একুশে পদক তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী

বণিক বার্তা অনলাইন

বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ২০ গুণী ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে এবছর একুশে পদক দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এক অনুষ্ঠানে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রাক্কালে এই বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির হাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এ বেসামরিক পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পদক প্রদান শেষে দেয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বাঙালি, আমাদের সংস্কৃতি চর্চা অব্যাহত থাকবে। আমাদের সাহিত্য সংস্কৃতি এটা যেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও বিস্তার লাভ করে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।’

প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন ভাষার জন্য ত্যাগের ইতিহাস জানবে সে আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আজকে স্বাধীন জাতি। প্রকৃতপক্ষে এই একুশ আমাদের শিখিয়েছে মাথা নত না করার, একুশ শিখিয়েছে আত্মমর্যাদাবোধ, এই একুশে রক্ত অক্ষরে লিখা হয়েছিল আমাদের স্বাধীনতা। আমাদের জন্য এই দিনটি অত্যন্ত গৌরবের আমরা চাই এই গৌরবের ইতিহাস প্রজন্মের পর প্রজন্ম মানুষ যেন জানে।

ভাষায় মর্যাদা সবসময় অক্ষুন্ন রাখার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ঘটনাচক্রে অনেক কারণে মানুষকে বাইরে থাকতে হয় তারপরেও ভাষার মর্যাদা সবসময় অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। জীবন জীবিকার জন্য, যেহেতু পৃথিবী এখন আর একটি দেশ নিয়ে চলতে পারে না, সারা বিশ্বকে নিয়ে চলতে হয়। অন্য ভাষা শেখার প্রয়োজনীয়তা আছে তাই বলে নিজের ভাষাকে ভুলে যাওয়া বা নিজের ভাষা বিচ্যুত হওয়া এটা আমাদের জন্য মোটেও ঠিক না।’

তিনি বলেন, আমাদের ভাষা কৃষ্টি আমাদের সংস্কৃতি জাতিসত্তা এর মর্যাদা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে পাশাপাশি বাঙালি জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলব। 

এরআগে, গত ৫ ফেব্রুয়ারি নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০২০ সালের একুশে পদক বিজয়ী হিসেবে ২০ ব্যক্তি এবং এক প্রতিষ্ঠানকে পদক প্রদানের তালিকা ঘোষণা করে।


পদকপ্রাপ্তরা হলেন- ভাষা আন্দোলনে মরহুম আমিনুল ইসলাম বাদশা (মরণোত্তর), শিল্পকলায় (সংগীত) বেগম ডালিয়া নওশিন, শঙ্কর রায় ও মিতা হক, শিল্পকলায় (নৃত্য) মো. গোলাম মোস্তফা খান, শিল্পকলায় (অভিনয়) এম এম মহসীন, শিল্পকলায় (চারুকলা) অধ্যাপক শিল্পী ড. ফরিদা জামান, মুক্তিযুদ্ধে মরহুম হাজি আক্তার সরদার (মরণোত্তর), মরহুম আব্দুল জব্বার (মরণোত্তর), মরহুম ডা. আ আ ম মেসবাহুল হক (বাচ্চু ডাক্তার) (মরণোত্তর), সাংবাদিকতায় জাফর ওয়াজেদ (আলী ওয়াজেদ জাফর), গবেষণায় ড. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ-ক্বারী আল্লামা সৈয়দ মোহাম্মদ ছাইফুর রহমান নিজামী শাহ, শিক্ষায় অধ্যাপক ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়া, অর্থনীতিতে অধ্যাপক ড. শামসুল আলম, সমাজসেবায় সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, ভাষা ও সাহিত্যে ড. নুরুন নবী, মরহুম সিকদার আমিনুল হক (মরণোত্তর) ও কবি,সহিত্যিক, মুক্তিযোদ্ধা বেগম নাজমুন নেসা পিয়ারি এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রসূতি মায়ের জীবন রক্ষায় সায়েবা’স কীটের উদ্ভাবক অধ্যাপক ডা. সায়েবা আখতার। পাশাপাশি ‘গবেষণা’য় একুশে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট।

পদক বিজয়ীরা প্রত্যেকে নিজ নিজ এবং মরণোত্তর পদক বিজয়ীদের পক্ষে তাদের ছেলে-মেয়েরা প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট’র পক্ষে পদক গ্রহণ করেন এর মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ।

বায়ান্ন’র একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের শহীদদের মহান আত্মত্যাগ স্মরণে সরকার প্রতি বছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এই পুরস্কার দিয়ে আসছে।

পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ৩ তোলা ওজনের ১৮ ক্যারেট সোনার তৈরি একটি স্বর্ণপদক, পুরস্কারের অর্থের চেক এবং একটি সম্মাননাপত্র প্রদান করা হয় ।

সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্বাগত বক্তৃতা করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বিজয়ীদের সাইটেশন পাঠ করেন।

মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, বিচারপতি, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনী প্রধান, সরকারের ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, শিল্পী, সাংবাদিকসহ বিশিষ্ট নাগরিকরাসহ, অতীতে একুশে পদক বিজয়ী, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও সংস্থার প্রধান এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন