অ্যাপলের আয় বাড়াবে ফাইভজি সমর্থিত আইফোন

বণিক বার্তা ডেস্ক

বিশ্বব্যাপী পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফাইভজির বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়েছে। ডিভাইস ব্র্যান্ডগুলো এরই মধ্যে একাধিক মডেলের ফাইভজি সমর্থিত স্মার্টফোন উন্মোচন করেছে। তবে পিছিয়ে রয়েছে প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপল। এখন পর্যন্ত আইফোনের কোনো ফাইভজি সংস্করণ বাজারে ছাড়েনি মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি। অ্যাপলের রাজস্বে আইফোনের গুরুত্ব কমার এটাই প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। বিশ্লেষকদের দাবি, ফাইভজি সমর্থিত আইফোন অ্যাপলের প্রবৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করবে।

খবর ইন্দো-এশিয়ান নিউজ সার্ভিস।

গত বুধবার প্রকাশিত মরগান স্ট্যানলির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের শেষ দিকে ফাইভজি সমর্থিত প্রথম আইফোন উন্মোচন করা হতে পারে। বাস্তবে তা হলে, অ্যাপলের আগামী ২০২১ হিসাব বছরের আর্থিক খতিয়ানে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধির কারণ হবে ফাইভজি সমর্থিত আইফোন। অ্যাপল এরই মধ্যে পরিবেশক চ্যানেল পার্টনারদের সঙ্গে কার্যক্রম শুরু করেছে। আইফোন বিক্রি বাড়াতে নানা কৌশলগত পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।

বিশ্লেষকদের দাবি, অ্যাপল প্রতি বছর সেপ্টেম্বরে নতুন আইফোন উন্মোচন করে আসছে। চলতি বছর একযোগে নতুন চার আইফোন উন্মোচন করা হতে পারে। ডিভাইসগুলোর মধ্যে অন্তত একটিতে পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফাইভজি সমর্থন আনা হবে।

অ্যাপলের রাজস্বে আইফোনের গুরুত্ব কমছে। ২০১৮-১৯ হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) প্রথমবার অ্যাপলের মোট রাজস্বের ৪৮ শতাংশ আইফোন বিক্রি থেকে এসেছে। অথচ প্রথম প্রজন্মের আইফোন উন্মোচনের পর থেকে বরাবরই প্রতিষ্ঠানটির রাজস্বের সিংহভাগ আইফোন বিক্রি থেকে এসেছে। গত বছর এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির প্রান্তিকভিত্তিক মোট রাজস্বে আইফোনের গুরুত্ব অর্ধেকের নিচে নেমেছে। একই প্রান্তিকে অ্যাপলের রাজস্বে আইফোনের গুরুত্ব কমলেও সেবা পরিধেয় প্রযুক্তিপণ্যের বাড়তে দেখা গেছে।

গত বছর সেপ্টেম্বরে একযোগে নতুন তিন আইফোন উন্মোচন করেছিল অ্যাপল। এগুলো হলো আইফোন ১১, আইফোন ১১ প্রো আইফোন ১১ ম্যাক্স। বৈশ্বিক বাজারে ডিভাইস তিনটি খুব বেশি সাড়া ফেলতে পারেনি। যে কারণে গত বছরের শেষ প্রান্তিকে আইফোন বিক্রিতে ভাটা পড়ে। নভেল করোনাভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ায় আইফোনের গুরুত্বপূর্ণ বাজার চীনে খারাপ সময় পার করছে অ্যাপল। চলতি প্রান্তিকেও আইফোন বিক্রি থেকে প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব ক্রমান্বয়ে কমার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অ্যাপল এখন নতুন খাতে ব্যবসা জোরদারে গবেষণা উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) বিভাগের পাশাপাশি অধিগ্রহণ একীভূতকরণে জোর দিচ্ছে। গত বছরের শেষ দিকে ১০০ কোটি ডলারে সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানি ইন্টেলের স্মার্টফোন মডেম চিপ বিভাগ অধিগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে অ্যাপল। বিভিন্ন কাজে ব্যয় বাড়ার কারণে প্রতিষ্ঠানটির নগদ অর্থের মজুদও কমেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

টানা কয়েক প্রান্তিক ধরে আইফোনকেন্দ্রিক উদ্ভাবন অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। আইফোনের বিক্রি বাড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন সেবা ব্যবসা বিভাগ নতুন অ্যাপল টিভি প্লাস স্ট্রিমিংয়ে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে অ্যাপল। যে কারণে প্রতিষ্ঠানটির রাজস্বে অ্যাপ স্টোরসহ বিভিন্ন সেবা খাতের গুরুত্ব বাড়ছে।

চীনে নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় আইফোন উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। যে কারণে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে হাজার ৭০০ কোটি ডলার রাজস্ব আয়ের যে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল, তা পূরণ সম্ভব হবে না বলে সতর্ক করেছে মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপল। সাম্প্রতিক বিবৃতিতে জানানো হয়, চীনভিত্তিক ডিভাইস ব্র্যান্ডগুলোর পাশাপাশি করোনাভাইরাসের প্রভাব অ্যাপলের আইফোন ব্যবসা বিভাগের ওপরও পড়ছে। বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে অ্যাপলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে চীনে আইফোনের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় তাদের আগাম পূর্বাভাসের তুলনায় রাজস্ব আয় অনেকাংশে কম হবে। প্রতিষ্ঠানটি স্বীকার করেছে যে তাদের আইফোন উৎপাদন বিক্রি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী আইফোন সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে।

অ্যাপল জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) জন্য আমরা আগে যে রাজস্ব পূর্বাভাস দিয়েছিলাম, তা পূরণ হবে না। অর্থাৎ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আইফোন উৎপাদনে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। অ্যাপল চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে কোটি ১০ লাখ ইউনিট আইফোন উৎপাদনের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল, তা পূরণ সম্ভব হবে না। উৎপাদন বিভ্রাটের কারণে সরবরাহ বিক্রিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। পরিস্থিতি কতদিন স্থায়ী হবে, তা নিশ্চিত নয়। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম আয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন