বাংলাদেশ গেমস এমনিই স্থানীয় ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে জমকালো আসর।
এবার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে আয়োজিত হবে গেমস।
আলো ঝলমলে আয়োজনে অতীতের সব রেকর্ড ভাঙার প্রত্যাশা করা হচ্ছে এবার।
আয়োজনের ওই আলোর নিচেই বিভিন্ন ডিসিপ্লিনে আঁধার আড়াল করা যাচ্ছে না।
গেমসের উদ্বোধন ও সমাপনী অনুষ্ঠান ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ একাধিক ডিসিপ্লিনের খেলা হবে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে।
প্রধান ভেনুর অন্যতম আকর্ষণীয় ডিসিপ্লিন অ্যাথলেটিকস।
কিন্তু ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের লড়াইয়েই থাকছে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি।
২০০৮ সালে স্থাপিত অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকের বিভিন্ন অংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, যা অ্যাথলিটদের জন্য মরণফাঁদ! বড় ধরনের ইনজুরির আশঙ্কা নিয়ে এ ট্র্যাকেই খেলা পরিচালনার বিকল্প পাচ্ছে না বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন।
‘অ্যাথলেটিকস
ট্র্যাক রাষ্ট্রীয় স্থাপনা।
এটা ঠিক করে দেয়া তো রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
আমরা ট্র্যাক সমস্যা সমাধানের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই সংশ্লিষ্টদের বলে আসছি।
তার সুফল নেই।
ঝুঁকি নিয়ে এ ট্র্যাকেই খেলা পরিচালনা করতে হবে’—গতকাল বণিক বার্তাকে জানান অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুর রকিব মন্টু।
ট্র্যাক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সর্বশেষ জাতীয় অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়েছে চট্টগ্রাম এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের ঘাসের ওপর।
জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট পরিচালনায় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম ছাড়া বিকল্প হিসেবে আছে আর্মি স্টেডিয়াম ও বিকেএসপির ট্র্যাক।
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের মতোই আর্মি স্টেডিয়ামের ট্র্যাকও ক্ষত-বিক্ষত।
ফলে সেখানে খেলা পরিচালনাও ঝুঁকিপূর্ণ।
বিকেএসপির ট্র্যাকে সে সমস্যা নেই।
কিন্তু রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র থেকে দূরবর্তী হওয়ায় সেখানে খেলা পরিচালনা করতে গেলে আবাসনসহ অন্যান্য খরচ বেড়ে যাবে।
এ
কারণে বিকেএসপিতে খেলা পরিচালনাও ফেডারেশনের পক্ষে প্রায় অসম্ভব বলে জানানো হয়।
ফেডারেশনটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রকিব বলেন, ‘অ্যাথলেটিকস
ট্র্যাক স্থাপন করতে বিপুল অর্থের প্রয়োজন।
এ
সামর্থ্য আমার ও আমার ফেডারেশনের নেই।
ক্রীড়াঙ্গনের নীতিনির্ধারকরা সমাধান না করলে আমাদের তো করার কিছু নেই।’
কেবল ট্র্যাকই নয়, অ্যাথলেটিকসে স্কোরবোর্ডের সমস্যাও রয়েছে।
ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ কিছু সরঞ্জাম বিগত কমিটির আমলে চুরি হয়ে যাওয়ায় অধিকাংশ ইভেন্টের খেলা পরিচালনা করতে হয় পুরনো প্রযুক্তির সাহায্যে।
স্কোরবোর্ড সমস্যা সম্পর্কে ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমি
বলব না স্কোরবোর্ড পরিপূর্ণ।
এটা দিয়ে কোনো রকমে খেলা পরিচালনা করা যায়।
নতুন ট্র্যাক স্থাপনের যে প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে, সেখানে স্কোরবোর্ডের জন্যও বরাদ্দ থাকছে।
আমাদের খেলা পরিচালনার পরিপূর্ণ উপকরণ পেতে হলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) উদ্যোগের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া বিকল্প নেই।’
আরেক গুরুত্বপূর্ণ ডিসিপ্লিন সাঁতারও সমস্যামুক্ত নয়।
নতুন স্থাপন করা স্কোরবোর্ড এখনো ত্রুটিপূর্ণ।
তা
সারিয়ে তুলতে এনএসসি কর্মকর্তারা বিশেষজ্ঞ দিয়ে কাজ করাচ্ছেন।
বাংলাদেশ গেমসে আদৌ এ বোর্ড ব্যবহার করা যাবে কিনা বলতে পারছেন না ফেডারেশন কর্মকর্তারা।
এ
সম্পর্কে সাঁতার ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘স্কোরবোর্ড
নিয়ে কয়েক দিন ধরে কাজ হচ্ছে।
এনএসসি কর্মকর্তাদের আশাবাদ তা দ্রুতই ব্যবহার উপযোগী হবে।
এ
বোর্ডে খেলা পরিচালনা করা যাবে কিনা, তা সময়ই বলতে পারে।’
তাজউদ্দীন আহমদ ইনডোর স্টেডিয়ামে চলবে ব্যাডমিন্টন ও টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতা।
দুই ডিসিপ্লিনের অ্যাথলিটরা অপর্যাপ্ত আলোর কারণে সমস্যা পোহাচ্ছেন।
এ
সম্পর্কে জাতীয় ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন শাপলা আক্তার বলেন, ‘পর্যাপ্ত
আলো না থাকায় আমার মতো সবারই সমস্যা হয়।
তা
সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেই।
দিনের পর দিন এ অবস্থার মাঝে খেলে যেতে হচ্ছে।’ টেবিল টেনিস ফেডারেশনের নির্বাহী সদস্য ও জাতীয় দলের কোচ মোহাম্মদ আলী এ সম্পর্কে বলেন, ‘এনএসসি
কর্মকর্তাদের বারবার জানানোর পরও আলোর সমস্যার সমাধান হয় না।
এ
সমস্যা নিয়েই জাতীয় দলের প্রস্তুতি চালাতে হয়।
অতীতে একাধিকবার গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতার আগে তড়িঘড়ি করে সমস্যা সমাধান করা হয়েছে।
কিন্তু কিছুদিন পরই আবার সমস্যা দেখা দিচ্ছে।’
বাংলাদেশ গেমসের আগে জিমনেশিয়ামের আলোর সমস্যা সমাধান না হলে দুটি ফেডারেশনের নিজস্ব উদ্যোগেই সমাধান করে নিতে হবে বলে জানান মোহাম্মদ আলী।
অতীতে একাধিকবার এমনটি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।