গ্রামীণফোন

২ হাজার কোটি টাকা পরিশোধের সময় শেষ হচ্ছে ২৩ ফেব্রুয়ারি

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিরীক্ষা দাবির পাওনা সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ২ হাজার কোটি টাকা তিন মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে গত ২৪ নভেম্বর গ্রামীণফোনকে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। নির্দেশনায় দেয়া সময়সীমা শেষ হচ্ছে ২৩ ফেব্রুয়ারি। গ্রামীণফোন রোববারের মধ্যে ওই অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে নিরীক্ষা আপত্তি দাবির ওপর হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ বাতিল হয়ে যাবে।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি আদালতের বাইরে সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণফোন। এর অংশ হিসেবে গতকাল ১০০ কোটি টাকা দিতে চেয়েছে কোম্পানিটি, যদিও তা প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)  আদালতের নির্দেশনার বাইরে সমঝোতার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

গতকাল বিকালে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গ্রামীণফোনের পরিচালক ও হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত বলেন, ‘বিটিআরসিকে ১০০ কোটি টাকা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছি। কিন্তু এ মুহূর্তে তারা তা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। এখনকার পরিস্থিতিতে তারা টাকা নিতে পারে না বলে আমাদের জানিয়েছে। তাদেরও নিশ্চয়ই এক ধরনের চিন্তাভাবনার বিষয় আছে। তবে আলোচনা এগিয়ে নিতে চাই আমরা। এর মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া যাবে বলে আমরা আশাবাদী। বিটিআরসির সঙ্গে আমাদের যে আলোচনাটা চলছে, সেটিকে আরো ত্বরান্বিত করতেই এ প্রস্তাব দেয়া হয়।

তিনি বলেন, পথ দুটো, একটা আইনি, আরেকটা আলোচনার মাধ্যমে। দুটো ভিন্ন বিষয়। একটার সঙ্গে আরেকটাকে মিলিয়ে ফেলা যাবে না। আদালতের মাধ্যমে যে নির্দেশনা পাওয়া যাবে, সেটার ভিত্তিতে এগোতে হবে। দেশের আদালতের প্রতি আস্থা রাখছি, বিশ্বাস রাখছি। তবে আলোচনাও এগিয়ে নিতে চাই আমরা। আলোচনার মাধ্যমে একটা ট্রান্সপারেন্ট প্রক্রিয়ায় দুই পক্ষ মিলে যদি একটা সমাধানে পৌঁছা যায়, সেটা দারুণ একটা বিষয় হবে। কিন্তু তার পরও যেহেতু আমরা স্থগিতাদেশের জন্য আদালতে গিয়েছি ও রিভিউ পিটিশন সাবমিট করেছি, তাই আদালত থেকে নির্দেশনা আসবে সেটির ওপর ভিত্তি করে আমাদের পরবর্তী সিদ্ধান্ত কী হবে, সেটা বুঝতে পারব।

গ্রামীণফোনের সমঝোতা চেষ্টার বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে বিটিআরসির জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (মিডিয়া উইং) মো. জাকির হোসেন খাঁন বলেন, গ্রামীণফোনের নিরীক্ষাসংশ্লিষ্ট বিষয়টি নিয়ে আদালতের একটি নির্দেশনা রয়েছে। ফলে বিটিআরসি ওই নির্দেশনার বাইরে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে না। কমিশন নির্দেশনা পালনে সচেষ্ট আছে।

এদিকে তিন মাসের মধ্যে ২ হাজার কোটি টাকা পরিশোধে আপিল বিভাগের দেয়া আদেশের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন দাখিল করে গ্রামীণফোন। গত ২৬ জানুয়ারি দাখিল করা ওই পিটিশনে ২ হাজার কোটি টাকার পরিবর্তে ৫৭৫ কোটি টাকা দেয়ার অনুমতি চেয়ে আবেদন জানিয়েছে সেলফোন অপারেটরটি। নিরীক্ষা দাবির মূল পাওনার ২৫ শতাংশ হিসেবে ৫৭৫ কোটি টাকা জমা দিতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। আজ বৃহস্পতিবার ওই রিভিউ আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা।

বিটিআরসির দাবি অনুযায়ী, নিরীক্ষা আপত্তিতে গ্রামীণফোনের কাছে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ও আরেক সেলফোন অপারেটর রবি আজিয়াটার কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে সরকারের। নিরীক্ষা আপত্তিতে গ্রামীণফোনের কাছে দাবি করা সাড়ে ১২ হাজার কোটির মধ্যে বিটিআরসির পাওনা ৮ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে মূল পাওনা ২ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা ও বাকি ৬ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা বিলম্ব ফি ও সুদ। এর বাইরে ৪ হাজার ৮৬ কোটি টাকা পাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)

উল্লেখ্য, গত বছরের এপ্রিলে পাওনা অর্থ দাবি করে গ্রামীণফোন ও রবিকে নোটিস পাঠায় বিটিআরসি। পরবর্তী সময়ে অপারেটর দুটির এনওসি প্রদান

বন্ধ করে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। পাওনা অর্থ আদায়ে দুই সেলফোন অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবির লাইসেন্স কেন বাতিল হবে না, তা জানতে চেয়ে গত ৫ সেপ্টেম্বর অপারেটর দুটিকে চিঠি দেয় বিটিআরসি। এর আগেই ঢাকার দেওয়ানি আদালতে আলাদাভাবে দুটি মামলা দায়ের করে গ্রামীণফোন ও রবি। গত ২৫ আগস্ট মামলা করে রবি। আর গ্রামীণফোন মামলা দায়ের করে ২৬ আগস্ট।

এমন পরিস্থিতিতে বিরোধ মীমাংসায় টেলিযোগাযোগমন্ত্রী, বিটিআরসি ও অপারেটর দুটির কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে এতেও সংকটের সুরাহা না হওয়ায় প্রশাসক নিয়োগে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অনুমতি চেয়ে আবেদন করে বিটিআরসি। এরই মধ্যে প্রশাসক নিয়োগে অনুমোদনও দিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।

এরপর গ্রামীণফোনের টাইটেল স্যুট মামলা (স্বত্বের মামলা) নিম্ন আদালত গ্রহণ করলেও এর অধীনে বিটিআরসির দাবি আদায়ের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন গত ২৮ আগস্ট খারিজ করে দেন। ওই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে গ্রামীণফোনের আপিলটি গ্রহণ করে গত ১৭ অক্টোবর বিটিআরসির নিরীক্ষা আপত্তি দাবির ওপর দুই মাসের স্থগিতাদেশ দেন হাইকোর্ট। ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে বিটিআরসি আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করলেও বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান তাতে সাড়া না দিয়ে আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। এরপর ২৩ অক্টোবর হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে বিটিআরসি। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে বিটিআরসির লিভ টু আপিলের শুনানি নিয়ে গত ২৪ অক্টোবর গ্রামীণফোন ন্যূনতম কত টাকা দিতে পারবে, তা জানতে চেয়ে ৩১ অক্টোবর আদেশের জন্য রেখেছিলেন আপিল বিভাগ। কিন্তু সে হিসাব দিতে না পারায় গ্রামীণফোন সময় চায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটিকে দুই সপ্তাহ সময় দেয়া হয়। গত ১৪ নভেম্বর গ্রামীণফোন শর্তসাপেক্ষে ২০০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে রাজি বলে প্রতিষ্ঠানটির আইনজীবী আদালতকে জানান। ওইদিন পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছিল ১৮ নভেম্বর। তবে এরপর ২৪ নভেম্বর আদেশের দিন ধার্য করা হয়। ওইদিন আদালত ২ হাজার কোটি টাকা তিন মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে গ্রামীণফোনকে নির্দেশ দেন। আদালতের দেয়া এ সময় শেষ হচ্ছে আগামী রোববার।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন