যশোরে শিশুদের বিভিন্ন টিকার সংকট দেখা দিয়েছে।
প্রায় দেড় মাস ধরে জেলার সরকারি হাসপাতালে ব্যাসিলাস ক্যালমেট গুয়েরিন (বিসিজি), টিটেনাস টক্সয়েড
(টিটি), পোলিওর আইপিভি ও পেন্টাভ্যালেন্ট (পাঁচ রোগের প্রতিষেধক) টিকা পাওয়া যাচ্ছে না।
এতে শিশুদের নিয়ে টিকা দিতে এসে ফেরত যেতে হচ্ছে অভিভাবকদের।
এ
নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
সময়মতো টিকা দিতে না পারলে শিশুর রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ধনুষ্টঙ্কার, পোলিও, হাম ও যক্ষ্মাসহ বিভিন্ন মরণব্যাধি রোগ প্রতিরোধের জন্য শিশুদের জন্মের পর থেকে এক বছরের মধ্যে সাতটি গুরুত্বপূর্ণ টিকা দেয়া হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) আওতায় সরকারিভাবে বিনা মূল্যে এসব টিকা সরবরাহ করা হয়।
তবে গত ৭ জানুয়ারি থেকে যশোরে সরকারি হাসপাতালে টিকাদান কেন্দ্রে বিসিজি, টিটি, পোলিও ও পেন্টাভ্যালেন্ট টিকা পাওয়া যাচ্ছে না।
সরেজমিনে জেলার প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ৯টা থেকেই হাসপাতালে টিকাদান কেন্দ্রের সামনে শিশুদের নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন অভিভাবক।
কেউ কেউ কেন্দ্রে কর্তব্যরত স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্গে কথা বলে হতাশ হয়ে ফিরে আসছেন।
এক শিশুর অভিভাবক শহরের বারান্দীপাড়ার বাসিন্দা ইমরুল হাসান জানান, হাসপাতাল থেকে বলা হচ্ছে টিকা নেই।
সরকারি হাসপাতাল ছাড়া এসব টিকা কোথাও পাওয়া যায় না।
টিকাদানের কার্ডে নির্দিষ্ট সময় লেখা থাকলেও পার হয়ে গেছে।
এখন কী করব বুঝতে পারছি না।
মোল্লাপাড়া এলাকার বাসিন্দা তানিয়া খাতুন বলেন, ছেলেকে ১৫ দিন ধরে বিসিজি টিকা দেয়ার জন্য হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে বেড়াচ্ছি।
সরবরাহ নেই বলে বারবার ফিরিয়ে দিচ্ছেন নার্সরা।
এ
টিকা বাইরে কোথাও বিক্রি হয় না।
সরকারি হাসপাতাল থেকে নিতে হয়।
আমার ছেলে অসুস্থ হলে দায়ভার কে নেবে?
পালবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আফরোজা সুমা বলেন, আমার মেয়েকে নিয়ে টিকা দিতে হাসপাতালে এসে ফিরে যাচ্ছি।
তিন দফায় হাসপাতালে এসে টিকা দিতে পারিনি।
টিকাদান কেন্দ্রের ইনচার্জ শারমিন আফরোজ বলেন, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে হাসপাতালের স্টোরে বিসিজি, টিটি ও পোলিও টিকার সরবরাহ নেই।
প্রতিদিন অসংখ্য অভিভাবক শিশুকে এসব টিকা দেয়ার জন্য এনে ফিরে যাচ্ছেন।
হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান ডা. মাহবুবুর রহমান জানান, টিটেনাস (ধনুষ্টঙ্কার) রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য টিটি টিকা নিতে হয়।
টিটেনাস রোগ একটি ঘাতক ব্যাধি।
পোলিওমাইলিটিজ বা পোলিও হলো ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ।
এ
রোগ থেকে শিশুকে রক্ষা করার জন্য পোলিও আইপিভি (ইনজেকশন) দেয়া হয়।
আর
বিসিজি টিকা হলো যক্ষ্মা রোগের প্রতিষেধক।
শিশুর জন্মের ছয় সপ্তাহের মধ্যে এ টিকা দিতে হয়।
নির্দিষ্ট সময়ে শিশুকে টিকা দেয়া না গেলে এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক দিলীপ কুমার রায় বলেন, সরবরাহ না থাকায় বিসিজি, টিটি ও পোলিও টিকার সংকট রয়েছে।
সিভিল সার্জন অফিস থেকে এসব টিকার সরবরাহ দেয়া হয়।
সেখানেও না থাকায় হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসা রোগী ও স্বজনদের ফিরে যেতে হচ্ছে।
একই অবস্থা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে।
অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. রাজিব হোসেন বলেন, আমাদের হাসপাতালে বিসিজি, টিটি, পেন্টাভ্যালেন্ট ও পোলিও টিকার সরবরাহ নেই।
বিষয়টি সিভিল সার্জন অফিসে জানানো হয়েছে।
সরবরাহ শুরু হলে শিশুদের টিকা দেয়া শুরু হবে।
কবে নাগাদ পাওয়া যাবে সেটি সিভিল সার্জন অফিস জানে।
ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিকাদান কেন্দ্রের স্টোর কিপার শরাফত হোসেন বলেন, প্রায় দেড় মাস ধরেই বিভিন্ন ধরনের টিকার সংকট রয়েছে।
বর্তমানে হাসপাতালে বিসিজি, টিটি, পেন্টাভ্যালেন্ট, হাম-রুবেলা ও পোলিও টিকার সরবরাহ বন্ধ।
এ ব্যাপারে জেলা সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন বলেন, এখানে বিসিজি, টিটি ও পোলিও টিকার সরবরাহ নেই।
আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
এসব টিকা ঢাকার ইপিআই ভবন থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
আশা করছি, আগামী সপ্তাহে পাওয়া যাবে।
সরবরাহ শুরু হলে শিশুদের নিয়মিত টিকা দেয়া হবে।
তখন আর ভোগান্তি পোহাতে হবে না।