আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ১ হাজার কোটি টাকা
আগামীকাল বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি)
পরিশোধ করবে গ্রামীণফোন। গতকাল এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে
দেশের শীর্ষ সেলফোন অপারেটরটি। গত বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানটির রিভিউ আবেদনের শুনানি
শেষে আগামী সোমবারের মধ্যে ১ হাজার কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।
বিবৃতিতে বলা হয়, গ্রামীণফোন বাংলাদেশের আইনি পদ্ধতিকে সম্মান
করে। তবে কোম্পানি ও এর ব্যবস্থাপনার ওপর বিটিআরসি যে চাপ প্রয়োগ করেছে, সে বিষয়ে আদালতের সুরক্ষা
প্রত্যাশা করছে গ্রামীণফোন। অনাপত্তিপত্র
(এনওসি)
প্রদান বন্ধ,
লাইসেন্স বাতিলে কারণ দর্শানোর নোটিস, নম্বর সিরিজ পুনর্ব্যবহারের
সুযোগ বন্ধ ও প্রশাসক নিয়োগের হুমকির মতো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বিটিআরসি। এসব
কারণে গ্রাহক ও ব্যবসায়িক অংশীদারদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিনিয়োগকারীদের
আগ্রহকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এসব পদক্ষেপ।
বিটিআরসির নিরীক্ষা দাবির বৈধতা নিয়ে আবারো
প্রশ্ন তুলে গ্রামীণফোন বিবৃতিতে বলেছে,
গ্রাহক,
ব্যবসায়িক অংশীদার ও শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষায় এ বিষয়টির
একটি সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ সমাধানের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনে গ্রামীণফোন আশা করছে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়িক
কার্যক্রম কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই পরিচালনা করা সম্ভব হবে। গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা
দিতে এটি প্রয়োজন।
গত বছরের ২৪ নভেম্বর বিটিআরসির নিরীক্ষা দাবির
১২ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ২ হাজার কোটি টাকা তিন মাসের মধ্যে বিটিআরসিকে পরিশোধ
করতে সময় বেঁধে দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এ আদেশের ওপর গত ২৬ জানুয়ারি রিভিউ পিটিশন
দাখিল করে গ্রামীণফোন। বৃহস্পতিবার এ আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে
আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ১ হাজার কোটি টাকা পরিশোধে গ্রামীণফোনকে নির্দেশ দেন
আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে সোমবার রিভিউ আবেদনের বিষয়ে আদেশের দিন ধার্য করেন আদালত।
বিটিআরসির দাবি অনুযায়ী, নিরীক্ষা আপত্তিতে
গ্রামীণফোনের কাছে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ও আরেক সেলফোন অপারেটর রবি
আজিয়াটার কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে সরকারের। নিরীক্ষা আপত্তিতে
গ্রামীণফোনের কাছে দাবি করা সাড়ে ১২ হাজার কোটির মধ্যে বিটিআরসির পাওনা ৮ হাজার
৪৯৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে মূল পাওনা ২ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা ও বাকি ৬ হাজার ১৯৪ কোটি
টাকা বিলম্ব ফি ও সুদ। এর বাইরে ৪ হাজার ৮৬ কোটি টাকা পাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
গত বছরের ১৭ অক্টোবর বিটিআরসির নিরীক্ষা আপত্তি
দাবির ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। বিটিআরসি লিভ টু আপিল করলে আপিল
বিভাগ গ্রামীণফোনকে ২ হাজার কোটি টাকা দিতে নির্দেশ দেন। আপিল বিভাগের আদেশের
বিরুদ্ধে গ্রামীণফোন গত ২৬ জানুয়ারি রিভিউ পিটিশন দাখিল করে। এতে ২ হাজার কোটি
টাকার পরিবর্তে ৫৭৫ কোটি টাকা দেয়ার অনুমতি চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন জানায়
গ্রামীণফোন। নিরীক্ষা দাবির মূল পাওনার ২৫ শতাংশ হিসেবে প্রায় ৫৭৫ কোটি টাকা জমা
দিতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। আর আদালতের বাইরে আলোচনার অংশ হিসেবে গত বুধবার বিটিআরসিকে
১০০ কোটি টাকা দেয়ার প্রস্তাব দিলেও তা প্রত্যাখ্যান করেছে সংস্থাটি।