চীনে নভেল করোনাভাইরাস ডিজিজ বা কভিড-১৯-এ সংক্রমিত ও মৃতের সংখ্যা কমে আসছে। গতকাল পর্যন্ত ভাইরাসটিতে আক্রান্ত
হয়ে চীনে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৪৫। এর মধ্যে গতকাল মারা গেছে ১০৯ জন, যার ৯০ জনই উহানের বাসিন্দা। আর ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৬ হাজার
ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে গতকাল নতুন করে সংক্রমিত হয়েছে প্রায় ৪০০ জন, যা আগের দিনের সংক্রমণের অর্ধেকের চেয়ে কম। তবে এর বিপরীত চিত্র চীনের বাইরের
দেশগুলোয়। এসব দেশে ভাইরাসটিতে সংক্রমিত ও মৃতের সংখ্যা দুটোই এখন বাড়তির দিকে
রয়েছে। খবর এএফপি।
গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের
রাজধানী উহান থেকে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু। এর পর থেকে চীনের বাইরে
৩০টির মতো দেশে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে। শুরুর দিকে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ
থাকলেও ভাইরাসটি এখন ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। এর মধ্যে ফ্রান্সে প্রথম
ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়ে এক চীনা নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এর পর থেকে ইউরোপজুড়ে
কভিড-১৯ নিয়ে উদ্বেগের মধ্যেই দিন পার হচ্ছিল। সেই উদ্বেগে নতুন করে মাত্রা যোগ
করেছে ইতালির এক নাগরিকের মৃত্যু।
ইতালির বার্তা সংস্থা এএনএসএ বলছে, উত্তরাঞ্চলীয় এলাকা লোম্বারডিতে কভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে দেশটির এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এর আগে লোম্বারডির
পার্শ্ববর্তী ভেনিটো এলাকায় ৭৮ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হন। এটিই
প্রথম কোনো ইউরোপীয় নাগরিকের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্তের ঘটনা। এ নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে
গতকাল ওই ইতালীয় নারীর মৃত্যু হয়েছে।
নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত নাগরিকের এ মৃত্যুতে
আরো শক্ত অবস্থানে যাচ্ছে ইতালি। এর মধ্যে হুবেই প্রদেশের মতো দেশের ১০টি শহরকে
কার্যত বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে ইতালি সরকার।
চীনের বাইরে গতকাল দ্বিতীয় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে
দক্ষিণ কোরিয়ায়। এ নিয়ে দেশটিতে কভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে দুজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ায় সংক্রমিতের
হারও খুব দ্রুত বাড়ছে। এরই মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ৪০০ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে ১২০
জনের বেশি দেশটির দক্ষিণাঞ্চালীয় শহর দেইগুরের একটি গির্জার উপাসনাকারী।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ৬১ বছর বয়সী একজন নারী
থেকে গির্জাটিতে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। ওই নারীর শরীরে ১০ ফেব্রুয়ারি ভাইরাসের লক্ষণ
দেখা যায়। তবে এর আগেই তিনি অন্তত চারটি গির্জা পরিদর্শন করেন।
এর বাইরে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে নভেল
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। ইরানে এ পর্যন্ত ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে পাঁচজন
মারা গেছে এবং আক্রান্ত হয়েছে আরো ১৮ জন। ইরানে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে থাকা এ
সংক্রমণের ফলে দেশটির সঙ্গে সীমান্ত যোগাযোগে কড়াকড়ি আরোপ করেছে ইরাক ও কুয়েত।
এছাড়া মরণঘাতী ভাইরাসটিতে সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে লেবানন ও ইসরায়েলেও।
চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হয়েছে জাপানে। দেশটির উপকূলে ৫০টির মতো দেশের তিন হাজারের বেশি নাগরিক নিয়ে দীর্ঘদিন আটকে থাকা ডায়মন্ড প্রিন্সেস প্রমোদতরী থেকে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব। জাহাজটিতে থাকা দেশটির দুজন নাগরিক এরই মধ্যে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এছাড়া গতকাল পর্যন্ত দেশটিতে ৬০০ জনের বেশি মরণঘাতী এ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে। আর প্রমোদতরীতে থাকা অস্ট্রেলিয়ার দুজন নাগরিকের শরীরে গতকাল নতুন করে ভাইরাসটির লক্ষণ পাওয়া গেছে।
গত সপ্তাহেই জাপানের প্রমোদতরীতে ১৪ দিন কোয়ারান্টাইনে থাকার পর অস্ট্রেলিয়ার প্রায় ২০০ জন নাগরিককে নিজ দেশে ফেরত নেয় স্কট মরিসনের সরকার। তবে যে দুজন সংক্রমিত হয়েছিল, তাদের শরীরে কভিড-১৯-এর সংক্রমণ ছিল না বলে জানায় জাপান সরকার। এর পরও নিজ দেশে ফিরে আক্রান্ত হওয়ার পর জাপানের কোয়ারান্টাইন ও পরীক্ষা করার পদ্ধতি নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, জাপানের ওই প্রমোদতরীর অধিকাংশ নাগরিক এখন নিজ দেশে ফিরতে শুরু করেছে। ফলে এসব দেশে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে চীনের বাইরে কভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ায় কড়াভাবে সতর্কবার্তা দিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রোস অ্যাডহ্যানম। তিনি বলেন, আগে ভাইরাসটিতে অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ক্ষীণ থাকলেও এটি এখন ছড়িয়ে
পড়ার বড় সুযোগ পেয়েছে। আক্রান্ত দেশগুলো যদি এখনই এটি মোকাবেলা করতে না পারে, তাহলে ভাইরাসটি বড় বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে মনে করেন তিনি।