২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ১ হাজার কোটি টাকা পরিশোধে
গ্রামীণফোনকে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। গতকাল প্রতিষ্ঠানটির রিভিউ পিটিশনের
শুনানি শেষে এ আদেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। একই সঙ্গে
সোমবার রিভিউ আবেদনের বিষয়ে আদেশের দিন ধার্য করেছেন আদালত।
গত বছরের ২৪ নভেম্বর বিটিআরসির নিরীক্ষা দাবির ১২
হাজার কোটি টাকার মধ্যে ২ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে সেলফোন সেবাদাতা
প্রতিষ্ঠানটিকে তিন মাসের সময় বেঁধে দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এ আদেশের ওপর গত ২৬
জানুয়ারি রিভিউ পিটিশন দাখিল করে গ্রামীণফোন। গতকাল এ আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
আদালতে গ্রামীণফোনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এএম
আমিন উদ্দিন ও মেহেদী হাসান চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাটর্নি
জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। আর বিটিআরসির পক্ষে
আদালতে ছিলেন আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই রাকিব।
এএম আমিন উদ্দিন বলেন, বিটিআরসির মূল দাবি ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এ নিয়ে মামলা হয়েছে। ২ হাজার কোটি টাকা দেয়া হলে ৮৭ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করা হচ্ছে। বিটিআরসিকে ৫০০ কোটি টাকা প্রদানের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ২ হাজার কোটি টাকার কম নিলে আদালত অবমাননা হবে উল্লেখ করে তারা সেই টাকা নেয়নি। ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় আছে। এর আগে আবেদনটি করা হয়েছে। আবেদনে মূল দাবির ২৫ শতাংশ পরিশোধ করার আদেশ দিতে আদালতের প্রতি আর্জি জানানো হয়েছে।
এ নিয়ে শুনানিতে আদালত বলেন, ‘আমরা বললাম ২ হাজার কোটি টাকা দিতে। আপনারা বলছেন ৫০০ কোটি টাকার কথা। আপনারা
আপিল বিভাগের আদেশ উপেক্ষা করছেন?’ গ্রামীণফোনের
আইনজীবী তখন অর্থ পরিশোধের জন্য সময় বাড়ানো ও কিস্তিতে অর্থ পরিশোধের আর্জি জানান।
এ সময় আদালত আগামী সোমবারের মধ্যে ১ হাজার কোটি টাকা পরিশোধে গ্রামীণফোনকে নির্দেশ
দেন।
আদালতের নির্দেশনার পর এ বিষয়ে জানতে চাইলে
বিটিআরসি চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, গ্রামীণফোন সব জায়গায় গেছে। আর কোনো জায়গা নেই। আমার মনে হয়, তারা টাকা দিয়ে দেবে। হয়তো রোববার দেবে। আজ তো ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেছে। আদালত
পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন, ১ হাজার কোটি টাকা। এর
নিচে নেয়ার সুযোগ নেই। সোমবার কোর্ট বাকি টাকার জন্য যে আদেশ দেবেন, আমরা সেটাই মানব। বল এখন কোর্টের কাছে। গ্রামীণফোন টাকা না দিলে আইনি ব্যবস্থা
নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে এক বিবৃতিতে গতকাল গ্রামীণফোন জানিয়েছে, ‘আপিল বিভাগের আদেশের বিষয়ে আমরা অবগত। রিভিউ পিটিশনের মাধ্যমে আমরা প্রত্যাশিত
ফলাফল পাইনি।’
বিটিআরসির দাবি অনুযায়ী, নিরীক্ষা আপত্তিতে গ্রামীণফোনের কাছে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ও আরেক
সেলফোন অপারেটর রবি আজিয়াটার কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে সরকারের।
নিরীক্ষা আপত্তিতে গ্রামীণফোনের কাছে দাবি করা সাড়ে ১২ হাজার কোটির মধ্যে
বিটিআরসির পাওনা ৮ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে মূল পাওনা ২ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা
ও বাকি ৬ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা বিলম্ব ফি ও সুদ। এর বাইরে ৪ হাজার ৮৬ কোটি টাকা
পাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
গত বছরের ১৭ অক্টোবর বিটিআরসির নিরীক্ষা আপত্তি
দাবির ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। বিটিআরসি লিভ টু আপিল করলে আপিল
বিভাগ গ্রামীণফোনকে ২ হাজার কোটি টাকা দিতে নির্দেশ দেন। আপিল বিভাগের আদেশের
বিরুদ্ধে গ্রামীণফোন গত ২৬ জানুয়ারি রিভিউ পিটিশন দাখিল করে। এতে ২ হাজার কোটি
টাকার পরিবর্তে ৫৭৫ কোটি টাকা দেয়ার অনুমতি চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছে
গ্রামীণফোন। নিরীক্ষা দাবির মূল পাওনার ২৫ শতাংশ হিসেবে প্রায় ৫৭৫ কোটি টাকা জমা
দিতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। আর আদালতের বাইরে আলোচনার অংশ হিসেবে গত বুধবার বিটিআরসিকে
১০০ কোটি টাকা দেয়ার প্রস্তাব দিলেও তা প্রত্যাখ্যান করে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।