২০১৯-২০ অর্থবছর

স্বাধীনতার পর বৈদেশিক অর্থছাড়ে রেকর্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিই (আরএডিপি) হলো মূল উন্নয়ন বাজেট। উন্নয়ন বাজেটের একটি বড় অংশই থাকে বৈদেশিক সহায়তার ঋণ কিংবা অনুদান। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে আরএডিপিতে রেকর্ড পরিমাণ ৭২৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার (প্রায় ৬২ হাজার কোটি টাকা) বৈদেশিক অর্থ সহায়তা ছাড় হচ্ছে, যা স্বাধীনতার পর সর্বোচ্চ।

গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের নাজিয়া সালমা কনফারেন্স রুমেইফেকটিভ পার্টনারশিপ উইথ মিডিয়া ফর সাসটেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন শীর্ষক কর্মশালায় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মনোয়ার আহমদ এ তথ্য জানান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ইআরডির সাবেক সচিব এবং সাপোর্ট টু সাসটেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন প্রজেক্টের উপদেষ্টা কাজী শফিকুল আযম, ইআরডির যুগ্ম সচিব আবদুল বাকী ও উইং চিফ ফরিদ আজিজ। পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের (ডিজেএফবি) জন্য এ কর্মশালার আয়োজন করে ইআরডি।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইআরডির যুগ্ম সচিব আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ইআরডি এখন অর্থনৈতিক কূটনীতিতে জোর দিচ্ছে। দেশের জন্য ক্ষতিকর এমন কোনো ঋণ কিংবা অনুদান কখনই আমরা গ্রহণ করব না। বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটে এখন প্রায় এক-তৃতীয়াংশই যাচ্ছে বৈদেশিক সহায়তার মাধ্যমে। তবে বাংলাদেশের এক্সটারনাল ডেট-জিডিপি অনুপাত এখনো মাত্র ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ। যেখানে ঝুঁকিমুক্ত মাত্রা হলো ৪০ শতাংশ। পৃথিবীতে সর্বনিম্ন এক্সটারনাল ডেট-জিডিপি অনুপাত আছে এমন কয়েকটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ফলে বৈদেশিক সহায়তা গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে।

ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বৈদেশিক অর্থছাড়ের পরিমাণ ছিল ৩৪৩ কোটি ১০ লাখ ডলার, যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ছিল ৩৮৮ কোটি ২০ লাখ ডলার। তবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা ৬১২ কোটি ৪০ লাখ ডলারে উন্নীত হয়, যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৬০০ কোটি ডলারে নেমে আসে। তবে চলতি অর্থবছরে ৭২৯ কোটি ৪০ লাখ ডলারে উন্নীত হতে পারে। কিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অর্থ ব্যবহারে কিছুটা পিছিয়ে থাকায় লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে রয়েছে।

কাজী শফিকুল আযম বলেন, ২০১৭ সাল পর্যন্ত বৈদেশিক অর্থছাড়ের ক্ষেত্রে ৩ বিলিয়ন ডলারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এখন সেটি ৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। সামনের দিনে তা আরো বৃদ্ধি পাবে। তার মানে আমাদের বৈদেশিক সহায়তা গ্রহণের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ঋণ গ্রহণের মাত্রা এখন সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। জিডিপির ৪০ শতাংশের বেশি নিলে ঝুঁকি তৈরি হয়, কিন্তু বাংলাদেশের সেটি এখন ১৫ শতাংশের নিচেই রয়েছে। আমাদের পাইপলাইনের পর্যাপ্ত অর্থ রয়েছে। ঋণ কিংবা অনুদান গ্রহণের ক্ষেত্রে আগামী পাঁচ বছরে ডেট টু জিডিপি অনুপাত ২০ শতাংশ অতিক্রম করবে না। তবে একটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেটি হলো সরকারের জন্য দেশী-বিদেশী ঋণের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করা। মোট ঋণে দেশী ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। ফলে সুদের সিংহভাগই এখন যাচ্ছে দেশী ঋণ পরিশোধে।

ইআরডি সচিব মনোয়ার আহমদ বলেন, বৈদেশিক সহায়তা বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বেশকিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর অর্থ ব্যয় কাঙ্ক্ষিত হয়নি। কাঙ্ক্ষিত হলে বৈদেশিক সহায়তা ছাড়করণ আরো বাড়ত। ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশকে সবাই ঋণ দিতে চায়। উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে ২০২১ সালের মধ্যে যে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হবে তা বাংলাদেশ এরই মধ্যে অর্জন করেছে। ফলে বাংলাদেশের সামনের দিনে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলেও বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের শর্ত পূরণ করতে পারবে।

জানা গেছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করবে জাতিসংঘের ইকোনমিক ও সোস্যাল কাউন্সিল। তিনটি সূচকের মধ্যে মাথাপিছু আয় ১ হাজার ২৪২ ডলারের বিপরীতে বর্তমানে দেশের অর্জন ১ হাজার ৯০৯ ডলার। মানবসম্পদ সূচক ন্যূনতম ৬৬ শতাংশ হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশের অর্জন তা ৭৫ শতাংশ। এছাড়া অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুরতার মাত্রা ৩২ শতাংশের নিচে থাকা প্রয়োজন হলেও সেটি বাংলাদেশের রয়েছে ২৫ শতাংশ। ফলে বাংলাদেশের সম্ভাবনা বেশ ভালো। যদিও নেপাল একটু সময় নিচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নিয়ম ও লিয়াজোঁ ব্যবহার করেই এগিয়ে যাচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন