নভেল করোনাভাইরাস

দক্ষিণ কোরিয়ায় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি

বণিক বার্তা ডেস্ক

চীনে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাস ডিজিজ বা কভিড-১৯-এ সংক্রমিত হওয়ার সংখ্যা ক্রমেই কমে আসছে। গতকাল পর্যন্ত দেশটিতে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৪২। এর মধ্যে গতকাল মারা গেছে ৯৭ জন, যাদের অধিকাংশই উহানের বাসিন্দা। আর দেশটিতে নতুন করে সংক্রমিত হয়েছে ৬৪৮ জন। এ নিয়ে গতকাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ভাইরাসটিতে সংক্রমিতের সংখ্যা ৮০ হাজার ছাড়িয়েছে। আর চীনের বাইরে এখন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটিতে এ পর্যন্ত সংক্রমিতের সংখ্যা সপ্তাহের ব্যবধানে তিন গুণ বেড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে চীনের প্রতিবেশী দেশটি এখন সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে। খবর এএফপি।

গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব ঘটে। এর পর থেকে দ্রুত প্রদেশটিতে ভাইরাসটি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে। চীনের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপের কারণে ভাইরাসটিতে সংক্রমিত ও মৃতের সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে। এ মাসের শেষের দিকে ভাইরাসটি নির্মূলের দিকে যেতে পারে বলেও মনে করছে চীন সরকার।

তবে চীনের বাইরে এখন সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ তৈরি হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দেইগুর একটি গির্জা থেকে ভাইরাসটি এখন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। গতকাল পর্যন্ত ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৫৬। এর মধ্যে গতকালই নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ১২৩ জন। আক্রান্তের ৩০০ জনের বেশি গির্জা থেকে আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া গতকাল ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে আরো দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে গতকাল পর্যন্ত দেশটিতে মরণঘাতী এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চার। এছাড়া ১ হাজার ২৪০ জনের শরীরে ভাইরাসটির লক্ষণ দেখা গেছে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে উচ্চমাত্রায় সতর্কতা জারির পাশাপাশি দেইগুসহ অন্যান্য শহরকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে পারে সিউল। কোরিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের তথ্যানুযায়ী, যে গির্জা থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে বলে বলা হচ্ছে, সেখানকার ৯ হাজার ৩০০ সদস্যকে কোয়ারান্টাইনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জা-ইন জানান, আগামী কয়েক দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিস্থিতি বিবেচেনা করে এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হতে পারে। তবে ঠিক কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে সরকার, সেটি নির্দিষ্ট করেননি তিনি।

দক্ষিণ কোরিয়ার পর চীনের বাইরে কভিড-১৯ নিয়ে এখন ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় আতঙ্ক বাড়ছে। ইতালিতে এরই মধ্যে দেশটির দুজন নাগরিক ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়ে মারা গেছে। দেশটি এখন চীনের হুবেই প্রদেশের মতো কয়েকটি শহর কোয়ারান্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করছে। এরই মধ্যে ইতালির অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র মিলানের পার্শ্ববর্তী এক ডজনের মতো শহরের ৫০ হাজারের বেশি বাসিন্দাকে বাইরে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া এসব শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও দোকান বন্ধ রাখা হয়েছে। সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার আরো কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জোসেফ কন্তে।

অন্যদিকে ইরানে মরণঘাতী ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে গতকাল ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কিনাউশ জাহানপোর জানান, গতকাল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট। এছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৪৩-এ ঠেকেছে।

ইরানের পবিত্র নগরী কোয়ামে প্রথম ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। গতকাল আক্রান্ত হওয়া ১৫ জনের সাতজনই কোয়ামের বাসিন্দা। বাকিরা রাজধানী তেহরানসহ অন্যান্য এলাকার। পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশটির ১৪টি প্রদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। আর প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগে কড়া সতর্কতা অবলম্বন করছে কুয়েত, ইরাকসহ অন্যান্য দেশ।

আর অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যসেবায় ভঙ্গুর অবস্থায় থাকা আফ্রিকাকে নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) মিসরে প্রথমবারের মতো একজনের সংক্রমিত হওয়ার খবর জানার পর জাতিসংঘের সংস্থাটি বলছে, আফ্রিকা মহাদেশটি এমনিতেই খুব ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থায় নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় আফ্রিকা ইউনিয়নকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

ডব্লিউএইচওর প্রধান টেড্রোস অ্যাডহ্যানম মনে করেন, আফ্রিকার অনেক দেশে শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সরঞ্জামের পর্যাপ্ত অভাব রয়েছে, যা ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়লে উদ্বেগের অন্যতম কারণ হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন