শিশুর বদভ্যাস বদলায় ভালোবাসায়

বণিক বার্তা অনলাইন

অনেক সময় দেখা যায় বাড়ির সবথেকে ছোট সদস্যটি নতুন নতুন বদাভ্যাস রপ্ত করছে। কখনো হয়তো মুখে আঙুল গুঁজে বসে আছে, এটা শেষ করে শুরু করছে নখ খাওয়া। অনেকে আবার নিজের চুল ছিঁড়েই ক্ষ্যান্ত হয় না, আশপাশের মানুষের চুল ধরেও টানাটানি করে। অনেক শিশু আবার হাতের কাছে যা পায় তাই মুখে পুড়ে দেয়। শিশুদের মধ্যে এ রকম আচরণ অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সমস্যা হয় যখন এই অভ্যাস বদভ্যাসে রূপ নেয়। তবে বকাঝকা না করে ভালো করে বোঝালেই বদভ্যাস থেকে দূরে রাখা যায় শিশুদের।

খেলনা হোক বা নিজের আঙুল, যাই সে মুখে দিক না কেন, তার মাধ্যমে ময়লা বা জীবাণু চলে যেতে পারে পেটে। এতে করে পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। সর্দি-কাশি বা ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে। নখ খাওয়া বা নাকে আঙুল দেয়ার মতো বদভ্যাস  থেকে নাকে বা নখের কোণে কেটে গিয়ে সংক্রমণ (ইনফেকশন) হওয়ার আশঙ্কা থাকে। 

প্রথমে দেখতে হবে বদভ্যাসটি আসলে কতটা বদ। আবার তা আদৌ বদভ্যাসে পরিণত হয়েছে কি না। এই অভ্যাস কেবল অস্বস্তিকর, নাকি শরীরের জন্যও ক্ষতিকর। সন্তানের কোনটা বদভ্যাস  আর কোনটা নয়, সেটা আগে চিহ্নিত করা প্রয়োজন। অনেক সময়েই হয়তো কোনও কাজ করতে করতে অবচেতনে দুয়েকবার সে দাঁতে নখ কাটল। হয়তো পরে সেটা আর করল না। সেটা কিন্তু বদভ্যাস নয়। কিন্তু যখন তখন যদি নখ খেতে শুরু করে, তখন বুঝতে হবে, সেটা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তখন সচেতন হতে হবে। 

বদভ্যাস গড়ে ওঠার পেছনে কারণ থাকে। যেমন: আপনার সন্তান হয়ত বাড়িতে স্কুলের কাজ করার সময় দাঁত দিয়ে নখ কাটে। আবার দুশ্চিন্তা বা উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকলে এ কাজ করে। এসব কিছু নিশ্চিত হওয়ার পরেই সন্তানের বদভ্যাস তাড়াতে কাজে লেগে পড়তে হবে। 

বদভ্যাস ছাড়াতে সন্তানকে বকাঝকা করা যাবে না। প্রথমেই মাথায় রাখতে হবে, শিশু মানেই তাকে জোর করে কিছু করানো যাবে না। কেননা তারা নিষিদ্ধ জিনিসে বেশি আকৃষ্ট হয়। তাই প্রথম পদক্ষেপ, শিশুর সামনে এই বিষয়গুলো উপেক্ষা করা। ব্যাপারটাকে পাত্তা না দিলে নিজে থেকেই হয়তো সে এক সময়ে নখ খাওয়া বা চুল ছেঁড়ার মতো অভ্যেস ছেড়ে দেবে। 

ভারতের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আবির মুখোপাধ্যায় বলেন, সন্তানের সারা দিনের কাজ বেঁধে দিন। তার ভালো অভ্যাসের জন্য তাকে একটা করে স্টার দিন। পাঁচটা স্টার জোগাড় করতে পারলে তাকে একটা উপহার দেবেন বলে আশ্বাস দিতে পারেন। এর মধ্যে সে যদি কোনও বদভ্যাস পুনরায় করে, তা হলে সেই স্টার কেটে নিন। প্রথমে দু’বার সতর্ক করতে হবে। তার পরেও কাজ না হলে স্টার কেটে নিতে পারেন। এতে কিন্তু সে সচেতন হবে।

সন্তানের সঙ্গে কথা বলুন। একজন প্রাপ্তবয়স্কের মতোই ওর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। হয়তো তার কথা থেকেই সমস্যার সমাধান পেয়ে যেতে পারেন। এমন পদ্ধতিতে বোঝান, যাতে সে বোঝে। যেমন যদি সে নখ খায়, তাকে বলুন যে, এতে তার নখ খারাপ দেখাচ্ছে। নিয়মিত নখ কেটেও দিন, যাতে সে নখ খেতে না পারে। অন্য দিকে নাকে আঙুল দিলে বলুন, এতে তার বন্ধুরাও তার সঙ্গে খেলবে না। কারণ তার হাতটা নোংরা হয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেকটা সমস্যা ধরে তার সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করুন। 

শুধু সন্তানকে বারণ করলেই হবে না। ভেবে দেখুন তো, ওর সামনে আপনি নিজে কোনও বদভ্যাস চর্চা করছেন না তো! হয়তো আপনাকে দেখে সে-ও শিখেছে। তাই নিজের আচরণ ও স্বভাব সম্পর্কে সবার আগে সচেতন হোন। 

সব সময় শিশুর নেতিবাচক দিক নিয়ে আলোচনা করবেন না। মাঝেমাঝে ভালো কাজের জন্য ওর প্রশংসাও করুন। এতে সে ভালো কাজ করতে উৎসাহ পাবে। ধৈর্য হারালে চলবে না। মনে রাখতে হবে, সে কিন্তু শিশু। তাকে বোঝাতে হবে যে, তার এই আচরণে আপনি দুঃখ পেয়েছেন। তাতেই কাজ হবে।

তবে খেয়াল রাখতে হবে, একটা বদভ্যাস পাল্টাতে গিয়ে যেন আরেকটা বদভ্যাস তার সঙ্গী না হয়ে যায়। অনেক সময়ই সেলফোন থেকে দূরে সরাতে গিয়ে টিভির নেশা ধরে যায়। এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা ও আইমম

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন