কারখানা চালুতে চাপ দিচ্ছে চীন সরকার

বণিক বার্তা ডেস্ক

কর্মজীবী মানুষকে কাজে ফেরার জন্য চাপ দিচ্ছে চীন সরকার। এতে নতুন করে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিটিতে শ্লথগতি ঠেকাতে কারখানা কার্যক্রম শুরুর শর্ত শিথিল করছে কেন্দ্রীয় স্থানীয় সরকার। ২০২০ সালের উচ্চাভিলাষী প্রবৃদ্ধি অর্থনৈতিক উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দ্রুত কার্যক্রম শুরুতে কোম্পানিগুলোর ওপর চাপ দিচ্ছে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং থেকে শুরু করে অন্যান্য শীর্ষ নেতা। খবর ব্লুমবার্গ।

গত ডিসেম্বরে শুরু হওয়া করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রভাবে কয়েক সপ্তাহ ধরেই চীনের কারখানা কার্যক্রম প্রায় বন্ধ। এতে শীর্ষ অর্থনীতিটিসহ বিশ্ব অর্থনীতির প্রায় সবগুলো খাতে প্রভাব পড়েছে। বিশ্বের এয়ারলাইন, আবাসন, হোটেল, রেস্টুরেন্ট পর্যটন ব্যবসা বড় আকারে ধরাশায়ী হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত কার্যক্রম শুরু করা কোম্পানিগুলোসহ চীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকারে জায়গা করে নিয়েছে।

প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের আহ্বানে সাড়া দিয়ে চীনের বিভিন্ন প্রদেশের শীর্ষ নেতারা কার্যক্রম শুরুতে বিভিন্ন শর্ত শিথিল করছে। গত চান্দ্রবর্ষের অবকাশের পর চীনের প্রায় অর্ধেক কারখানাই বন্ধ রয়েছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে রাস্তাঘাট জনশূন্য দোকানপাট বন্ধ থাকলেও চীনের উপকূলীয় শহরগুলোতে প্রাণচাঞ্চল্য শুরু হচ্ছে।

সোমবার চীনের অন্তত ছয়টি প্রদেশ তাদের জরুরি রেসপন্স লেভেল কমিয়ে আনে। গত ২৩ জানুয়ারি পুরোপুরি অবরুদ্ধ হওয়ার পর এই প্রথম করোনাভাইরাসের কেন্দ্রস্থল উহান প্রদেশে চলাচলে নীতিমালা শিথিল হয়েছে। চিকিৎসা অন্যান্য কাজে সেখানকার বাসিন্দাদেরকে অন্য জায়গায় গমন করতে দিচ্ছে এবং শহরটিতে গাড়ি প্রবেশের অনুমতি দেয়া হচ্ছে।

কারখানা চালুর নিয়মকানুন শিথিল করলেও কর্মীরা কাজে যোগ দেবে কিনা, সেটা বড় প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে। চীনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় ফুজিয়ান প্রদেশের একটি বস্ত্র কারখানার ভাইস প্রেসিডেন্ট ডং লিয়ু বলেন, আমাদের কারখানায় এখনো বৃহৎ সংখ্যক কর্মী অনুপস্থিত। এজন্য আমাদেরকে সীমিত আকারে কার্যক্রম শুরু করতে হচ্ছে। ডং আরো জানান, কারখানা চালু করতে ১৭ ফেব্রুয়ারি সরকারের কাছে আবেদন করেছিলেন তারা। আবেদনের একদিন পরই সরকারি পরিদর্শকরা আসেন এবং কারখানা চালুর অনুমতি দেন। চলতি সপ্তাহেই বেশির ভাগ কারখানা চালুর অনুমতি দেয়া হচ্ছে বলে  জানান তিনি।

কারখানা কার্যক্রম চালুতে সরকারের চাপ প্রয়োগের ফলে নতুন করে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়েছে, যে ভাইরাসটি নিয়ে এখনো বেশি কিছু জানা সম্ভব হয়নি। বিশ্বজুড়ে ৭৯ হাজারেরও বেশি মানুষ ভাইরাসে সংক্রমিত হলেও তার বেশির ভাগ চীনের সাতটি প্রদেশের।

ব্লুমবার্গ ইকোনমিকসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২১ ফেব্রুয়ারির অব্যবহিত পূর্ব এক সপ্তাহে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ সক্ষমতা নিয়ে চলছে চীনা অর্থনীতি। সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, শ্যানডং জিয়াংশুর মতো প্রদেশগুলোতে ৭০ শতাংশেরও বেশি কারখানা চালু হয়েছে। জেজিয়াং প্রদেশে চালু হয়েছে ৯০ শতাংশেরও বেশি কারখানা। তবে বেশির ভাগ কর্মী এখনো কাজে যোগ না দেয়ায় কারখানাগুলো তাদের সীমিত সক্ষমতায় পরিচালিত হচ্ছে। হুবেই প্রদেশের দক্ষিণের হুনান প্রদেশে ১৭ ফেব্রুয়ারি নাগাদ মাত্র ৪৬ শতাংশ কারখানা চালু হয়েছে। সেখানে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ কর্মী কাজে ফিরেছেন।

হংকংয়ের আইএনজি ব্যাংক এনভির অর্থনীতিবিদ আইরিস প্যাং বলেন, স্বাভাবিক সক্ষমতায় কারখানাগুলোর কাজে ফেরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তা না হলে কর্মীদের বেতন, কোম্পানিগুলোর অর্থপ্রবাহ এবং সর্বোপরি বৈদেশিক রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন