আরবে বিশ্বকাপ ও প্রপাগান্ডা

বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার দৌড় শুরুর পর থেকেই স্রোতের বিপরীতে নৌকা চালাচ্ছে কাতার! পশ্চিমা গণমাধ্যম ও নানা সংস্থা একের পর এক শেল ছুড়লেও নিজেদের কাজের দিকেই দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছে মধ্যপ্রাচ্যের বিত্তশালী দেশটি। গতকাল ছিল বিশ্বকাপের হাজার দিনের কাউন্টডাউন। এদিন আয়োজকরা জানালেন, আমরা সঠিক পথেই রয়েছি। কাতার বিশ্বকাপের খুঁটিনাটি বিষয়ের দিকে নজর দেয়া যাক।

যা কিছু প্রথম

* বিশ্বকাপ ইতিহাসে এবারই প্রথম মে, জুন বা জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে না খেলাগুলো। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শীতকালীন অলিম্পিক ও এপ্রিলে রমজানের কারণে তা নভেম্বর-ডিসেম্বরে পিছিয়ে নেয়া হয়। ২১ নভেম্বর থেকে ১৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে এ বিশ্বকাপ।

* মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের এটিই হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রথম ঘটনা। বলাবাহুল্য, মধ্যপ্রাচ্যে এটি প্রথম বিশ্বকাপ।

* আয়তনের দিক থেকে কাতারই হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ আয়োজক হওয়া সবচেয়ে ছোট রাষ্ট্র। সুইজারল্যান্ড সবচেয়ে ছোট দেশ হিসেবে ১৯৫৪ সালের বিশ্বকাপ আয়োজন করে। আয়তনের দিক থেকে কাতারের প্রায় তিন গুণ বড় দেশটি।

আয়োজক নির্বাচন

২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আয়োজক চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। বিভিন্ন দেশ আয়োজক হওয়ার দৌড়ে নামলেও শেষ পর্যন্ত ছিল পাঁচ দেশকাতার, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। ভোট প্রদানের জন্য ২২ সদস্যের ফিফা নির্বাহী কমিটি সদস্যদের জুরিখে ডাকা হয়। ভোট শুরুর আগেই দুর্নীতির অভিযোগ এনে দুই সদস্য এমোস আমাদু ও রেনাল্ড তেমারিকে ভোট প্রদান থেকে বিরত রাখা হয়। ভোটে কাতার নির্বাচিত হয়।

প্রপাগান্ডা

মধ্যপ্রাচ্য ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে এটিই হবে প্রথম বিশ্বকাপ। বিষয়টি কিছুতেই মানতে পারছিল না পশ্চিমারা। গণমাধ্যমে একের পর এক প্রকাশিত হয় নানা নেতিবাচক সংবাদ। আয়োজক হওয়ার দৌড়ে কাতারের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের হারে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। আয়োজক চূড়ান্ত করার পেছনে অর্থের ভূমিকা ছিলআনা হয় এমন অভিযোগ। শুরু হয় তদন্ত। তদন্ত শেষে ওই অভিযোগ ভিত্তিহীন প্রমানিত হয়। তার পরও থামেননি সমালোচকরা। তদন্ত প্রতিবেদনকে ত্রুটিপূর্ণ উল্লেখ করে পুনঃতদন্তের দাবিও ওঠে। শেষ পর্যন্ত তা অবশ্য আমলে নেয়া হয়নি।

উষ্ণতা নিয়ে উদ্বেগ

জুন-জুলাইয়ে দাবদাহে মধ্যপ্রাচ্যে ফুটবল খেলা অসম্ভবএমন দাবি তোলে অনেক দেশ। আয়োজকরা ঘোষণা দেনপ্রয়োজনে সবগুলো ভেনুর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে খেলা চলাকালে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখা হবে। সেভাবেই শুরু হয়েছে ভেনু নির্মাণকাজ। স্টেডিয়ামগুলোর ওপর এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, যা বিশ্বকাপ শেষে খুলে নেয়া হবে। তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অংশগুলো স্বল্পোন্নত দেশে প্রদান করবে আয়োজকরা।

আয়োজকদের প্রস্তুতি

নানা নেতিবাচক খবর ও অপপ্রচারের মাঝেই ২০১০ সালের মার্চে বিশ্বকাপের জন্য পাঁচ প্রস্তাবিত ভেনুর নকশা উন্মোচন করা হয়। ভেনুগুলোর নকশা তৈরি করেছে জার্মান প্রতিষ্ঠানস্পিয়ার অ্যান্ড পার্টনার্স। ভেনুগুলো যতটুকু সম্ভব পরিবেশবান্ধব ও টেকসই করে গড়ে তোলার ঘোষণা দেন আয়োজকরা। শ্রমিক মৃত্যুর বিতর্ক

বিভিন্ন গণমাধ্যম কাতারের বিশ্বকাপ ভেনুতে কাজ করা শ্রমিকদের প্রতি নানা বৈষম্য তুলে ধরে তাদের মৃত্যুর আশঙ্কার সংবাদ পরিবেশন করে। যেখানে বলা হয়, নির্মাণকাজ শুরুর পর থেকে বিশ্বকাপ পর্যন্ত এ কাজে সম্পৃক্ত প্রায় চার হাজার শ্রমিক মৃত্যুবরণ করবেন। যার পেছনে শ্রমিকদের সুরক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত না করার কথা উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৫২২ নেপালি ও ৭০০ ভারতীয় শ্রমিক মৃত্যুবরণ করেছেন।

প্রস্তুতির অগ্রগতি

এক হাজার দিনের কাউন্টডাউনেডেলিভারি ও লেগেসি সুপ্রিম কমিটি সেক্রেটারি জেনারেল হাসান আল থাওয়াদি বলেছেন, ‘গেল বছর আমরা খলিফা স্টেডিয়াম ও আল জানউব স্টেডিয়াম উদ্বোধন করেছি। এডুকেশন সিটি স্টেডিয়াম প্রস্তুত, আমরা তা উদ্বোধনের অপেক্ষা করছি। আল রায়ান স্টেডিয়াম ও আল বাইদ স্টেডিয়াম এ বছরই উদ্বোধন করব। ২০২১ সালের শেষ থেকে ২০২২ সালের শুরুর দিকেই আট স্টেডিয়াম প্রস্তুত হয়ে যাবে।

ফিফার ভাষ্য

বিশ্ব ফুটবল সংস্থার টুর্নামেন্ট ও ইভেন্ট অফিসার কলিন স্মিথ বলেন, ‘সবগুলো ভেনু নির্ধারিত সময়েই শেষ হবে। বিশ্বকাপ শুরুর আগে আমরা ভেনুগুলোতে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা পরিচালনার সুযোগ পাচ্ছি। কেবল স্টেডিয়াম নয়, বিশ্বকাপ উপলক্ষ মেট্রো ও সড়ক-নেটওয়ার্ক নতুন করে সাজানো হচ্ছে। এখন পর্যন্ত এ কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক পর্যায়ে আছে। ফিফা মিডিয়া ও ইন্টারনেট

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন