করোনাভাইরাস ডিজিজ বা কভিড-১৯-এর কারণে এলসি বন্ধ থাকায় চীন থেকে কোনো পণ্য আমদানি হচ্ছে না।
ফলে খুলনা অঞ্চলে সংকট তৈরি হয়েছে চীন থেকে আমদানি করা গার্মেন্ট, ইলেকট্রনিকস পণ্য, হার্ডওয়্যার সামগ্রী ও বিভিন্ন খুচরা যন্ত্রাংশের বাজারে।
এরই মধ্যে জোগান কম থাকায় এখানে বেশকিছু পণ্যের দাম ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
এ
অবস্থায় এ অঞ্চলের ক্রেতাদের যেমন বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে, তেমনি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরাও।
খুলনার সবচেয়ে বড় কম্পিউটার মার্কেট জলিল টাওয়ারের দোকানিদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, আগে যেসব এলসিডি-এলইডি মনিটরের দাম ছিল ৫ হাজার ৫০০ টাকা, এখন সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৮০০ টাকায়।
সাধারণ টিভি মনিটরের দাম আগে ছিল ৭ হাজার ৫০০ টাকা, এখন সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার থেকে ১১ হাজার টাকায়, কম্পিউটারের প্রসেসরের দাম ছিল ১১ হাজার, যার দাম এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজারে।
এর
পরও পণ্যটির সংকট, পাওয়া যাচ্ছে না।
মাদারবোর্ডের দাম আগে ছিল ৪ হাজার ৭০০, এখন সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩০০ থেকে ৫ হাজার ৫০০ পর্যন্ত।
এছাড়া যে হার্ডডিস্কের দাম আগে ৩ হাজার ২০০ টাকা ছিল, এখন সেটি বৃদ্ধি পেয়ে ৩ হাজার ৭০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে।
আর
নিম্নমানের যেসব হার্ডডিস্কের দাম আগে ১ হাজার ২০০ টাকা ছিল, এখন সেটি ১ হাজার ৬০০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে।
ইলেকট্রনিকস খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিকারক খুলনা পার্টস হাউজের স্বত্বাধিকারী এসএম ইয়াছীন আলী জানান, চীনে আপাতত পণ্য উৎপাদনের সব কারখানা বন্ধ রয়েছে।
কবে ফের উৎপাদন শুরু হবে তা জানা নেই।
অনেক পণ্যের শিপমেন্ট বর্তমানে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
পণ্য আমদানি না হওয়ায় তৈরি হওয়া ঘাটতির কারণে খুলনার বাজারে টিভি-কম্পিউটার পার্টস, রিমোট কন্ট্রোলসহ খুচরা যন্ত্রাংশের দাম ১০ থেকে ২০ শতাংশ বেড়েছে।
খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বুলু বিশ্বাস বলেন, করোনাভাইরাস সমস্যার কারণে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না থাকলেও কার্যত চীনের সঙ্গে সব ধরনের আমদানি-রফতানি বন্ধ রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা নতুন করে পণ্যের অর্ডার দিতে পারছেন না।
দুই মাস আগে যেসব পণ্যের চাহিদা দেয়া হয়েছিল তার বিপরীতে এলসি বন্ধ রয়েছে।
চাহিদার সেসব পণ্য আনাও সম্ভব হচ্ছে না।
জানা যায়, গত ৩০ জানুয়ারি চীনের সাংহাই থেকে তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের যন্ত্রাংশ নিয়ে সর্বশেষ চীনা জাহাজ এমভি লি আসে।
এর
বাইরে কনটেইনারে ইলেকট্রনিকস পণ্য, হার্ডওয়্যার ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি করা হয়।
দাম বৃদ্ধির বিষয়ে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির খুলনা শাখার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান রনি বণিক বার্তাকে বলেন, চীনের হলিডের এক মাস আগ থেকে সব ধরনের অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দেয় দেশটি।
আর
ছুটি শেষ হওয়ার কিছুদিন আগে আবার অর্ডার নেয়া শুরু হয়।
কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সব ধরনের শিপমেন্ট বন্ধ হয়ে যায়।
এতে ইলেকট্রনিকস যন্ত্রাংশের দাম ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
আগামী মে-জুনের আগে শিপমেন্ট শুরু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
আর
সেটি হলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে বলেও জানান এ ব্যবসায়ী।
চীন থেকে আমদানির পাশাপাশি রফতানিতেও মন্দা অবস্থা চলছে।
বিশেষ করে পাট-পাটজাত পণ্য, কাঁকড়া ও বিভিন্ন খাদ্যপণ্য।
এ
বিষয়ে খুলনার ফুলতলার সুপার জুটের ব্যবস্থাপক বেলাল হোসেন বলেন, সুপার জুট মিল থেকে চীনে কাঁচা পাট রফতানি হয়।
সর্বশেষ এলসি থাকা ২৮ হাজার ডলারের একটি চালান পাঠানো হয়েছে।
কিন্তু করোনাভাইরাস সমস্যার কারণে এখন যোগাযোগ করা কঠিন হচ্ছে।
তাই ওই এলসির বিল পাওয়ায় বিলম্ব হচ্ছে।
একই কারণে চীন থেকে নিয়মিত গ্রাহকরা তেমন একটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না এবং তারাও এখন আর কাঁচা পাট রফতানির জন্য নতুন অর্ডার নিয়ে ভাবছেন না বলে জানান তিনি।