বাড়িতে তৈরি খাবার ফেসবুকে বিক্রি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে ব্রিটেনে

বণিক বার্তা অনলাইন

বাড়িতে তৈরি খাবার ফেসবুকে বিক্রি করার ব্যবসা দিন দিন বাড়ছে। অনেকটা বেপরোয়াভাবেই বাড়ছে এ হোম ডেলিভারি বাণিজ্য। তবে খাদ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। আর যেহেতু মানুষ ফেসবুকের ওয়েবসাইট ব্যবহার করে এভাবে ব্যবসা করছে সেহেতু এর দায়দায়িত্ব ফেসবুককেও কিছুটা নিতে হবে। 

এনিয়ে এরই মধ্যে ব্রিটেনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা। দেশটির ফুড স্ট্যান্ডার্ড এজেন্সি (এফএসএ) বলছে, কোনো ধরনের নিবন্ধন বা স্থানীয় কাউন্সিলের নজরদারি ছাড়াই যারা খাদ্য বিক্রি করছেন তাদের হাতে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। সংস্থার প্রধান হিদার হ্যানকক মনে করেন, ফেসবুকের মার্কেটপ্লেস প্লাটফর্মে খাবার বিক্রি করতে আগ্রহীদের কঠোরভাবে যাচাই বাছাই করা এ সোস্যাল মিডিয়া কোম্পানিরই নিজস্ব দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তাদের এটা করা উচিত। যদিও ফেসবুক বলছে, বিক্রেতাদের অবশ্যই তাদের নির্ধারিত গাইডলাইন মেনে ব্যবসা করতে হয়। 

ফেসবুকের মার্কেটপ্লেস প্লাটফর্মে বিভিন্ন পণ্য ও সেবার বিজ্ঞাপন বিনামূল্যে দেয়া যায়। কিন্তু যুক্তরাজ্যের আইন অনুযায়ী, যারা ঘরে থেকে নিয়মিত খাবার বিক্রি করতে চান তাদের অবশ্যই স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে নিবন্ধিত হতে হয়। নিবন্ধন পাওয়ার পর তাদের কার্যক্রম পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণের পর খাদ্য স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত রেটিং দেয়া হয়।

বিবিসির এক জরিপে দেখা গেছে, ফেসবুকের মার্কেটপ্লেসে বিপুল সংখ্যক খাদ্য বিক্রেতা আছেন যাদের কোনো নিবন্ধন নেই। তারা রান্না করা খাবার থেকে শুরু করে বেক করা রুটি, কাবাব, কেক ইত্যাদি বিক্রি করেন। 

এ ব্যাপারে খাদ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখানে যারা খাবার বিক্রি করেন তারা কখনোই সেই খাবারের উপাদান সম্পর্কে কোনো তথ্য দেন না। খাবারের সঙ্গে উপাদানের তালিকা দেয়া হয় না। তাছাড়া কীভাবে এটি সংরক্ষণ, প্রস্তুত করা হয় সে সম্পর্কেও তথ্য থাকে না। ফলে এটিতে কারো এলার্জির সমস্যা হতে পারে কি না তা বুঝা অসম্ভব। তাছাড়া এখানে স্বাস্থ্যঝুঁকি তো থাকছেই। লিস্টেরিয়া ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকিকে বড় করে দেখছেন খাদ্য বিশেষজ্ঞরা। এ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে বলে সতর্ক করছেন তারা। 

জরিপের অংশ হিসেবে বিবিসির পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি খাবার কেনা হয়। এর মধ্যে ছিল ছাগলের মাংসের ঝোল, কেক, মুরগীর রোস্ট, শিশুদের জন্য চকলেট কোণ। ফেসবুকের মার্কেটপ্লেসে এসব খাবারের কোনো বিক্রেতাই উল্লেখ করেননি যে তারা নিবন্ধিত নয় বা স্থানীয় কাউন্সিল তাদের খাবার পরীক্ষা করেছে অথবা খাদ্যস্বাস্থ্যবিধি রেটিং রয়েছে। এর মধ্যে আবার অনেকে মনে করেন, যারা বাড়িতে রান্না করা খাবার বিক্রি করেন তাদের জন্য এসব আইনকানুন প্রযোজ্য নয়। খাবারে এলার্জির উপাদানও তো থাকতে পারে- এ বিষয়ে একজন বিক্রেতা স্বীকার করেন তিনি নিজেও কখনো এটি পরীক্ষা করে দেখেননি।

ব্রিটেনের খাদ্যমান নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বলছে, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা ফেসবুকের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এসব খাবার খেয়ে কারো সমস্যা হলে বিক্রেতা খুব সমস্যায় পড়বেন। বিক্রেতাদের খাবারের বিজ্ঞাপনের সঙ্গে খাদ্য স্বাস্থ্যবিধি রেটিং প্রকাশের আহ্বান জানান এফএসএর প্রধান। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফেসবুকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ নিয়ে তারা এফএসএর সঙ্গে আছে। বিষয়টি নিয়ে যৌথভাবে কী করা যায় তা নিয়ে তারা আলোচনা করছে। 

খাদ্যে এলার্জির কারণে ব্রিটেনে একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে ২০১৬ সালে। মহাসড়কের একটি চেইন রেস্টুরেন্টের স্যান্ডউইচ খেয়ে মারাত্মক এলার্জির কারণে মারা যায় তানিয়া ও নাদিম দম্পতির মেয়ে নাতাশা। ওই স্যান্ডউইচে তিল দেয়া ছিল এটি নাতাশা খেয়াল করেনি। এরপর তানিয়া-নাদিম দম্পতি খাদ্যে এলার্জি নিয়ে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা শুরু করেন। রীতিমতো আন্দোলন গড়ে তোলেন তারা। ফলস্বরূপ এ সংক্রান্ত আইন হয়েছে। ২০২১ সালে এটি কার্যকর হবে। আইনে বলা আছে, খাদ্য বিক্রেতাকে অবশ্যই প্যাকেটের গায়ে বা বিজ্ঞাপনে সমস্ত উপাদানের তালিকা দিতে হবে। তানিয়া-নাদিম বলছেন এক্ষেত্রে, ফেসবুককেও অবশ্যেই উদ্যোগী হতে হবে।

সূত্র: বিবিসি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন