চীন থেকে কাঁচামাল সরবরাহে ব্যাঘাত

দুর্যোগ সহায়তা তহবিলসহ ঋণ সুবিধা চায় বিজিএমইএ

বদরুল আলম

দেশের পোশাক শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের বড় উৎস চীন। দেশে বস্ত্র শিল্পের আমদানীকৃত কাঁচামালের ৪৬ শতাংশই আসে চীন থেকে। কভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ায় দেশটি থেকে কাঁচামাল সরবরাহ ব্যবস্থা এখন প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। সামনের দিনগুলোয় এ পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। পরিস্থিতি মোকাবেলায় দুর্যোগ সহায়তা তহবিলসহ ঋণ সুবিধা চাইছেন তারা।

পোশাক শিল্প প্রতিনিধিরা বলছেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চীন থেকে বাংলাদেশের মোট পণ্য আমদানি হয়েছে ১৩ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলারের। এর মধ্যে শুধু টেক্সটাইল ফাইবার ও টেক্সটাইল আর্টিকেলস ছিল ৫ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ডলারের। কাঁচামালের প্রধান সরবরাহকারী দেশটির চলমান পরিস্থিতি বাংলাদেশের উৎপাদনমুখী শিল্পের বাণিজ্য ও ব্যবসাকে বড় ধরনের দুর্যোগের মুখে ঠেলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন পোশাক শিল্পের মালিক প্রতিনিধিরা। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সহায়তা চেয়ে এরই মধ্যে অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর একটি চিঠি দিয়েছে পোশাক খাতের শিল্পোদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ। নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতি আরো দীর্ঘায়িত হলে দেশের পোশাক শিল্পের সরবরাহ ব্যবস্থা মারাত্মক দুর্দশার মধ্যে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে চিঠিতে।

অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্যোগ থেকে শিল্প সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চিঠিতে দুর্যোগ সহায়তা তহবিল, ঋণ গ্যারান্টি স্কিম ও ব্যাক-টু-ব্যাক ঋণপত্রের সংশোধনসংক্রান্ত সুবিধার দাবি জানানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরে চীন থেকে আগত জাহাজের সংখ্যা কমেছে উল্লেখ করে চিঠিতে এনবিআরের বরাত দিয়ে জানানো হয়, জানুয়ারিতে চীন থেকে আমদানি কমেছে ২১ শতাংশ। অন্যদিকে ১ থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশটি থেকে আমদানি ৩৭ শতাংশ কমেছে।

চিঠিতে আরো বলা হয়, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে বিলম্ব, রফতানি পণ্যের বিলম্বিত জাহাজীকরণ ও সরবরাহ, নগদ অর্থ সংকট ইত্যাদি বহুমুখী পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পূর্ব সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নেয়ার এখনই উপযুক্ত সময়।

এ বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, মরিয়া সময়ে প্রয়োজন পড়ে মরিয়া পদক্ষেপের। আমাদের অনুরোধ থাকবে প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নিয়ে সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের, যাতে করে খাতের অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে টিকে থাকা যায়। আমরা আশা করছি বাংলাদেশ ব্যাংক সার্বিক বিষয়টি পর্যালোচনা করে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

দুর্যোগ সহায়তা তহবিল প্রসঙ্গে চিঠিতে বিজিএমইএ বলেছে, বিকল্প উৎস থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ, আকাশপথে পণ্য পরিবহনে রফতানিকারক কারখানার অতিরিক্ত ব্যয় হতে পারে। বিলম্বিত জাহাজীকরণ বাবদ অতিরিক্ত ব্যয় ও উচ্চমূল্যে কাঁচামাল আমদানির ব্যয় নির্বাহে ক্রেতাদের সঙ্গে রফতানিকারকদের সমঝোতার সময় ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে ৩০ থেকে ৬০ দিন মেয়াদি ঋণসীমা দেয়া উচিত।

ঋণ গ্যারান্টি স্কিম প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, উদ্ভূত সংকট কাটিয়ে উঠতে দেরি হবে এমন প্রেক্ষাপটে  বিশেষ ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম বিবেচনায় নিতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো শিল্পের জন্য তাদের সহায়তা অব্যাহত রাখতে উৎসাহ পাবে।

ব্যাক-টু-ব্যাক ঋণপত্রের সংশোধন বিষয়ে বিজিএমইএ বলেছে, চীন থেকে পণ্য সরবরাহ দেরি হবে, এটা বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক দিকনির্দেশনা দিতে পারে, যা অনুসরণ করে তফসিলি ব্যাংকগুলো ব্যাক-টু-ব্যাক ঋণপত্রের ধারা সংশোধন করতে পারে। এতে করে রফতানি প্রত্যাবাসনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পণ্য সরবরাহকারীদের শর্তসাপেক্ষে অর্থ পরিশোধ সম্ভব হবে। 

এ বিষয়ে বিজিএমইএ সহসভাপতি ফয়সাল সামাদ বণিক বার্তাকে বলেন, চীন থেকে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পুরোদমে সচল হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হতে আরো প্রায় এক সপ্তাহ সময় অতিবাহিত হতে হবে। যদিও বিজিএমইএ সদস্যদের বলে দেয়া হয়েছে, বিলম্বের পর শুরু হবে এমন বাণিজ্যিক কার্যক্রমসংক্রান্ত নথির বিষয়গুলো আমাদের অবহিত করতে হবে। এ আমদানি কার্যক্রমগুলো মসৃণ রাখতে সংগঠন থেকে সহায়তা দেয়া হবে। একটি চায়না ডেস্কও চালু করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন