ভারতের রাজধানী দিল্লিতে টানা চারদিনের সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ২৩ জন।
বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়ে রোববার শুরু হওয়া এ সহিংসতা চলেছে গতকালও।
উন্মত্ত জনতার হামলার শিকার হয়েছে মুসলিমদের ঘরবাড়ি ও দোকানপাট।
খবর বিবিসি।
বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ভিডিওতে সহিংসতার কদর্য চিত্র ফুটে উঠেছে।
নিরস্ত্র সাধারণ মানুষকে তো মারা হচ্ছেই, হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না গণমাধ্যমকর্মীরাও।
হামলাকারীরা লাঠি ও লোহার রড হাতে সড়কে উন্মত্তের মতো আচরণ করছে।
পরস্পরের দিকে বৃষ্টির মতো পাথর ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করছে বিরোধীগোষ্ঠীরা।
মূলত উত্তর-পূর্ব দিল্লির মৌজপুর, মুস্তফাবাদ, জাফরাবাদ ও শিব বিহারের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাকে কেন্দ্র করেই এ সহিংসতা আবর্তিত হচ্ছে।
এ অবস্থায় দিল্লি হাইকোর্ট বলছেন, আমরা আরেকটি ‘১৯৮৪’ সাল ঘটতে দিতে পারি না।
১৯৮৪ সালে দিল্লিতেই শিখবিরোধী দাঙ্গায় নিহত হয়েছিল তিন হাজারের বেশি শিখ ধর্মাবলম্বী মানুষ।
এদিকে গতকাল নীরবতা ভেঙে পরিস্থিতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে টুইট করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
টুইটে তিনি সর্বাধিক শান্তি বজায় রাখতে অনুরোধ করেন।
একই সঙ্গে তিনি জানান, পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হচ্ছে, একই সঙ্গে সবকিছু স্বাভাবিক করতে কাজ করছে দেশটির পুলিশ।
এরই মধ্যে সহিংসতা দমনে ব্যর্থ হওয়ায় ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পদত্যাগ দাবি করেছেন বিরোধী দলের নেত্রী সোনিয়া গান্ধী।
সোনিয়া গান্ধী পুরো সহিংসতার জন্য অমিত শাহকে দায়ী করেন।
অন্যদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
পাশাপাশি তিনি সেনাবাহিনী মোতায়েনেরও দাবি জানিয়েছেন।
গতকাল নতুন সহিংসতার তেমন খবর না পাওয়া গেলেও মুস্তফাবাদের মুসলিমদের বাড়িঘর ছেড়ে চলে যেতে দেখা গেছে।
ফের সহিংসতা কিংবা হামলার আশঙ্কায় তারা অন্যত্র চলে যাচ্ছে।
এখন পর্যন্ত যারা মারা গেছে, নাম অনুসারে তাদের মধ্যে হিন্দু ও মুসলিম উভয় ধর্মের মানুষই রয়েছে।
আহত হয়েছে অন্তত ১৮৯ জন, যাদের অনেককে গুরু তেগ বাহাদুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদকরা দেখেছেন, আহতদের শরীরে গুলিসহ প্রায় সব ধরনের আঘাত রয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, আহতদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে তারা হিমশিম খাচ্ছে।
তাছাড়া অনেকেই ভয়ে বাড়ি ফিরতে চাইছে না।
রোববার এ সহিংসতার সূত্রপাত হয় ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতা কপিল মিশ্রর এক হুমকিকে কেন্দ্র করে।
ওইদিন তিনি সিএএ বাতিলের জন্য আন্দোলনরতদের হুমকি দিয়েছিলেন।
জাফরাবাদে এক শোভাযাত্রা করার পাশাপাশি তিনি টুইটারে ওই এলাকায় সবাইকে জড়ো হতে বলেন।
একই সঙ্গে তিনি দিল্লি পুলিশকে তিনদিনের মধ্যে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয়ার জন্য সময় বেঁধে দেন।
আর
তা
না
পারলে ভয়াবহ পরিণতির হুমকি দেন তিনি।
এর
পরই রোববার প্রথম সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়।
বর্তমানে সহিংসতার স্থানগুলোয় বিপুল পরিমাণে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে আধা সামরিক বাহিনী।
উল্লেখ্য, সহিংসতায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন, মারা গেছেন একজন।