চৈত্রকল বিল

খাল খননে আবাদে ফিরেছে ১৪০০ হেক্টর জমি

এসএম পিয়াল রংপুর

একসময় বর্ষা কিংবা শুষ্কযেকোনো মৌসুমেই রংপুরে পীরগঞ্জ উপজেলার চৈত্রকল বিলে থই থই পানি থাকত জলাবদ্ধতার কারণে ওই সময় হাজার ২০০ হেক্টর আয়তনের বিলের বড় একটি অংশ বছরজুড়ে অনাবাদি থাকত এতে বছরের পর বছর লোকসান গুনতে হতো কৃষকদের তবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) রংপুরের তত্ত্বাবধানে ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি খাল খননের পর থেকে বদলে গেছে চৈত্রকল বিলের সেই চিত্র এখন বর্ষা শুষ্ক মৌসুমে বিলের পানি ওই খাল দিয়ে করতোয়া নদীতে চলে যায় তাই ফসল আবাদে কোনো ঝক্কি পোহাতে হয় না কৃষকদের

স্থানীয় বিএডিসি রংপুর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার চৈত্রকল ইউনিয়নে চৈত্রকল বিলের অবস্থান বিলের আয়তন হাজার ২০০ হেক্টর এর মধ্যে মাত্র ৮০০ হেক্টর জমিতে কেবল চাষাবাদ করতেন কৃষকরা বাকি হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে সারা বছরই জলাবদ্ধতা থাকত

বিএডিসি রংপুর কার্যালয়ের সূত্রটি জানায়, ১৯৪৫ সালে বিলসংলগ্ন বসবাসকারী ২৫০টি উদ্বাস্তু পরিবারের কাছে ৯৯ বছরের জন্য বিলটি লিজ দেয়া হয় কিন্তু জলাবদ্ধতার কারণে আমন বোরো কোনো মৌসুমেই ভালোভাবে আবাদ করতে না পেরে লোকসান গুনতেন চাষীরা বিলের অনাবাদি হাজার ৪০০ হেক্টর জমি আবাদের আওতায় আনতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে বিএডিসি ওই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে বিলসংলগ্ন এলাকায় ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি খাল খনন করা হয় খাল খননের পর ইউনিয়নের ১৪টি গ্রামের প্রায় ১২ হাজার মানুষ সুফল ভোগ করতে শুরু করে এরই মধ্যে গত আমন মৌসুমে ভালো ফলন পেয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা তাই বোরো মৌসুমেও ভালো ফলনের আশা করছেন তারা

গত শনিবার চৈত্রকল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খালের চারদিকে অসংখ্য ধানি জমি একসময় এসব জমিতে জলাবদ্ধতা লেগে থাকত কিন্তু খাল খননের পর এসব জমিতে চাষাবাদ শুরু করেছেন স্থানীয় কৃষকরা কোথাও পাওয়ার ট্রিলার দিয়ে চলছে জমি চাষ আবার কোথাও জমিতে বোরো চারা রোপণে ব্যস্ত কৃষকরা এছাড়া সুবিধাভোগীরা পানির প্রবাহ ঠিক রেখে খননকৃত খালে মাছ চাষ শুরু করেছেন আবার খালকে ঘিরে চলছে হাঁস পালনও

জমি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, খাল খননের ফলে এবার প্রথম আমন মৌসুমে ছয় একর জমিতে আবাদ করেছি ভালো ফলনও হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা খরচ করে ১৬০ মণ ধান পেয়েছি

তিনি বলেন, খাল খননের আগে আমন মৌসুমেও এখানে জলাবদ্ধতা থাকত এজন্য অধিকাংশ সময়ই জমি পতিত থাকত

কৃষক সিদ্দিকুল ইসলাম বলেন, আমার চার একর জমি একটু উঁচুতে তার পরও আগে বোরো মৌসুমে যে অল্প জমিতে ধান আবাদ করতাম, তাও ঘরে তুলতে পারতাম না সবসময় বৃষ্টির ভয় থাকত এবারই প্রথম ইউনিয়নের অধিকাংশ কৃষক বোরো আবাদ করেছেন কারণ খাল থেকে পানি সেচ দেয়ায় উৎপাদন খরচও কমে গেছে তাছাড়া বর্ষায় জলাবদ্ধতার ভয়ও নেই

এদিকে ধান আবাদের পাশাপাশি খালে হাঁস পালন শুরু করেছেন কৃষক নুর জামাল তার দেখাদেখি অন্য কৃষকও হাঁস পালনের পাশাপাশি মাছ চাষ ছাগল-ভেড়া পালন করে পরিবারের আয় বাড়ানোর চেষ্টা করছেন

কৃষক নুর জামাল বলেন, আজ থেকে এক বছর আগেও জলাবদ্ধতার জন্য অধিকাংশ কৃষক জমি অনাবাদি ফেলে রাখতেন কারণ পানির জন্য যেমন ধান আবাদ করা যাচ্ছিল না, তেমনি কোথাও কোথাও অল্প পানির জন্য পরিকল্পিতভাবে মাছ চাষও করা যাচ্ছিল না

নং চৈত্রকল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান সবুজ বলেন, বিলের জলাবদ্ধতা দূর করতে জাতীয় সংসদের স্পিকার পীরগঞ্জের সংসদ সদস্য শিরীন শারমিনকে অবগত করা হয়েছিল তার উদ্যোগেই দীর্ঘদিনের সমস্যা দূর করা হয়েছে খাল খননের ফলে আমার ইউনিয়নের ১৪টি গ্রামের প্রায় ১২ হাজার মানুষ উপকৃত হয়েছে

তিনি বলেন, চৈত্রকল বিলের যেসব স্থানে ধান চাষ সম্ভব হতো না, এখন সেসব স্থানেই ধান আবাদ করা হচ্ছে এতে উপজেলায় ধান উৎপাদন বাড়বে যা স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অন্যান্য উপজেলায়ও পাঠানো সম্ভব হবে

এসব বিষয়ে রংপুর বিএডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী এএইচএম মিজানুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, প্রায় হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য খাল কেটে করতোয়া নদীর সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে এতে জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের পাশাপাশি শুষ্ক মৌসুমে ফসলে সেচ হিসেবে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার নিশ্চিত হয়েছে এছাড়া কৃষকরা খালে মাছ হাঁস পালন করছেন, যা তাদের আয় বাড়িয়েছে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন