নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্বব্যাপী ২৪টিরও বেশি প্রদর্শনী ও সম্মেলন স্থগিত হয়েছে।
এতে ২ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের শিল্পে বড় আকারের ধাক্কা লেগেছে।
খবর সিএনবিসি।
গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে কভিড-১৯ রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাবের পর চীন ও হংকংয়ে সেবা সংকুচিত করে ফেলে যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো।
এতে বিভিন্ন বাণিজ্য মেলা ও সম্মেলন বাতিল বা স্থগিত করতে হয়।
একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সম্মেলনে অংশ নিতে নির্বাহীদের নিষেধ করে করপোরেশনগুলো।
দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসে এ পর্যন্ত ৭৬ হাজার আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ২ হাজার ২০০-এরও বেশি মানুষ।
মোবাইল ফোন প্রযুক্তি নিয়ে বৃহত্তম প্রদর্শনী মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসের আয়োজকরা ১২ ফেব্রুয়ারি মেলাটি স্থগিতের ঘোষণা দেন।
স্পেনের বার্সেলোনায় আয়োজিত হতে যাওয়া মেলাটি দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের আগে বন্ধের ঘোষণা এল।
মারাত্মক করোনাভাইরাসে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা আক্রান্ত হতে পারে—এ শঙ্কায় ইভেন্টগুলো বাতিল হচ্ছে।
গত সপ্তাহে ফেসবুকও তাদের বার্ষিক সম্মেলন স্থগিত ঘোষণা করে।
ভাইরাস নিয়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আগামী ৯-১২ মার্চ সানফ্রান্সিসকোয় গ্লোবাল মার্কেটিং সামিট বাতিল হলো।
সম্মেলনটিতে চার হাজার অংশগ্রহণকারী থাকার কথা ছিল।
গত
বৃহস্পতিবার সোস্যাল মিডিয়া কোম্পানিটি আরো জানায়, আগামী মাসে সানফ্রান্সিসকোয় আয়োজিত হতে যাওয়া গেম ডেভেলপার কনফারেন্সটিও বাতিল হচ্ছে।
কভিড-১৯-এর বিস্তার ঠেকাতে এপ্রিলের শেষ দিকে আয়োজিত হওয়া বেইজিং অটো শোও বাতিল হচ্ছে।
আয়োজকদের ওয়েবসাইটের বরাতে জানা যায় এ তথ্যটি।
আগামী ২৬ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সাংহাই ফ্যাশন উইক গত সপ্তাহে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এতে ১ হাজার ২০০-এরও বেশি ফ্যাশন ব্র্যান্ড অংশগ্রহণ করার কথা ছিল।
বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন বাণিজ্য মেলা ও সম্মেলন বাতিলের বিষয়টি হোটেল, এয়ারলাইনস, বিনোদন, বিপণন, রেস্টুরেন্ট ও অন্যান্য শিল্পে প্রভাব ফেলছে।
সেন্টার ফর এক্সিবিশন ইন্ডাস্ট্রি রিসার্চের প্রধান নির্বাহী
কর্মকর্তা (সিইও) ক্যাথে ব্রেডেন বলেন, চলতি বছরান্তের আগে আমরা এর আর্থিক প্রভাব সম্পর্কে জানতে পারব না, তবে এটা অনেক বড় অংকের হতে বাধ্য।
ইভেন্টস ইন্ডাস্ট্রি কাউন্সিল ও অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের সর্বশেষ গবেষণায় জানা গেছে, ২০১৭ সালে এ শিল্পে ২ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার আয় হয়েছিল।
বৈশ্বিক জিডিপিতে এ খাতের অবদান ছিল ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার।
২০১৭ সালে এ খাতে বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৬০ লাখ মানুষ কর্মরত ছিলেন।
ব্রেডেন বলেন, বিভিন্ন বাণিজ্য মেলা ও প্রদর্শনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাণকেন্দ্র হিসেবে দাঁড়ানো চীনের ‘অর্থনৈতিক
চালিকাশক্তি’
হিসেবে কাজ করত এ শিল্প খাতটি।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বাণিজ্য মেলা ও সম্মেলন স্থগিত করা জরুরি হয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন আয়োজকরা।
এমনকি কিছু কনভেনশন সেন্টার অস্থায়ী হাসপাতালে রূপান্তরিত হয়েছে।
নতুন কোনো তারিখ ঘোষণা থেকে বিরত থাকার পেছনেও আর্থিক বিষয়গুলো কাজ করছে বলে মনে করেন ব্রেডেন।
কারণ কাঙ্ক্ষিত ভেনু পছন্দের সময় না-ও পাওয়া যেতে পারে এবং এতে তাদের অনেক লোকসান হতে পারে।
এদিকে করোনাভাইরাসের হুমকি সব আয়োজকের দমিত করতে পারেনি।
গত
সপ্তাহে নির্ধারিত সময়েই সিঙ্গাপুর এয়ার শো আয়োজিত হয়।
অবশ্য সেখানে পেন্টাগনের অল্পসংখ্যক প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেছেন এবং মার্কিন প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিনের কোনো প্রতিনিধিই সেখানে অংশ নেননি।
অ্যারোস্পেস ও প্রতিরক্ষা শিল্পের এ এয়ার শোতে আয়োজকরা কিছু কঠোর বিধিনিষেধ অনুসরণ করেন।
এর
মধ্যে একটি ছিল অংশগ্রহণকারীরা কারো সংস্পর্শে আসবেন না এবং হ্যান্ডশেক করবেন না।
কিন্তু অন্য আয়োজকরা এ পথ না মাড়িয়ে নিরাপত্তার স্বার্থে আসন্ন অনুষ্ঠানগুলো বাতিলের বা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।