বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ও নিম্নমানের
খাবারের কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বিশ্বের প্রতিটি শিশু।
বিশ্বের কোনো দেশই শিশুদের সুস্বাস্থ্য ও ভবিষ্যত্ নিশ্চিত করতে পারছে না। এ
সংকটকে আরো ঘনীভূত করছে অতি মুনাফালোভী ও শোষণমূলক বাজার ব্যবস্থা। গতকাল
জাতিসংঘের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী,
বর্তমান সময়ের প্রতিটি শিশু এক অনিশ্চিত
ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে,
হুমকির মধ্যে রয়েছে তাদের সবার অস্তিত্ব।
প্রতিবেদনে ৪০ জনের বেশি বিশিষ্ট শিশু-কিশোর
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ জানান, বর্তমান বিশ্বের কোনো দেশ ভবিষ্যত্ প্রজন্মকে কার্বন নিঃসরণ, প্রকৃতি
ধ্বংস করা, উচ্চ ক্যালরি ও প্রক্রিয়াজাত খাবারের নেতিবাচক প্রভাব থেকে রক্ষা করতে
পারছে না। ধনী দেশগুলো যে ব্যাপক হারে কার্বন নিঃসরণ করছে, তার
মারাত্মক প্রভাব পড়ছে পৃথিবীর সব দেশের শিশুদের ওপর।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও
ইউনিসেফের উদ্যোগে সম্পন্ন এ প্রতিবেদন আরো বলছে, বৈশ্বিক বাজার ব্যবস্থায় চর্বি ও
চিনিযুক্ত খাবার, অ্যালকোহল এবং তামাকজাত পণ্যের ক্ষতিকর প্রচারও শিশুদের অস্তিত্বের
জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে দ্য ল্যানসেট মেডিকেল
জার্নালে। প্রতিবেদনে ১৮০টি দেশে শিশুদের বেঁচে থাকার হারের পাশাপাশি তাদের শিক্ষা
ও পুষ্টিমান বিবেচনায় নেয়া হয়।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ইনস্টিটিউট
ফর গ্লোবাল হেলথের পরিচালক ও ইন্টারন্যাশনাল চাইল্ড হেলথের অধ্যাপক অ্যান্থনি
কোস্টেলো বলেন, সবচেয়ে বড় বার্তা হলো,
শিশুদের স্বাস্থ্য রক্ষা কিংবা তাদের ভবিষ্যত্
নিয়ে চিন্তা করছে বিশ্বে এমন কোনো দেশ নেই। বায়ুদূষণের ফলে শিশুদের ফুসফুসের
ক্ষতির দিকে তাকালেই বোঝা যায়,
এ বিষয়ে কিছু করার জন্য আমাদের হাতে বেশি সময়
নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক
টেড্রোস অ্যাডহ্যানম বলেন, বর্তমান বিশ্বের নেতারা শিশু ও কিশোরদের ভবিষ্যত্ নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত
নিতে পারছেন না। তারা তাদের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন, ব্যর্থ
হয়েছেন শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করতে। এমনকি তারা তাদের পৃথিবীকেও রক্ষা করতে
পারছেন না।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অতি
মুনাফালোভী ও ক্ষতিকর বাণিজ্যিক প্রচার শিশুদের স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে
দিয়েছে। টেলিভিশনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ফাস্টফুড ও চিনিযুক্ত পানীয়ের বিজ্ঞাপন দেখে
তারা এসব খাবারের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে। ফলে স্থূল শরীর নিয়ে বেড়ে ওঠা শিশুর
সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে আশঙ্কাজনক হারে। দেখা গেছে, ১৯৭৫ সালে স্থূল শরীরের শিশুর সংখ্যা
ছিল ১ কোটি ১০ লাখ। কিন্তু ২০১৬ সালে এ সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৪০ লাখে।
শঙ্কার বিষয় হলো, কিছু দেশে বছরে শিশুরা টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দেখেছে ৩০ হাজারের মতো। আর
অস্ট্রেলিয়ায় টিভিতে প্রচারিত খেলা দেখতে গিয়ে শিশুরা অ্যালকোহলের বিজ্ঞাপন দেখছে
বছরে ৫ কোটি ১০ লাখ বার।
এছাড়া বর্তমান হারে কার্বন নিঃসরণ
চলতে থাকলে ২১০০ সাল নাগাদ বৈশ্বিক তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে। ফলে
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ও তাপপ্রবাহ বাড়বে,
যা শিশুদের স্বাস্থ্যের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে।
বর্তমানে শিশুদের বেড়ে ওঠার জন্য সবচেয়ে ভালো পরিবেশ রয়েছে নরওয়ে, দক্ষিণ
কোরিয়া, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স ও আয়ারল্যান্ডে। অন্যদিকে এ তালিকায় নিচের দিকে রয়েছে মধ্য
আফ্রিকান রিপাবলিক, শাদ, সোমালিয়া, নাইজার ও মালি।