ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লের (এফএফপি) নিয়ম ভাঙায় ম্যানচেস্টার সিটিকে উয়েফা শাস্তি দিয়েছে এক সপ্তাহও গড়ায়নি।
দুই বছরের জন্য ইউরোপিয়ান ফুটবলে নিষিদ্ধ হয়েছে সিটি, যার মালিক আরব আমিরাতি ধনকুবের শেখ মনসুর আল নাহিয়ান।
এবার আলোচনায় প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি) প্রেসিডেন্ট নাসের আল-খেলাইফি, যিনি মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ কাতারের ধনকুবের।
অভিযোগ রয়েছে, বরখাস্ত হওয়া ফিফার সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল জেরোম ভালকেকে ঘুষ দিয়ে সম্প্রচার স্বত্ব পেয়েছিলেন নাসের।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে দুজনের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র গঠন করেছে সুইস অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস।
এ
নিয়ে বিব্রত ইউরোপিয়ান ফুটবল ফেডারেশন (উয়েফা)। কেন? এ সংস্থাটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন নাসের।
পিএসজির প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি উয়েফার নির্বাহী কমিটির সদস্য।
সংগত কারণেই নির্বাহী কমিটির কেউ ফিফার দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়লে বিব্রত হওয়ারই কথা উয়েফার।
সুইস অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানায়, বিশ্বকাপ ও ফিফা কনফেডারেশন্স কাপের একাধিক আসরে সম্প্রচার স্বত্ব নিয়ে দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় অভিযুক্ত হয়েছেন জেরোম ভালকে ও নাসের আল-খেলাইফি।
তাদের সঙ্গে যুক্ত আছেন তৃতীয় এক ব্যক্তি, যাকে ‘মিডিয়া
স্বত্ব খাতের ব্যবসায়ী’
হিসেবে উল্লেখ করেছে সুইস অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস।
পিএসজি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি কাতারি টেলিভিশন চ্যানেল বিইন স্পোর্টসেরও শীর্ষ কর্মকর্তা নাসের আল-খেলাইফি।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ভালকেকে অন্যায্য সুবিধা দিয়ে তিনি ফিফার বড় টুর্নামেন্টের সম্প্রচার স্বত্ব বাগিয়ে নিয়েছেন।
ইতালির সারদিনিয়া দ্বীপে একটি বাড়ি কেনার জন্য অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনের পথ খুঁজছিলেন ভালকে।
তিনি ৫ লাখ ইউরোর ‘ডাউন
পেমেন্ট’ও
দেন। তখনই
সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন নাসের।
ভালকের জমা দেয়া ৫ লাখ ইউরো ফেরত দেন নাসের এবং অন্য কোনো কোম্পানির মাধ্যমে বাড়িটি কিনে তিনি ভালকেকে বিনা ভাড়ায় থাকতে দেন।
ফিফার সেক্রেটারি হিসেবে বরখাস্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত ওই বাড়িতে ছিলেন সেপ ব্লাটারের ডান-হাত হিসেবে পরিচিত ভালকে।
এতে তার ৯ থেকে ১৮ লাখ ইউরো ভাড়া বেঁচে যায়।
বিনিময়ে তিনি এ কাতারিকে ফিফার বড় বড় টুর্নামেন্টের সম্প্রচার স্বত্বের কাজ পেতে সাহায্য করেন।
পিএসজি প্রেসিডেন্ট অবশ্য অভিযোগের কথা নাকচ করে দিয়েছেন।
ভালকেকে তার ক্ষমতা ব্যবহার করে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে যেতে প্ররোচিত করায় অভিযুক্ত হন নাসের।
যদিও ২০২৬ ও ২০৩০ সালের বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টের সম্প্রচার স্বত্বজনিত অনিয়ম নিয়ে যে অভিযোগ তোলা হয়েছিল, তা থেকে রেহাই মিলেছে নাসেরের।
এ-সংক্রান্ত
মামলা বাদ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগেরই আইনগত কোনো ভিত্তি নেই এবং তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হবে বলে দাবি করেন।
ভালকের কোম্পানি স্পোর্টইউনাইটেড এলএলসিকে ১২ লাখ ৫০ হাজার ইউরো ঘুষ প্রদানের অভিযোগ রয়েছে নাম প্রকাশ না করা ওই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে।
ওই
ব্যবসায়ীর মধ্যস্থতায় ভালকে নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করে ২০১৮ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যবর্তী অনেক ফিফা টুর্নামেন্টের সম্প্রচার স্বত্ব পাইয়ে দিয়েছেন ইতালি ও গ্রিসের বিভিন্ন কোম্পানিকে।
এর
বিনিময়ে বিপুল অর্থ ঘুষ হিসেবে নিয়েছেন তিনি।
এসব লেনদেনের কথা গোপন রেখেছেন ভালকে এবং পরে তদন্তের সময় একে ‘লোন’ হিসেবে দেখানো হয়েছে।
সুইস অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস সন্দেহ পোষণ করে, ফিফায় কাজের সুবিধা আদায় করে নেয়ার উদ্দেশ্যে ভালকেকে একটি দামি ঘড়িও উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন নাসের।
এদিকে ম্যানসিটির মতো পিএসজিও ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লে নিয়ম ভেঙেছে বলে গুঞ্জন রয়েছে, ঠিক তখনই উয়েফার নির্বাহী কমিটির সদস্য করা হলো ক্লাবটির প্রেসিডেন্টকে।
এ
মাসের শুরুর দিকেই তিনি সংস্থাটির সদস্য হন।
এএফপি ও ডেইলি মেইল