মন্দা ভাবে বছর শুরু শ্রীলংকার চা শিল্পের

কমেছে উৎপাদন ও রফতানি

বণিক বার্তা ডেস্ক

চলতি বছরের শুরুতেই মন্দার মুখে পড়েছে শ্রীলংকার চা শিল্প। আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকায় গত জানুয়ারিতে দেশটির পানীয় পণ্যটির উৎপাদন আগের তুলনায় কমেছে। একই সঙ্গে কমতির দিকে ছিল শ্রীলংকা থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে চা রফতানি। টি এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব শ্রীলংকার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। খবর রয়টার্স ও কলম্বোপেইজ।

চা উৎপাদনকারী দেশগুলোর বৈশ্বিক শীর্ষ তালিকায় শ্রীলংকার অবস্থান বিশ্বে চতুর্থ। দেশটির টি এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশটিতে সব মিলিয়ে ২ কোটি ১৯ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ লাখ ৭০ হাজার কেজি কম। ২০১৯ সালের একই সময়ে দেশটিতে সব মিলিয়ে ২ কোটি ৩২ লাখ কেজির কিছু কম চা উৎপাদন হয়েছিল।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বছরের প্রথম মাসে শ্রীলংকার বাগানগুলোয় প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ কেজি প্রচলিত জাতের চা উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে উচ্চ মানের (হাই গ্রেড) চা উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি দেখা গিয়েছে। তবে কমেছে তুলনামূলক মধ্যম ও নিম্ন মান বা গ্রেডের চায়ের উৎপাদন।

গত জানুয়ারিতে শ্রীলংকায় সিটিসি জাতের চা উৎপাদন হয়েছে ২০ লাখ ৮০ হাজার কেজি। এক বছর আগে দেশটিতে এ জাতের চায়ের উৎপাদন ছিল ১৮ লাখ কেজি। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে শ্রীলংকায় সিটিসি জাতের চায়ের উৎপাদন বেড়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার কেজি। এ সময় দেশটিতে গ্রিন টির সম্মিলিত উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৪০ হাজার কেজিতে।

খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, গত বছরের শেষ দিক থেকে শ্রীলংকার চা উৎপাদনকারী অঞ্চলগুলোয় আবহাওয়া উষ্ণ হতে শুরু করে। তাপমাত্রা অন্যান্য বছরের তুলনায় বেড়ে যায়। দেখা মেলেনি চা চাষের জন্য প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাতের। ফলে দেশটির চা বাগানগুলোকে প্রতিকূল আবহাওয়ার সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে। চলতি বছরও আবহাওয়া পরিস্থিতি অনেকটাই অপরিবর্তিত রয়েছে। কিছু অঞ্চলে বৃষ্টির দেখা মিললেও তা সামান্য। এ কারণে বছরের প্রথম মাসে চা উৎপাদন খাতে বড় ধরনের মন্দার মুখে পড়েছে শ্রীলংকা।

শুধু উৎপাদন খাতেই নয়, বরং শ্রীলংকার চা রফতানি খাতেও গত মাসে মন্দা ভাব বজায় ছিল। টি এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব শ্রীলংকার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশটি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ২ কোটি ২০ লাখ ৯০ হাজার কেজি চা রফতানি হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে শ্রীলংকার রফতানিকারকরা মোট ২ কোটি ৩৬ লাখ ৭০ হাজার কেজি চা রফতানি করেছিলেন। সেই হিসাবে, এক বছরের ব্যবধানে শ্রীলংকা থেকে পানীয় পণ্যটির রফতানি কমেছে ১৫ লাখ ৮০ হাজার কেজি।

শ্রীলংকা বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ চা রফতানিকারক দেশ। পানীয় পণ্যটির বৈশ্বিক রফতানি চাহিদার ১২ দশমিক ১ শতাংশ দেশটি এককভাবে জোগান দেয়। প্রতি বছর দেশটি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রধানত প্যাকেটজাত, টি ব্যাগ এবং বাল্ক টিএ তিন ধরনের চা রফতানি হয়।

গত মাসে শ্রীলংকান রফতানিকারকরা ইরাকে সবচেয়ে বেশি চা রফতানি করেছেন। জানুয়ারিতে রাশিয়া, তুরস্ক, ইরান, আজারবাইজান, চীন, সৌদি আরব, লিবিয়া, সিরিয়াসহ কয়েকটি দেশে শ্রীলংকা থেকে চা রফতানি হয়েছে।

খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, প্রতিকূল আবহাওয়ার জের ধরে উৎপাদনে মন্দা ভাব গত মাসে শ্রীলংকা থেকে চা রফতানি কমার বড় একটি কারণ। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে তুলনামূলক কম চাহিদার কারণে শ্রীলংকার চা রফতানি কমতির দিকে ছিল। দাম তুলনামূলক বাড়তির দিকে থাকায় এ সময় অনেক আমদানিকারক পানীয় পণ্যটির আমদানিতে কেনিয়া, রুয়ান্ডাসহ আফ্রিকার দেশগুলোর ওপর ঝুঁকেছেন। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে চীনের বাজারে শ্রীলংকান চা রফতানি প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন