জংলাপথে তোজেংমা

মুহাম্মদ জাভেদ হাকিম

নাম তার তোজেংমা ঢাকা থেকে রাতের বাসে ছুটি প্রকৃতির রাজা খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা ভোর সাড়ে ৪টায় পৌঁছি গেস্ট হাউজের রুমে গিয়ে গাইডের অপেক্ষায় কিছুটা সময় বিশ্রাম অতঃপর সকাল ৯টায় রুম থেকে বের হয়ে নাশতা শেষে বাইকে ছুটি আলমগীর টিলা মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যাই এবার ভরসা দুই পা সকাল ১০টায় হাঁটা শুরু

উঁচু-নিচু টিলা, পাহাড়-ঝিরি-ঝোপঝাড়, জঙ্গল দিয়ে শুধু হাঁটছি গাইড নিজেও ঠিকমতো চেনেন না শুধু লোকেশননির্ভর করে এমন নিঝুম-বুনো পাহাড়ি জংলা পথে হাইকিং, ট্র্যাকিং সত্যিই অন্য রকম রোমাঞ্চকর অনুভূতি নৈঃশব্দের বুনো পরিবেশে একটা সময় পথ হারিয়ে ফেলি ভুল পথে উঠে যাই উঁচু এক পাহাড়ে কী আর করা, নামতে হবে আবারো তবে বাড়তি পাওনা চূড়া থেকে দেখা চারপাশের অসম্ভব সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মনের আনন্দে দুপুর অব্দি হেঁটেই চলছিযেথায় হারিয়েছিলাম পথ, সেথায় এসে এবার ঝিরিপথ ধরি দুই পাশে গভীর জঙ্গল, সূর্যের রশ্মিও হার মেনেছে সেই রকম পথেই এগিয়ে যাই ঝিরির বয়ে যাওয়া পানির তীব্রতাই বলে দেয় আর বেশি দূরে নয় লুকিয়ে থাকা বুনো সৌন্দর্য তোজেংমা ঝরনা ঠিকই আধা ঘণ্টার মধ্যেই রিমঝিম ছন্দ তোলা পানির শব্দ ভেসে আসে কানে

পানির উৎস ধরে এগোতেই সামনে পড়ে ইয়া উঁচু এক পাহাড় প্রকৃতির আপন খেয়ালেই পাহাড়টি দুই ভাগ হয়ে সেই কল্পকাহিনীর আলিবাবার চিচিং ফাঁক দুর্গের রূপ ধারণ করে আছে এসবই প্রকৃতির লীলাখেলা পিচ্ছিল পাথর টপকিয়ে সুড়ঙ্গের ভেতরে ঢুকতেই চোখ ওঠে কপালে যেন সত্যি সত্যি বাস্তবের ধন-দৌলতের দুর্গ! ভাগ হয়ে যাওয়া দুই পাহাড়ের দুই পাশ থেকে গড়িয়ে পড়ছে অবিরাম পানির ধারা নির্জনতায় জংলা পরিবেশে গুহা আকৃতির দুই পাহাড়ের ওপর থেকে দুটো ঝরনার সফেদ সাদা পানি তীব্র গতিতে ছুটে এসে আলিঙ্গন করছে একই বিন্দুতে পানির ক্ষিপ্রতায় সৃষ্ট প্রাকৃতিক বাথটাবে সাঁতার কাটা যাবে অনায়াসে ঝরনা দুটোর উচ্চতা খুব বেশি নয়, তবে তোজেংমার রয়েছে ভিন্ন রকম বৈশিষ্ট্য আর অদ্ভুত আকৃতির নজরকাড়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঝরনার আছড়ে পড়া পানির তীব্রতাও বেশ

আশপাশে নেই কোনো বসতি, তাই তোজেংমা নামের আভিধানিক অর্থ কী, তা এবারের জন্য আড়ালেই রয়ে গেল অনিন্দ্য সৌন্দর্যের নয়নাভিরাম প্রকৃতির মলাটে সাজানো রূপবতী-গুণবতী-লজ্জাবতী পাহাড়ের কোলে নিজেকে লুকিয়ে রাখা অসম্ভব ভালো লাগার তোজেংমার শুভ্র পানিতে ঘণ্টাখানেক ভিজে ফেরার পথ ধরি গুহামুখে এসে ভারাক্রান্ত হূদয়ে চিত্কার দিয়ে বলে উঠিবিদায় তোজেংমা, বিদায়

কীভাবে যাবেন: ঢাকার গাবতলী-ফকিরাপুল-সায়েদাবাদ থেকে দিনে-রাতে প্রতিদিন খাগড়াছড়ি দীঘিনালা বিভিন্ন পরিবহনের এসি, নন-এসি বাস ছেড়ে যায় দীঘিনালা বাজার থেকে মোটরবাইকে আলমগীর টিলা আলমগীর টিলা থেকে স্থানীয়দের সাহায্য নিন সারা দিনের জন্য হাজার টাকা দিলেই হবে তোজেংমা ঝরনা এখনো লোকচক্ষুর অন্তরালে, সুতরাং দলে অন্তত ছয়-সাতজন হলে ভালো হবে এর অবস্থান দুর্গমে, তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনো খাবার, স্যালাইন, পানি প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে রাখবেন

 

ছবি: দে-ছুট ভ্রমণ সংঘ

 মুহাম্মদ জাভেদ হাকিম

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন