নকলের ভিড়ে বেছে নিন আসল রোলেক্স

ফিচার ডেস্ক

ফরমাল লুক তৈরিতে ঘড়ির বিকল্প নেই। সময় দেখার চেয়ে বরং ফ্যাশন, আভিজাত্য ও শখের অনুষঙ্গ হিসেবেই এখন ঘড়ি বেশি ব্যবহার হচ্ছে। কম দামি থেকে বেশি দামিসব ধরনের ঘড়িই রয়েছে। তবে নিজের ব্যবহার বা অন্যকে উপহার দেয়ার জন্য ঘড়িটি ব্র্যান্ডের না হলে কেমন হয়! ঘড়িপ্রেমীদের কাছে ব্র্যান্ড মানেই সবার আগে রোলেক্সের কথা মাথায় আসে। আসবে না-ইবা কেন? বিশ্বের নামিদামি প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি রোলেক্স। ১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত সুইস কোম্পানিটি তার পণ্যের গুণমানের জোরে এখনো বহাল তবিয়তে নিজের অস্তিত্ব ধরে রেখেছে।

কিন্তু আজকাল নকল পণ্যের তালিকায় আসল পণ্য বেছে নেয়া মুশকিল। ঘড়ির ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। এখন রোলেক্স ঘড়ি যেখানে সেখানে বিক্রি করা হচ্ছে। এসব নকল ঘড়ির ভিড়ে আসল রোলেক্স ঘড়ি নির্বাচন করতে বেশকিছু বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন। নকলের মাঝে কীভাবে আসল রোলেক্স ঘড়ি বাছাই করবেন, তা নিয়েই আজকের আয়োজন

ঘড়ি কেনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এর ভেতরের যন্ত্রাংশ সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা তা দেখে নেয়া। কেনার আগে ঘড়িটি কানের কাছে নিয়ে আসতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে টিকটিক শব্দ হচ্ছে কিনা। সবসময় মনে রাখতে হবে রোলেক্স উৎপাদিত ঘড়িগুলো স্বয়ংক্রিয় মুভমেন্টের মাধ্যমে চালিত। টিকটিক শব্দ ঘড়ির ভেতরের মুভমেন্ট যাচাই করতে সাহায্য করে। প্রথম ধাপে এটি যাচাই করার পর আপনি আরো নিশ্চিত হতে দ্বিতীয় ধাপে যেতে পারেন।

দ্বিতীয় ধাপে এসে ঘড়ির পেছন অর্থাৎ ওয়াচ ব্যাক পরীক্ষা করতে হবে। ১৯৩০-এর দশকে নির্মিত রোলেক্স সি ডুয়েলার এবং কিছু ভিনটেজ রোলেক্স ব্যতীত সব আসল রোলেক্স ঘড়ির পেছনটি মসৃণ ধাতবের তৈরি। যদি আপনি দেখেন যে ঘড়ির পেছনের অংশটি পরিষ্কার, স্বচ্ছ তাহলে বুঝে নেবেন এটি নকল রোলেক্স ঘড়ি। আসল রোলেক্স ওয়াচ ব্যাকে কোনো গ্লাস ব্যবহার করে না। আসল রোলেক্সের ঘড়ির পেছনের অংশটিতে অনেক মসৃণ ফিনিশিং দেয়া হয়।


এবার আপনি তৃতীয় ধাপে প্রবেশ করে রেপ্লিকেটর যাচাই করুন। এটা আসল রোলেক্স ঘড়ি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ উপায়। ২০০২ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিটি রোলেক্স মডেলের ঘড়িতে ৬-এর কাঁটায় একটি ছোট মুকুট খোদাই করে দিয়েছে, যা একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের। এ মুকুট এতই ছোট যে এটি দেখার জন্য ম্যাগনিফাইং গ্লাসের প্রয়োজন।

রোলেক্স কখনই নির্ভুলতা ও পূর্ণতার বিপরীতে আপস করেনি। যদি ঘড়ি কেনার পর দেখেন যে এর ভেতরে ঝাঁকুনিপূর্ণ মুভমেন্ট হচ্ছে, তাহলে বুঝবেন এটা আসল রোলেক্স ঘড়ি নয়। এ ধরনের ঘড়ি সাধারণত কোয়ার্টজ বেজড ঘড়িকে নির্দেশ করে। আর রোলেক্স সাধারণত এ ধরনের ঘড়ি তৈরি করে না।

চতুর্থ ধাপে এসে আপনাকে সাইক্লোপস কোয়ালিটি পরীক্ষা করতে হবে। না, খ্যাতিমান গ্রিক পৌরাণিক জন্তুর কথা বলা হচ্ছে না। আপনার কেনা ঘড়িটি রোলেক্সের কিনা, তা যাচাই করার একটি অংশ মূলত এটি। বেশির ভাগ রোলেক্স ঘড়িতে একটি তারিখ প্রদর্শিত হয় এবং ডিসপ্লেতে একটুখানি ছোট ম্যাগনিফাইং গ্লাস ব্যবহার করা হয়। মূলত এ ম্যাগনিফাইং অংশটুকুকে সাইক্লোপস বলা হয়। যখন আপনি আসল রোলেক্সের ঘড়ি কিনবেন, দেখবেন এটি বেশ স্মুথ ও মসৃণ কোয়ালিটির। যদি এর ব্যতিক্রম ঘটে, তবে বুঝে নেবেন এটি নকল রোলেক্স।

এসব দেখেও যদি আসল রোলেক্স ঘড়ি সম্পর্কে বুঝতে কষ্ট হয়, তাহলে পরবর্তী ধাপে আপনাকে যেতে হবে। রোলেক্স উৎপাদিত প্রতিটি সিঙ্গেল ঘড়িতে একটি খাঁটি রোলেক্স সিরিয়াল নাম্বার থাকে। যদি কোনো বিক্রেতা রোলেক্সের এসব সিরিয়াল নাম্বার খোদাই করেও থাকেন, তা আসল রোলেক্স ঘড়ির মতো হবে না। অরিজিনাল রোলাক্সের মৃসণ ধাতব শরীরের ওপর রোলেক্সের সিরিয়ালগুলো খুব নিখুঁত ও নির্ভুলভাবে খোদাই করা হয়েছে। আপনি নকল ঘড়ি কিনেছেন, এটা বুঝতে পারলে সঙ্গে সঙ্গে সে ঘড়ি ফিরিয়ে দিন।

রোলেক্সের মুখে ঘড়িতে লেখা টেক্সট ঘড়ির মান নির্ধারণে সহায়তা করে। নকল রোলেক্সের ঘড়িগুলোয় অমসৃণ ও ভুলভাল টেক্সট লেখা থাকে। ঘড়ি কেনার সময় খুব কাছ থেকে টেক্সটের প্রতিটি অংশ পড়তে হবে। এটি আপনাকে আসল-নকল রোলেক্স ঘড়ি কিনতে সহায়তা করবে।

রোলেক্স টাইমপিস ও ইউনিক সব ঘড়ি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। দামের দিক থেকেও পিছিয়ে নেই রোলেক্স। যদি বিক্রেতা কম দামে আপনার কাছে ঘড়ি বিক্রি করে, সঙ্গে সঙ্গেই বুঝে নেবেন এটা নকল রোলেক্স। অবশ্য দাম দেখে আসল রোলেক্স ঘড়ির মান যাচাই করা একটু কষ্টকর। বুদ্ধিমানের কাজ হলো, কেনার সময় অন্য কোনো কোম্পানির ঘড়ির দামের সঙ্গে তুলনা করা।

ঘড়ির ওজন নির্ণয়ের মাধ্যমেও আসল রোলেক্স ঘড়ি বাছাই করা যায়। এটা সবচেয়ে সহজ উপায়। আসল রোলেক্স ঘড়িগুলো ধাতবের তৈরি, যার কারণে এসব ঘড়ি একটু ভারী। এছাড়া আসল রোলেক্স ভালো কারুকার্যের ও উচ্চমানের ব্রেসলেট এবং এ টাইমপিসের সঙ্গে আরো কিছু ওজন যুক্ত থাকে। নকল রোলেক্স ঘড়িগুলোর ওজন কম হয়।

ঘড়ির অভ্যন্তরীণ যন্ত্রাংশ যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে আসল রোলেক্স ঘড়ি বেছে নিতে পারেন। যদিও ঘড়ি খোলাটা ঝুঁকিপূর্ণ। রোলেক্সের আসল ঘড়িগুলোয় কিছু জটিল যন্ত্রাংশ রয়েছে, যা নকল ঘড়িগুলোয় থাকে না। ঘড়ির পেছনের অংশ অর্থাৎ কেস ব্যাক খুলে আপনি যাচাই করে নিন আসল ঘড়ি। তবে বিশ্বাসযোগ্য ও দক্ষ কাউকে না পেলে খুলতে যাবেন না।

এসব কৌশল প্রয়োগ করার পাশাপাশি নকল রোলেক্স ঘড়ি কেনা এড়িয়ে চলতে আরো কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। যেমন যেকোনো জায়গা থেকে রোলেক্স ঘড়ি কেনা যাবে না, নির্ধারিত রোলেক্স বিক্রেতার কাছ থেকেই কিনতে হবে। অনেক সময় নকল রোলেক্স ঘড়ি বেশি আকর্ষণীয় হয়ে থাকে। ফলে আপনার চোখ ভুল করতেই পারে। এক্ষেত্রে একজন দক্ষ ঘড়ি নির্মাতার সহায়তা নিতে হবে। অচেনা কোনো নিলাম হাউজ থেকে ঘড়ি কেনা যাবে না। এতে আপনি সঠিক রোলেক্স ঘড়ি যাচাই-বাছাই করার সুযোগ পাবেন না।

প্রতিটি কৌশল অবলম্বন করে আপনি আসল রোলেক্স ঘড়ি নির্বাচন করতে পারেন। এতে আপনি নিরাপদ থাকবেন এবং অযথা আপনার টাকা খরচ বেঁচে যাবে।

 

সূত্র: দ্য ওয়াচ কোম্পানি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন