এক অলিম্পিয়ানের ‘আত্মগোপন’

মাহবুব সরকার

একটা সময় সাঁতার ছিল ধ্যান-জ্ঞান দীর্ঘদিন বিচরণ ছিল দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে দেশের হয়ে টানা তিনটি অলিম্পিকে অংশ নেয়ার বিরল রেকর্ড যার দখলে; সেই ডলি আক্তার সাঁতার ছেড়ে এখন পুরোদস্তুর ভলিবল খেলোয়াড়

ভলিবল খেললেও সারাক্ষণ নিজেকে অনেকটা গুটিয়ে রাখেন একটা সময় যেভাবে সবার সঙ্গে মিশতেন, এখন সেভাবে মিশতেও দেখা যায় না হৈ-হুল্লোড় আমুদে ভাবটাও উধাও আনসার জাতীয় দলের হয়ে ভলিবল খেললেও নিজেকে যেন আত্মগোপনে রেখেছেন ক্রীড়াবিদ!

বাংলাদেশ আনসারের ক্রীড়াবিদের সাঁতার ছাড়ার সিদ্ধান্তটা রহস্যঘেরা কী কারণে সাঁতার ছাড়লেন? এমন প্রশ্নে মুখে কুলুপ আঁটা তার কথায়, সাঁতার আমার হূদয়ের বিশাল জায়গাজুড়ে ছিল, এখনো আছে আমি এখন ভলিবল নিয়ে ভালো আছি এটাই শেষ কথা তার বাইরে কিছু বলতে চাই না

সাফল্যের রঙে চারপাশটা রাঙানো ডলি আক্তারের উত্থান ১৯৯৭ সালের জাতীয় জুনিয়র সাঁতার প্রতিযোগিতা দিয়ে এক আসরে ১১ পদক জয় করে হইচই ফেলে দেন রাজবাড়ী থেকে উঠে আসা জলকন্যা সুইমিংপুলে দ্যুতি ছড়ানোর পুরস্কার মেলে দ্রুতইওই জুনিয়র আসর খেলেই জাতীয় দলে ডাক পান এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি

২০০০ সালের সিডনি, ২০০৪ সালের এথেন্স ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিকে দেশের হয়ে খেলেছেন তিনি দুটি ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ, এশিয়ান গেমস, কমনওয়েলথ গেমস, এসএ গেমস, ইন্দো-বাংলাদেশও খেলেছেন চারটি এসএ গেমসে খেলা সাঁতারু ঘরোয়া শীর্ষ আসরে দুই শতাধিক স্বর্ণপদক গলায় তুলেছেন

ঠিক আছে সাঁতার ছাড়ার কারণটা বাদ দিন দীর্ঘদিন দেশের শীর্ষ পর্যায়ে আপনার ভালো-মন্দ দুই অভিজ্ঞতাই হয়েছে আগামী দিনের সাঁতারুদের জন্য কেমন পরিবেশ চান? প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন ডলি আক্তার, ক্ষমা করবেন ঘুরিয়ে-প্যাঁচিয়ে যেভাবে যা- বলুন, আমি আসলে এসব নিয়ে বেশি কথা বলতে চাই না ভালো ছিলাম, এখনো ভালো থাকার চেষ্টা করছি

২০১১-১২ সালের দিকে জাতীয় দলের ক্যাম্পে থাকাকালে হুট করেই সাঁতার ছাড়ার কঠিন সিদ্ধান্তটা নেন ডলি আক্তার ওই যে ক্যাম্প ছাড়লেন, তারপর থেকে নিজের পরিচয়টাই বদলে দেন সাঁতার ছেড়ে ভলিবলে আসাটা মোটেও সহজ ছিল না, এখানে কীভাবে মানিয়ে নিলেন? জবাবে ডলি আক্তার বলেন, সাঁতারে থাকার সময়ই আমার ভলিবল ভালো লাগত খেলাটির প্রতি ভালো লাগা ছিল, তার সঙ্গে যোগ হয়েছিল আমার হার না মানা মানসিকতা দুইয়ের যোগফলে ভলিবলে ভালোভাবেই মানিয়ে নিয়েছি

ক্যারিয়ারের মধ্যগগনে এসএ গেমসে স্বর্ণপদক জিতেছেন সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শীলা ২০১৬ সালের এসএ গেমসে জোড়া স্বর্ণপদক গলায় তুলে আত্মতৃপ্তি নিয়েই কস্টিউম চিরতরে তুলে রাখতে পারবেন ডলি আক্তারের একসময়কার সতীর্থ শিলা হুট করে ট্র্যাক বদলে ফেলার সিদ্ধান্ত না নিলে শীলার মতোই রঙিন হতে পারত ডলি আক্তারের জগত্টা

এসব নিয়ে কখনো আফসোস হয়? প্রশ্নে একসময়কার দেশসেরা সাঁতারু বলেছেন, ওসব তো পেছনের বিষয় আমি পেছনে না তাকিয়ে সামনে দৃষ্টি দিতে চাই যোগ করেন, এটা ঠিক, যখন সাঁতার ছেড়ে গেছি তখনো আমার ঝুলিতে দেশকে দেয়ার মতো অনেক কিছুই ছিল সবার দ্বারা তো সবসময় সব কাজ হয় না! ক্রীড়াঙ্গনে আমার মতো এমন ঘটনা হয়তো হাজারো আছে এসব নিয়ে এখন আফসোস করে লাভ কী?

আনসারের স্থায়ী ক্রীড়াবিদ হিসেবে ভলিবল খেললেও সাঁতার ছাড়েননি এখনো জাতীয় প্রতিযোগিতায় নিয়মিতই খেলেন এভাবে যতদিন সম্ভব খেলে যেতে চান কিন্তু একটা সময় তো খেলা ছাড়তে হবে, পরবর্তী সময়ে কী করবেন? উত্তরে ডলি আক্তার বলেন, সবকিছুরই শেষ আছে আমাকেও একটা জায়গায় গিয়ে থামতে হবে খেলা ছাড়লে আনসার আমাকে যেখানে পোস্টিং দেবে, যে দায়িত্ব দেবে তা পালন করব

বিকেএসপি, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনীর মতো সংস্থাগুলোর অনেক ক্রীড়াবিদ চাকরি ছাড়ার পর কোচ টেকনিক্যাল অফিশিয়াল হিসেবে ক্রীড়াঙ্গনেই থেকে গেছেন নিজ সংস্থা চাইলে ডলি আক্তারেরও ইচ্ছা অঙ্গনে থেকে যাওয়ার

একই সঙ্গে সাঁতার ভলিবলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলার অভিজ্ঞতা আছে আমার অভিজ্ঞতা আনসারের ক্রীড়াবিদদের মাঝে ছড়িয়ে দিলে আমার সংস্থাই তার সুফল ভোগ করবে আনসার কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই বিষয়টি নিয়ে ভাববে’—জানান ডলি যোগ করেন, খেলা ছাড়ার পর বিভিন্ন কোচেস কোর্স করার সুযোগ দেয় আমাদের সার্ভিসেস দলগুলো আনসারেও সে সুযোগ রয়েছে এমন সুযোগ পেলে অবশ্যই কাজে লাগাতে চাই

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন