রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর

স্বাধীনভাবে চলাচলের শর্ত দিয়েছে জাতিসংঘ

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান (জেআরপি) ২০২০-এর খসড়া তৈরি করেছে জাতিসংঘ। জেআরপির খসড়া পরিকল্পনায় সংকট মোকাবেলায় চলতি বছর বিভিন্ন খাতে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর (কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বাসিন্দা) প্রায় ১৩ লাখ মানুষের জন্য ৮৭ কোটি ৭০ লাখ ডলারের চাহিদা প্রাক্কলন করেছে সংস্থাটি। তবে এবার ভাসানচর নিয়ে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে জাতিসংঘ। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের ক্ষেত্রে তাদের স্বাধীনভাবে চলাচলের শর্ত জুড়ে দিয়েছে সংস্থাটি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জাতিসংঘের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে শুরু করে। পরে বাংলাদেশ সরকার কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় তাদের থাকার জন্য জায়গা করে দেয়। আর ২০১৮ সালে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরে ভাসানচর প্রকল্প নেয় সরকার। পরবর্তী সময়ে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য সেখানে অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। ২০১৯ সালে জেআরপি তৈরির আগে বাংলাদেশ সরকার ভাসানচরকে এতে অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ করে। কিন্তু ওই বছর ভাসানচরকে নিয়ে কোনো পরিকল্পনা করেনি জাতিসংঘ। ফলে তা জেআরপি ২০১৯-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তবে ২০২০ সালে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে জাতিসংঘ। এ বছরের জেআরপিতে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে সেখানে তাদের স্বাধীনভাবে চলাচলের শর্ত যোগ করা হয়েছে। তবে ভাসানচরের জন্য আলাদা কোনো বরাদ্দ রাখেনি তারা।

সূত্র জানায়, যে নীতি ও সুরক্ষা ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জীবন নিয়ন্ত্রণ করা হবে তা যাচাই করা জাতিসংঘের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের অধিকার নিশ্চিত করার বিষয় রয়েছে। এছাড়া ভাসানচর থেকে মূল ভূখণ্ডে বিশেষ করে কক্সবাজারে চলাচল, যাতায়াত সেবা ও নৌযানের সহজলভ্যতা এবং রোহিঙ্গাদের নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণকালে তাদের অংশগ্রহণের বিষয়গুলো রয়েছে। তবে বাংলাদেশ সরকার এক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর হবে ঐচ্ছিক (সাময়িক), যা জাতিসংঘ স্বাগত জানিয়েছে।

রোহিঙ্গাদের চলাচলের স্বাধীনতার বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বণিক বার্তাকে বলেন, তারা বাংলাদেশে উদ্বাস্তু। আমরা চাই রোহিঙ্গারা তাদের যাবতীয় স্বাধীনতা রাখাইনে ভোগ করুক।

ভাসানচর নিয়ে জেআরপি ২০২০-তে জানানো হয়, বাংলাদেশের প্রস্তাব অনুযায়ী কিছু রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে পুনর্বাসনের প্রস্তাবে দেশটির সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে জাতিসংঘ। গত ২০১৮ সালের শুরু থেকে বাংলাদেশ ভাসানচর প্রকল্পে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ ও দৃশ্যমান উন্নয়ন করেছে। চলতি বছর ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য সেখানে তাদের নিরাপত্তা ও বাসযোগ্যতা কারিগরি ও সুরক্ষাসংক্রান্ত বিস্তারিত সমীক্ষা চালাতে প্রস্তুত জাতিসংঘ।

জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, সমীক্ষার পর কারিগরি দলের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ঠিক করা হবে ভাসানচর রোহিঙ্গাদের জন্য বসবাসযোগ্য কিনা। তারপর বরাদ্দের বিষয়গুলো আসবে, এর আগে নয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন