সাত বছরের রেকর্ড ছাড়িয়েছে স্বর্ণের বাজার

বণিক বার্তা ডেস্ক

আন্তর্জাতিক বাজারে সর্বশেষ কার্যদিবসে আগের দিনের তুলনায় প্রায় শতাংশ বেড়ে স্বর্ণের দাম ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারির পর সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠেছে। এর আগে ১৮ ফেব্রুয়ারি মূল্যবান ধাতুটির দাম বেড়ে গত সাত বছরের রেকর্ড ছাড়িয়েছিল। গতকাল ধাতুটির বাজার আগের রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে গেছে। সম্প্রতি নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে, যা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে চরম অনিশ্চয়তার আভাস দিচ্ছে। এতে নিরাপদ বিনিয়োগ উৎস হিসেবে স্বর্ণের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ বাড়ছে। ফলে বেচাকেনা বেড়ে মূল্যবান ধাতুটির বাজার ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠছে বলে জানান খাতসংশ্লিষ্টরা। খবর রয়টার্স।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সর্বশেষ কার্যদিবসে প্রতি আউন্স স্বর্ণের স্পটমূল্য দাঁড়িয়েছে হাজার ৬৬৯ ডলার ৮০ সেন্টে, যা আগের দিনের তুলনায় দশমিক শতাংশ বেশি। দিনের শুরুতে কেনাবেচার এক পর্যায়ে মূল্যবান ধাতুটির দাম বেড়ে আউন্সপ্রতি হাজার ৬৭৮ ডলার ৫৮ সেন্টে উঠে যায়। এদিকে দিন শেষে ভবিষ্যৎ সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম দাঁড়িয়েছে হাজার ৬৭২ ডলার ৮০ সেন্ট, যা আগের দিনের তুলনায় দশমিক শতাংশ বেশি। এর আগে ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রতি আউন্স স্বর্ণ বিক্রি হয়েছিল হাজার ৬১০ ডলার ৭০ সেন্টে। এটাই ছিল আন্তর্জাতিক বাজারে গত সাত বছরে ধাতুটির সর্বোচ্চ দাম।

আপত্কালীন বিনিয়োগে স্বর্ণ বরাবরই বিনিয়োগকারীদের শীর্ষ পছন্দ। চীনের গণ্ডি পেরিয়ে প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ভাইরাসটির প্রকোপে বৈশ্বিক অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়ে পড়ার আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। পরিস্থিতি বিনিয়োগকারীদের স্বর্ণের বাজারের প্রতি আকৃষ্ট করছে। ফলে সেফ হ্যাভেন খ্যাত মূল্যবান ধাতুটির চাহিদা বাড়ছেই। চাহিদার সঙ্গে বাড়ছে বেচাকেনা। বেচাকেনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দামও।

লন্ডনভিত্তিক ফরেন এক্সচেঞ্জ কোম্পানি সিএসসি মার্কেটের প্রধান বাজার কৌশলবিদ মাইকেল ম্যাকারথি বলেন, সাধারণত মুদ্রানীতি শিথিল হলে, মুদ্রার মান কমে এলে ব্যাংকের সুদহার কমলে স্বর্ণের বাজার সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ কয়েক দফায় বিদ্যমান সুদহার কমিয়ে বাজার ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা চালিয়েছে। এর ওপর নতুন বছরের শুরুতেই করোনাভাইরাসের করাঘাত স্বল্প সুদহারের পরিবেশকে আরো দীর্ঘায়িত করতে পারে। আর স্বল্প মুনাফায় বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার মুদ্রাবাজারে অর্থলগ্নিতে ভরসা পান না। এর পরিবর্তে তারা ঝুঁকেছেন স্বর্ণের প্রতি। পরিস্থিতি মূল্যবান ধাতুটির বাজার রেকর্ড চাঙ্গা করে তুলতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফরেন এক্সচেঞ্জ কোম্পানি ওএএনডিএ করপোরেশনের জ্যেষ্ঠ বাজার বিশ্লেষক জেফ্রি হ্যালি জানান, নভেল করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব স্বর্ণের বাজারে মারাত্মক গতি সঞ্চার করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগমীতে তা আরো বাড়তে পারে। এভাবে চলতে থাকলে শিগগিরই ধাতুটির আউন্স হাজার ৭০০ ডলার ছুঁয়ে ফেলতে পারে।

আরেক সেফ হ্যাভেন খ্যাত ডলারের বিনিময় মূল্যও ঊর্ধ্বমুখী। অন্যান্য সময় ডলারের দাম বাড়লে স্বর্ণের কমতে শুরু করে। তবে বর্তমানে মিলেছে উল্টো চিত্র। ডলার স্বর্ণ দুটোর দামই বাড়তির দিকে রয়েছে।

এদিকে সর্বশেষ কার্যদিবসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে স্বর্ণের পাশাপাশি রুপার দামও বাড়তির দিকে ছিল। দিন শেষে প্রতি আউন্স রুপার দাম দাঁড়িয়েছে ১৮ ডলার ৭১ সেন্টে, যা আগের দিনের তুলনায় দশমিক শতাংশ বেশি। তবে প্লাটিনাম প্যালাডিয়ামের দাম নিম্নমুখী ছিল। আগের দিনের তুলনায় কমে প্লাটিনামের আউন্স হাজার ৭০৩ ডলার ৩১ সেন্টে দাঁড়িয়েছে। আর প্যালাডিয়াম আউন্সপ্রতি ৯৬৯ ডলার ৪১ সেন্টে নেমেছে, আগের দিনের তুলনায় যা দশমিক শতাংশ কমে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন