ফাইভজি অ্যাপ্লিকেশনে ব্যবসা ভবিষ্যৎ দেখছে এইচটিসি

বণিক বার্তা ডেস্ক

একসময়ের আইকনিক স্মার্টফোন নির্মাতা এইচটিসি পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফাইভজি সমর্থিত ডিভাইস এবং অ্যাপ্লিকেশনে ব্যবসায় ভবিষ্যৎ দেখছে। এরই অংশ হিসেবে চলতি বছরই নিজেদের প্রথম ফাইভজি ফোন উন্মোচনের পাশাপাশি ফাইভজি কানেক্টেড অ্যাপ্লিকেশন সেগমেন্টে বড় অংকের বিনিয়োগের লক্ষ্যে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি এক সাক্ষাত্কারে এইচটিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইভস মাইত্রে এমন তথ্য জানিয়েছেন। খবর হিন্দুস্তান টাইমস।

সাক্ষাত্কারে ইভস মাইত্রে ফাইভজি ফোন এবং সংশ্লিষ্ট অ্যাপ্লিকেশন সেগমেন্টে বিনিয়োগ বিষয়ে বিস্তারিত প্রকাশ করেননি। যে কারণে এইচটিসির প্রথম ফাইভজি ফোনের স্পেসিফিকেশন এবং কবে নাগাদ বাজারে আসবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি। তবে ডিভাইসটি বাজেটসাশ্রয়ী হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

তাইওয়ানভিত্তিক এইচটিসি টানা কয়েক বছর ধরে খারাপ সময় পার করছে। ২০১৮ সালে এইচটিসির ডিভাইস ব্যবসা কার্যক্রম ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে। গত বছরও একই পরিস্থিতিতে কেটেছে। বিশ্লেষকরা গত বছরের আর্থিক খতিয়ান বিশ্লেষণ করে প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তবে এইচটিসি বৈশ্বিক ডিভাইস বাজারে নিজেদের প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী। সিইও ইভস মাইত্রের সাক্ষাত্কারে এমন ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।

এইচটিসি গত মাসে ২০১৯ সালের আর্থিক খতিয়ান প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, গত বছর প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব হাজার কোটি ৫০ লাখ তাইওয়ানিজ ডলারে (৩৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার) দাঁড়িয়েছে, যা এক বছর আগের হাজার ৩৭৪ কোটি ১০ লাখ তাইওয়ানি ডলারের (৭৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার) চেয়ে ৫৭ দশমিক শতাংশ কম। এছাড়া ২০১৭ সালের ২০০ কোটি ডলারের চেয়ে গত বছর প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব কমেছে ৮৭ শতাংশ।

২০১৭ সালের শেষার্ধে স্মার্টফোন ব্যবসার আংশিক বৈশ্বিক সার্চ জায়ান্ট গুগলের কাছে বিক্রি করে এইচটিসি। অধিগ্রহণের অংশ হিসেবে এইচটিসির স্মার্টফোন ব্যবসা বিভাগের দুই হাজার প্রকৌশলী গুগলের সিলিকন ভ্যালির কার্যালয়ে যুক্ত হয়। স্মার্টফোন ব্যবসা বিভাগের আংশিক বিক্রির পর ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট (ভিআর) এবং অ্যাকসেসরিজ ব্যবসায় গুরুত্ব আরোপের ঘোষণা দেয় এইচটিসি। তবে গুগলের কাছে স্মার্টফোন ব্যবসা বিভাগের আংশিক বিক্রির পর থেকে টানা রাজস্ব কমতে দেখা গেছে।

গত বছর ডিসেম্বরে সমাপ্ত প্রান্তিকে কী পরিমাণ লোকসান হয়েছে, তা আর্থিক খতিয়ানে প্রকাশ করেনি এইচটিসি। তবে প্রতিষ্ঠানটি গত বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) ৭০৫ কোটি তাইওয়ানি ডলার (২৩ কোটি ৪৪ লাখ ডলার) লোকসানের তথ্য দিয়েছে।

বৈশ্বিক বাজারে নিজেদের অবস্থান পুনরুদ্ধারে গত বছর স্মার্টফোন ডিভাইস ব্যবসা কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনে এইচটিসি। এরই অংশ হিসেবে স্মার্টফোনের দ্বিতীয় বৃহৎ বাজার ভারতে ফ্ল্যাগশিপ এবং হাই-এন্ড ডিভাইস বিক্রি বন্ধ করে প্রতিষ্ঠানটি। এর পরিবর্তে মাঝারি দামের স্মার্টফোন বিক্রিতে জোর দেয়। শুধু ভারতে নয়; বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্মার্টফোন বাজারে গ্রাহক চাহিদার আলোকে ডিভাইস উন্মোচন বিক্রির উদ্যোগ নেয় এইচটিসি। তবে রাজস্বের ধারায় ফিরতে প্রতিষ্ঠানটির কোনো চেষ্টাই কাজে দেয়নি।

এইচটিসি বৈশ্বিক ডিভাইস বাজারে দৃঢ় প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্যে গত বছর সেপ্টেম্বরে টেলিযোগাযোগ খাতে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ ইভস মাইত্রেকে সিইও হিসেবে নিয়োগ দেয়। তিনি সিইওর দায়িত্ব নেয়ার পর ব্যবসা কৌশলে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়।

সাক্ষাত্কারে ইভস মাইত্রে জানান, তারা ফাইভজি স্মার্টফোন হার্ডওয়্যারের পাশাপাশি ফাইভজি কানেক্টেড অ্যাপ্লিকেশন, ভিআর, অ্যাকসেসরিজ বিভিন্ন সেবায় বেশি জোর দিচ্ছেন। আমরা আশা করছি, শিগগিরই এইচটিসির রাজস্বে প্রবৃদ্ধি দেখা যাবে।

বিশ্লেষকদের ভাষ্যে, অ্যাপল, স্যামসাং চীনভিত্তিক হুয়াওয়ে স্মার্টফোন হার্ডওয়্যারকেন্দ্রিক উদ্ভাবনে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। গুগলের কাছে ডিভাইস ব্যবসা বিভাগের আংশিক বিক্রি করে এইচটিসির স্মার্টফোন হার্ডওয়্যার উদ্ভাবন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত মোটেও সঠিক ছিল না। কারণ স্মার্টফোন বাজারে টিকে থাকতে হলে হার্ডওয়্যারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট অ্যাপ্লিকেশন সেবা উদ্ভাবনে গুরুত্ব আরোপের বিকল্প নেই। অ্যাপল, স্যামসাং হুয়াওয়ে কৌশলে স্মার্টফোন বাজারে ভালো করছে। ভিআর হার্ডওয়্যার সেবা ব্যবসা এখনো উদীয়মান পর্যায়ে রয়েছে। খাত থেকে রাজস্ব আয়ে আরো লম্বা সময়ের প্রয়োজন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন