চীনে কর্মীদের বেতন দিতে পারছে না, এমন বেসরকারি কোম্পানির সংখ্যা বাড়ছেই। নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণজনিত সংকটে কোম্পানিগুলো তাদের কর্মীদের বেতন কর্তনের পাশাপাশি পে-চেক দিতেও দেরি করছে। এরই মধ্যে পুরোপুরি বেতন দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে বহু প্রতিষ্ঠান। খবর ব্লুমবার্গ
ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চীনা কর্তৃপক্ষ ও বড় কোম্পানিগুলো তাদের কর্মীদেরকে ঘরে অবস্থানের জন্য উৎসাহিত করছে।
দেশটির শপিংমল ও রেস্তোরাঁগুলো এখন জনশূন্য; বন্ধ রয়েছে বিনোদন কেন্দ্র এবং সিনেমা হল।
খুব প্রয়োজন না হলে ভ্রমণও প্রায় নিষিদ্ধই বলা চলে।
এসব পদক্ষেপ সংক্রমণ প্রতিহত করার জন্য ইতিবাচক হলেও, দেশটির ব্যবসা ও অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
হাংঝোউয়ে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে একটি কোডিং ও রোবোটিকসের একটি স্কুল।
এর
ফলে স্কুলটির কর্মচারীদের বেতন কম দেয়া হবে ৩০-৫০ শতাংশ।
জুলাই থেকে বন্ধ রয়েছে দ্য লায়নসগেট এন্টারটেইনমেন্ট ওয়ার্ল্ড থিম পার্ক।
পার্কটির কর্মচারীদের বলা হয়েছে এ সময় তাদের বৈতনিক ছুটি কাটা হবে।
একই সঙ্গে তারা যেন অবৈতনিক ছুটির জন্যও প্রস্তুত থাকে।
হংকংয়ের একটি নামকরা রেস্তোরাঁর শেফ জেমস লাম বলেন, এক সপ্তাহের জন্য হলেও অবৈতনিক ছুটি খৃবই পীড়াদায়ক।
অথচ তাকে তার কর্মস্থল থেকে আপাতত ছুটিতে থাকতে বলা হয়েছে।
এ
অবস্থায় চলতি মাসের ব্যয় বহনে পর্যাপ্ত অর্থের ঘাটতিতে পড়েছের ৩২ বছর বয়সী এ শেফ।
চীনজুড়েই বিভিন্ন কোম্পানি তাদের কর্মীদের আর বেতন পরিশোধ করতে পারছে না।
তারা বলছে, তাদের কাছে বেতন পরিশোধের মতো অর্থ অবশিষ্ট নেই।
অনেক প্রতিষ্ঠানই নভেল করোনাভাইরাসের কারণে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে, এমন কর্মীদের পুরো বেতন দিতে রাজি হচ্ছে না।
ঠিক কত মানুষ ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে তাদের বেতন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
তবে ৯ হাজার ৫০০ কর্মীর ওপর পরিচালিত চীনা রিক্রুটমেন্ট ওয়েবসাইট জাওপিনের এক জরিপ বলছে, জরিপে অংশ নেয়া এক-তৃতীয়াংশই বেতন কর্তন কিংবা না পাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
এছাড়া নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বেতন না বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে অনেক কোম্পানি।
এর
মধ্য দিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির এ দেশটিতে বেরকারি খাতের বর্তমান টালমাটাল অবস্থা প্রকট হচ্ছে।
নভেল করোনাভাইরাসের কারণে চীনে যে শুধু মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিয়েছে তা নয়, একই সঙ্গে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে চাকরি হারানো ও বেতনপ্রাপ্তির অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে বহু মানুষ।
এ বিষয়ে কমার্শিয়াল ল ইন এ মিনিট বইয়ের লেখক এডগার চোই বলেন, আইন অনুযায়ী বেতন কেটে ন্যূনতম মজুরিতে নামিয়ে আনার আগে ফেব্রুয়ারিতে কোম্পানিগুলোকে পূর্ণ বেতন-চক্র সম্পূর্ণ করতে হবে।
কোনো কোম্পানির আয়ে ঘাটতি দেখা দিলে তারা কর্মীদের বেতন পরিশোধে বিলম্ব করতে পারে, তবে শেষ পর্যন্ত তাদেরকে তা পরিশোধ করতে হবে।
কিন্তু তিনি শুনেছেন, চীনে কয়েক হাজার বিদেশী কর্মীর বেতন এ মাসেই কেটে অর্ধেক করা হয়েছে।
অনেক ক্ষেত্রে আটকে দেয়া হয়েছে পুরো বেতন, যা সম্পূর্ণ বেআইনি।
চোই বলেন, এসব কর্মীর অনেকেই চীনা ভাষা জানেন না।
ফলে অধিকর্তারা তাদেরকে যা বলছেন, তাদের সেটাই মেনে নিতে হচ্ছে।
চীনের ফুজৌ শহরের এক আবাসিক হোটেলের ব্যবস্থাপক রবার্ট জ্যাং বলেন, তার হোটেলের ১০০ কক্ষের প্রায় সবই বর্তমানে ফাঁকা থাকছে।
এ
অবস্থায় সাময়িক ছুটিতে রয়েছে হোটেলের দুই-তৃতীয়াংশ কর্মী।
তাদেরকে কিছু বেতন দেয়া হচ্ছে বটে, তবে তা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কম।