ভোমরা স্থলবন্দর

৭ মাসে ভারত থেকে ১৩ হাজার টন হলুদ আমদানি

বণিক বার্তা প্রতিনিধি সাতক্ষীরা

দেশের বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে শুকনো হলুদ আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছেন স্থানীয় আমদানিকারকরা। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) এ স্থলবন্দর দিয়ে মসলাপণ্যটির আমদানি আগের তুলনায় বেড়ে প্রায় ১৩ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে। ভোমরার ব্যবসায়ীদের মতে, বাড়তি চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন কম হওয়ায় ভারত থেকে হলুদ আমদানি বাড়ানো হয়েছে।

ভোমরা স্থলবন্দর কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে সব মিলিয়ে ১২ হাজার ৭৯০ টন শুকনো হলুদ আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে জুলাইয়ে ২ হাজার ৯৪৭ টন, আগস্টে ৫২৯, সেপ্টেম্বরে ১ হাজার ৩৪৫, অক্টোবরে ৯১৪, নভেম্বরে ২ হাজার ৩২৪, ডিসেম্বরে ২ হাজার ৯৪৭ ও জানুয়ারিতে ১ হাজার ৭৮৪ টন হলুদ আমদানি করেছেন স্থানীয় আমদানিকারকরা।

২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে সব মিলিয়ে ১১ হাজার ৩৮৯ টন হলুদ আমদানি হয়েছিল। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে এ স্থলবন্দর দিয়ে মসলাপণ্যটির আমদানি বেড়েছে ১ হাজার ৪০১ টন।

চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে হলুদ আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ১৪৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এর বিপরীতে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা।

ভোমরা স্থলবন্দরের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স রাফসান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. হাসান বণিক বার্তাকে বলেন, প্রতি বছরই ভারত থেকে শুকনো হলুদ আমদানি করি। তবে বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় ছয়-সাত মাস ধরে পণ্যটির আমদানি বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে প্রতি মাসে ৫০০-৬০০ টন হলুদ আমদানি করছি। গত জুলাই-জানুয়ারিতেও ৪০০-৪৫০ টন হলুদ আমদানি করা হয়েছিল।

আমদানি বৃদ্ধির পেছনে বড় একটি কারণ হিসেবে হলুদের উৎপাদন কমে আসাকে চিহ্নিত করেন স্থানীয় উৎপাদক ও ব্যবসায়ীরা। সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত মৌসুমে দক্ষিণের এ জেলায় সব মিলিয়ে ২ হাজার ৭০৮ টন হলুদ উৎপাদন হয়েছে। এবারের মৌসুমে জেলায় হলুদের উৎপাদন লক্ষ্য ধরা হয়েছে ২ হাজার ১৫০ টন।

দেড় দশক ধরে হলুদ চাষের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন সাতক্ষীরার তালা উপজেলার দাতবপুর গ্রামের কৃষক মোতালেব গাজী। গত মৌসুমে তিনি তিন বিঘা জমিতে হলুদ চাষ করেছিলেন। এবারের মৌসুমে দুই বিঘা চাষ করেছেন। তিনি বলেন, গত মৌসুমে উৎপাদন ভালো হয়েছিল। তবে সে তুলনায় দাম ছিল কম। তিন বিঘা জমিতে হলুদ চাষ করে কোনো রকমে উৎপাদন খরচ তুলে আনতে পেরেছিলাম। লাভ হয়নি। কিন্তু এবার এক বিঘা কম জমিতে হলুদ চাষ করেছি। তবে বাজারে চাহিদা থাকায় ভালো দাম পেতে পারি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক অরবিন্দ বিশ্বাস বণিক বার্তার সঙ্গে আলাপকালে হলুদের উৎপাদন কমার পেছনে কৃষকের অনাগ্রহকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, হলুদ চাষে অনেক বেশি সময় দিতে হয়। পরিপক্ব হতে ১০-১১ মাস সময় লাগে। এ কারণে সফল সংগ্রহের জন্য দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয়। কৃষকদের এত আগ্রহ নেই। তারা তিন-চার মাসেই একেকটি ফসল ঘরে তুলতে চান। তাই হলুদ উৎপাদন দিন দিন কমে আসছে।

এছাড়া হলুদ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বড় একটি চ্যালেঞ্জ লবণাক্ত জমি। অরবিন্দ বিশ্বাস বণিক বার্তাকে বলেন, সাতক্ষীরা উপকূলীয় জেলা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখানকার মাটিতে লবণাক্ততা বাড়ছে। একই সঙ্গে জলাবদ্ধতার সমস্যাও রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন