এক্ষেত্রে অনেকের মধ্যেই হয়তো সহজলভ্য হওয়ায় সেলফোন দিয়ে যা ইচ্ছে, যত ইচ্ছে শুট করার প্রবণতা আছে। তাই পরিমিতিবোধের মাত্রা একজন বিচারক হিসেবে আমার কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আসলে সেলফোন দিয়ে ছবি নির্মাণের ক্ষেত্রে পরিমিতিবোধের বিকল্প নেই।

ছবিগুলো দেখে কতটা আশাবাদী আপনি?

আশা হারাইনি। তবে সেলফোন দিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে এবং গল্প বলার বিষয়গুলো নিয়ে আরো বেশি গবেষণা পড়াশোনা জরুরি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন