চীন থেকে কাঁচামাল আমদানি শুরু হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পোশাক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান কেলভিন ক্লেইনের জন্য পণ্য তৈরি ও রফতানি করে বাংলাদেশের অনন্ত গ্রুপ। ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী কাঁচামাল সংগ্রহ করার কথা ছিল চীন থেকে। পরবর্তী সময়ে নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে চীন থেকে কাঁচামাল আমদানির এ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। তবে সম্প্রতি চীন থেকে চালানটির আমদানি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

খাতসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পোশাক শিল্পের ওভেন পণ্য প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের অধিকাংশই আমদানি হয় চীন থেকে। ওভেন পণ্যের কাঁচামাল হিসেবে চীন থেকে বছরজুড়েই কাপড় আমদানি হয়। তবে এবার চীনে নতুন বছরের ছুটি চলাকালে নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। প্রাণহানির ব্যাপকতায় সরকারি হস্তক্ষেপে দীর্ঘায়িত হয় ছুটি। স্থগিত হয়ে যায় দেশটি থেকে সব ধরনের আমদানি কার্যক্রম।

তিন দফা ছুটি পেছানোর পর চীনের পণ্য সরবরাহকারীরা বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করেছে। বাংলাদেশের কারখানা মালিকদের চাহিদা অনুযায়ী কাপড় রফতানি কার্যক্রম শুরু করেছে তারা।

বিকেএমইর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, ২০ ফেব্রুয়ারি বেশকিছু কারখানা চালু হয়েছে। আশা করছি, দ্রুতই আমদানি কার্যক্রমে গতি আসবে।

তবে করোনাভাইরাসের প্রভাবে এরই মধ্যে পণ্য জাহাজীকরণ এক সপ্তাহ থেকে এক মাস পর্যন্ত বিলম্বিত হয়েছে। ফলে সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ার মাশুল গুনতে হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন পোশাক খাতসংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে বিজিএমইএ পরিচালক অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহির বণিক বার্তাকে বলেন, ছুটি শেষে প্রথমে ৭ ফেব্রুয়ারি চীনের দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা ছিল। পরে তা ১৬ তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কাপড় সরবরাহকারীরা এখন আমাদের জন্য পণ্য জাহাজীকরণ করবেন বলে জানিয়েছেন। এরই মধ্যে আমাদের চাহিদা অনুযায়ী কাঁচামালের একটি চালান জাহাজীকরণ হয়েছে।

তিনি বলেন, কাঁচামাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে তাদের উত্পাদনশীলতা ২০ শতাংশের মতো কমে যাবে। কারণ কারখানার শ্রমিকদের কোয়ারান্টাইন প্রক্রিয়া শেষ হলেই তাদের কাজে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হবে। এ প্রক্রিয়াতেই বাণিজ্যিক কার্যক্রম অনেকটা বিলম্বিত হবে। এর সুযোগটা নেবে পোশাক পণ্যের ক্রেতারা।

বাংলাদেশের রফতানির ৮৪ শতাংশই হয় তৈরি পোশাক। তবে ওভেন ও নিট পোশাক পণ্যের কাঁচামালের উত্স হিসেবে স্থানীয় উত্পাদন সক্ষমতায় ভিন্নতা রয়েছে। নিট পণ্যের প্রয়োজনীয় সুতাসহ অন্যান্য কাঁচামালের ৮৫-৯০ শতাংশই স্থানীয়ভাবে সরবরাহের সক্ষমতা আছে। কিন্তু ওভেন পণ্যের কাপড়ের স্থানীয় উত্পাদন সক্ষমতা মোট চাহিদার ৩৫-৪০ শতাংশ। ফলে ওভেন পণ্যের কাঁচামালের অধিকাংশই আমদানি হয়, আর তা হয় মূলত চীন থেকে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে তৈরি হওয়া পরিস্থিতিতে চীন থেকে আসা কাঁচামাল নিয়ে সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে ওভেন পোশাক রফতানিকারকদের।

বিজিএমইএ সহসভাপতি ফয়সাল সামাদ বণিক বার্তাকে বলেন, চীন থেকে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পুরোদমে সচল হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হতে আরো প্রায় এক সপ্তাহ সময় প্রয়োজন। যদিও বিলম্বের পর শুরু হবে এমন বাণিজ্যিক কার্যক্রমসংক্রান্ত নথি সম্পর্কে বিজিএমইএকে অবহিত করতে সদস্যদের বলা হয়েছে। আমদানি কার্যক্রম মসৃণ করতে সংগঠনের পক্ষ থেকে সহায়তা দেয়া হবে। একটা চায়না ডেস্কও চালু করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আমদানি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় ছিল ৫ হাজার ২১৮ কোটি ডলার। এর ২৬ শতাংশ বা ১ হাজার ৩৬৩ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি হয়েছে চীন থেকে। দেশটি থেকে আসা পণ্যের ১৬ শতাংশ হলো কটন। ম্যান মেড স্ট্যাপল ফাইবার আসে সাড়ে ৫ শতাংশ। একই হারে আসে নিটেড অর ক্রোশেটেড ফ্যাব্রিকস। ম্যান মেড ফিলামেন্ট আসে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ ও স্পেশাল ওভেন ফ্যাব্রিক আমদানি হয় ১ দশমিক ৩ শতাংশ। এছাড়া আমদানি হয় ডায়িং কারখানার কেমিক্যাল।

বিজিএমইএ সহসভাপতি এমএ রহিম বণিক বার্তাকে বলেন, চীন থেকে কাঁচামাল আমদানিতে অনেকেরই বিলম্ব হচ্ছে বলে শুনেছি। আশা করছি দ্রুতই বাণিজ্যিক কার্যক্রমে গতি ফিরে আসবে। আগামী মৌসুমে পুরোটা না হলেও আংশিকভাবে সাপ্লাই চেইন কিছুটা বিঘ্নিত হবে। কাঁচামালের শিপমেন্ট তারিখ পিছিয়ে যাওয়ায় পোশাকের ক্রেতারা ডিসকাউন্ট বা আকাশপথে পণ্য চাইতে পারেন। এ ধরনের পরিস্থিতি বিবেচনায় নেয়া উচিত হলেও ক্রেতারা সবসময়ই সুযোগ কাজে লাগাতে চান এবং তারা তা করবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন