২০ বছর মেয়াদি দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনার লক্ষ্য

২০৪১ সালে মাথাপিছু আয় হবে সাড়ে ১২ হাজার ডলার

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে চরম দারিদ্র্যের অবসান ঘটবে ২০৩০ সালের মধ্যে। ২০৪১ সালের মধ্যে মধ্যম দারিদ্র্য নেমে আসবে ৩ শতাংশে। ওই সময়ে দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে ১২ হাজার ৫০০ ডলারের (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী ১০ লাখ ৬২ হাজার টাকা) বেশিতে। ১০ শতাংশের ঘর ছুঁই ছুঁই (৯ দশমিক ৯ শতাংশ) করবে প্রবৃদ্ধি। ২০২১ থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে ব্যাপক শিল্পায়ন ও কাঠামোগত রূপান্তর, কৃষি খাতে দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তন এবং নগর ব্যবস্থাপনার রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাবে বাংলাদেশ। গড়ে তোলা হবে রফতানিমুখী উৎপাদন অর্থনীতি এবং জ্বালানি ও টেকসই অবকাঠামো। নিশ্চিত হবে স্থিতিশীল এবং টেকসই প্রবৃদ্ধি। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র হিসেবে।

এসব লক্ষ্য নির্ধারণ করে প্রণীতরূপকল্প ২০৪১ বাস্তবে রূপায়ণ: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ শীর্ষক পরিকল্পনা দলিলটি গতকালই চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) ২০ বছর মেয়াদি এ পরিকল্পনাটি প্রণয়ন করেছে। প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল অনুষ্ঠিত এনইসির বৈঠকে এ রূপকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।

বৈঠক শেষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ রূপকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নূরুল আমিন, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) . শামসুল আলম, শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) বেগম সাহিন আহমেদ চৌধুরী, ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) শামীমা নার্গিস, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী প্রমুখ।

রূপকল্পে বলা হয়েছে, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরেও দেশে বার্ষিক মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৯০৯ ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা) ২০ বছরে অর্থাৎ ২০৪১ সালের মধ্যে এটি ১২ হাজার ৫০০ ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে। ২০৪১ সালে দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। এ সময়ের মধ্যে দেশের নাগরিকদের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৮০ বছরে উন্নীত করার লক্ষ্য ধরা হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ শতাংশে এবং শিশুমৃত্যুর হার হাজারে ৪ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চশিক্ষার হার ৮০ শতাংশে উন্নীত করারও লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ২০৩১ সালের মধ্যেই প্রাপ্তবয়স্ক সাক্ষরতার হার এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিট ভর্তির হার ১০০ শতাংশে উন্নীত করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে এ রূপকল্পের ভিত্তি এবং অর্জন সম্ভাব্যতার দিক থেকে লক্ষ্যগুলোর যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, অনেক লক্ষ্য অপ্রত্যাশিত হতে পারে। কিন্তু অযৌক্তিক নয়। সরকার লক্ষ্য অর্জনে বদ্ধপরিকর। তাছাড়া প্রতিটি মন্ত্রণালয় তাদের লক্ষ্যগুলোকে আরো শাণিত করেছে। প্রেক্ষিত পরিকল্পনার জন্য বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্টরা নতুন কিছু সুপারিশ করেছেন। সেগুলোকে আমরা সংশোধনের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত করব। তার মানে প্রত্যেকেই এখন দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনায় শামিল হতে চান। দেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, যেখানে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার থাকবে এবং সবার জন্য অংশগ্রহণমূলক সমৃদ্ধি নিশ্চিত হবে।

এ সময় এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থায়ন ও দিকনির্দেশনা সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এটি প্রতি বছরের বাজেটের মতো কোনো বিষয় নয়। এটি একটি স্বপ্ন। সেখানে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্জনের জন্য পাথেয় তৈরি করা হয়েছে। প্রেক্ষিত পরিকল্পনা অর্জনের জন্য পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাও নেয়া হবে। প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা করা হবে। এরই মধ্যে পরিকল্পনাটির যে ভিত্তি তৈরি করা হয়েছে, সেখানে গ্রামীণ অর্থনীতিতে বৈচিত্র্যও নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে।

প্রেক্ষিত পরিকল্পনার প্রক্ষেপণে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। ২০৩১ সালেই এটি ৯ শতাংশের মাইলফলক অর্জন করবে। ২০৪১ সালের মধ্যে তা আরো বেড়ে দাঁড়াবে ৯ দশমিক ৯ শতাংশে। একই সঙ্গে চরম দারিদ্র্যের হার চলতি বছর হবে ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। ২০৩১ সালের মধ্যে তা নেমে আসবে ২ দশমিক ৫৫ শতাংশে। ২০৪১ সালের মধ্যে তা কমে দাঁড়াবে দশমিক ৬৮ শতাংশে। অন্যদিকে মাঝারি দারিদ্র্য চলতি বছরের ১৮ দশমিক ৮২ শতাংশ থেকে কমে ২০৩১ সালে দাঁড়াবে ৭ দশমিক শূন্য শতাংশে। পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শেষে ২০৪১ সালে তা ৩ শতাংশের নিচে নেমে আসবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন