অ্যান্টিবায়োটিকে শিশুর জন্মগত ত্রুটি!

ফিচার ডেস্ক

গর্ভাবস্থা একজন নারীর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ মুহূর্ত যেমন অমূল্য, তেমনি সময়েই একজন গর্ভবতী মাকে থাকতে হয় অধিক যত্নে বিশেষ যত্নের পাশাপাশি অনেক বেশি সতর্কও থাকতে হয় বলা হয়, গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস মায়েদের জন্য একটু ঝুঁকিপূর্ণ কারণ সময় ভ্রূণের বিষয়ে অনেক সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়

গর্ভকালীন একজন মা ছোটখাটো নানা শারীরিক সমস্যায় ভোগেন অ্যালার্জি, সর্দি-কাশি, ব্যথা রকম বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয় সময় চিকিৎসকরা তাদের সাধারণ কিছু অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন এসব অ্যান্টিবায়োটিক সাধারণ হলেও এগুলো ক্ষতিকর শিশু জন্মের সময় এমনকি জন্মের পরেও এগুলো শিশুর ক্ষতি করে থাকে সম্প্রতি মেডিকেল জার্নাল বিএমজেতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় এমনটাই বলা হয়েছে

এই সমীক্ষায় দেখা গেছে, পেনিসিলিন ব্যবহার করা মায়েদের তুলনায় গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে ম্যাক্রোলাইডজাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা মায়েদের শিশুদের মধ্যে জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি বেশি

ম্যাক্রোলাইড অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে রয়েছে এরিথ্রোমাইসিন, ক্লেরিথ্রোমাইসিন এজিথ্রোমাইসিন এসব ওষুধ সাধারণত নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, মূত্র, ত্বক যৌন সংক্রমণজনিত রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহূত হয় গবেষণা অনুযায়ী, অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে ম্যাক্রোলাইডজাতীয় ওষুধগুলো পশ্চিমা দেশে বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে

গবেষণাটি ১৯৯০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যে জন্মগ্রহণকারী লাখ হাজার ৬৫০ জন শিশু এবং পেনিসিলিন বা ম্যাক্রোলাইড ব্যবহারকারী মায়েদের কাছ থেকে জন্ম নেয়া শিশুদের ওপর ডাটা বিশ্লেষণ করে করা হয়েছে

গবেষকরা এসব শিশুর জন্মকালীন ত্রুটি এবং জন্মের পর নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডারগুলো অনুসন্ধানের চেষ্টা করেন এবং ফলাফলে বেরিয়ে আসে গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে ম্যাক্রোলাইডজাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারকারী মায়েদের জন্ম নেয়া শিশুদের এক হাজার জনের মধ্যে ২৮ জনেরই বড় ধরনের ত্রুটি রয়েছে অন্যদিকে পেনিসিলিন ব্যবহারকারী মায়েদের থেকে জন্ম নেয়া শিশুদের মধ্যে ঝুঁকি কিছুটা কম মোট এক হাজার শিশুর মধ্যে ১৮ জনের ধরনের ত্রুটি রয়েছে বড় ধরনের ত্রুটির মধ্যে হূদরোগজনিত ত্রুটি বেশি

গবেষণার অন্যতম একজন গবেষক ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক রুথ গিলবার্ট তিনি বলেছেন, গবেষণাটি ছোট হলেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই গবেষণার ভিত্তিতে গর্ভবতী নারী এবং তাদের চিকিৎসকদের সংক্রমণের ধরনের ওপর নির্ভর করে বিকল্প ওষুধ ব্যবহারের পথ খুঁজে নিতে হবে তবে একেবারে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ না করার মধ্যেও ঝুঁকি রয়েছে বিষয়টি নিয়ে গবেষক বলেন, যদি কোনো গর্ভবতী নারীর সংক্রমণ ঘটে, তাহলে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ কারণ সংক্রমণ অনাগত শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে


এর আগে ২০০৫ সালে সুইডেন গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে ম্যাক্রোলাইড এরিথ্রোমাইসিন ব্যবহারের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছিল কারণ একটি প্রতিবেদনে ওষুধ এবং হার্টের ত্রুটির মধ্যকার সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল

সম্প্রতি যুক্তরাজ্য যুক্তরাষ্ট্র প্রাপ্তবয়স্কদের হূদরোগ-সংক্রান্ত জটিলতার ঝুঁঁকি ছাড়া অ্যাজিথ্রোমাইসিন   ক্লেরিথ্রোমাইসিন ব্যবহারের বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়েছে গবেষণার আগে কানাডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস ম্যাক্রোলাইডসহ সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে গর্ভপাতের ঝুঁকির সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল

কাজেই গর্ভবতী মায়েদের জন্য প্রেসক্রিপশন করার আগে চিকিৎসকদের অবশ্যই বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে এবং সতর্ক থাকতে হবে

 

সূত্র: সিএনএন

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন