ভারতীয় সেলফোন অপারেটর ভোডাফোন আইডিয়া
লিমিটেডের সংকট বেড়েই চলেছে। ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনে মোট ৫৩ হাজার
কোটি রুপি বকেয়া অ্যাডজাস্টেড গ্রস রেভিনিউর
(এজিআর)
মধ্যে ২ হাজার ৫০০ কোটি রুপি পরিশোধ করেছে
প্রতিষ্ঠানটি। গত সোমবার বকেয়া এজিআরের আংশিক পরিশোধের পর থেকে অপারেটরটির
কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। খবর ইটি টেলিকম।
ভোডোফোন আইডিয়া-সংশ্লিষ্ট
সূত্রমতে, ভারতীয় সেলফোন অপারেটরগুলোর লাইসেন্স ফি ও স্পেকট্রাম চার্জ বাবদ যে
বকেয়া রয়েছে, তা আজ রাত ১১টা ৫৯ মিনিটের মধ্যে পরিশোধের নির্দেশ ছিল। ভারতের টেলিকম
বিভাগকে (ডিওটি) অপারেটরগুলোর কাছ থেকে বকেয়া অর্থ আদায়ের নির্দেশ দেন দেশটির সর্বোচ্চ
আদালত। নির্দেশনা মেনে মোট বকেয়ার ১০ হাজার কোটি রুপি পরিশোধ করেছে ভারতী এয়ারটেল।
ভোডাফোন আইডিয়া শুরু থেকে বলে আসছিল,
এ বিপুল পরিমাণ বকেয়া পরিশোধ করার মতো
পরিস্থিতিতে তারা নেই। বকেয়া এজিআর পরিশোধে বাধ্য করা হলে তাদের কার্যক্রম বন্ধ
হয়ে যেতে পারে। যে কারণে মোট বকেয়ার প্রায় অর্ধেক পরিশোধ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতসংশ্লিষ্টদের
দাবি, ভোডাফোন আইডিয়ার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়লে প্রায় ১৫ হাজার কর্মী চাকরি
হারাবেন। একই সঙ্গে বিপদে পড়বেন প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকরাও। ভারতের দ্বিতীয় বৃহৎ
সেলফোন অপারেটর ভোডাফোন আইডিয়া। দেশটিতে ৩৩ কোটির বেশি গ্রাহক রয়েছে
প্রতিষ্ঠানটির। এ বিপুলসংখ্যক গ্রাহক তো বিপদে পড়বেনই। সেই সঙ্গে কাজ হারাবেন
ভোডাফোনের ওপর নির্ভরশীল অসংখ্য ব্যবসায়ী। দ্বিতীয় বৃহৎ সেলফোন অপারেটর ভোডাফোনের
কার্যক্রম বন্ধ হলে ভারতের টেলিযোগাযোগ ব্যবসা খাতও বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।
এছাড়া প্রতিযোগিতা কমে যাওয়ায় গ্রাহকদের ওপরও চাপ বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত বছরের ডিসেম্বরেই ভোডাফোন আইডিয়া
লিমিটেডের চেয়ারম্যান কুমার মঙ্গলম বিড়লা জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয়
সরকারের সাহায্য ছাড়া তার প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ভারতে ব্যবসা চালানো সম্ভব নয়। এরপর
গত কয়েক মাসে সেই পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। লোকসানের অংকও বেড়েছে। ভোডাফোন
আইডিয়ার পক্ষ থেকে সরাসরি কিছু বলা না হলেও শিগগিরই অপারেটরটির কার্যক্রম বন্ধের
ঘোষণা আসতে পারে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
গত বছর অক্টোবরে ভারতী এয়ারটেল, রিলায়েন্স
কমিউনিকেশন ও ভোডাফোন আইডিয়াসহ কয়েকটি সেলফোন অপারেটরকে ১ লাখ ৪৭ হাজার কোটি রুপি
বকেয়া অ্যাডজাস্টেড গ্রস রেভিনিউ
(এজিআর)
পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছিলেন ভারতের সর্বোচ্চ
আদালত। একই সময় ডিওটিকে তিন মাসের মধ্যে এ অর্থ আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। তবে
নির্ধারিত সময়ে বকেয়া এজিআর পরিশোধ না করায় ১৪ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে চলতি মাসের
২০ তারিখের মধ্যে সেলফোন অপারেটরগুলোকে বকেয়া অর্থ পরিশোধের নির্দেশ দেন ভারতের
সুপ্রিম কোর্ট।
২০০৫ সাল থেকে এজিআরের সংজ্ঞা নিয়ে
ভারতের ব্যক্তি খাতের টেলিকম কোম্পানি এবং ডিওটির মধ্যে আইনি লড়াই চলে আসছে। গত
অক্টোবরের শেষ দিকে এজিআর নিয়ে ভারতী এয়ারটেল, রিলায়েন্স কমিউনিকেশন ও ভোডাফোন
আইডিয়ার মতো টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদন খারিজ করে দিয়ে ডিওটির
সংজ্ঞাকে বৈধতা দিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। একই সময় বকেয়া পরিশোধে সেলফোন
অপারেটরগুলোকে গত মাসের ২৩ তারিখ সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। এর কয়েক সপ্তাহ পর দেশটির
সেলফোন অপারেটরগুলোর পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আদালতের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হয়।
তবে এজিআর নিয়ে আদালতের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনও খারিজ হয়ে যায়।
বিশ্লেষকদের মতে, এ
সিদ্ধান্তের প্রভাব নিয়ে সরকারের অবশ্যই পর্যালোচনা করা উচিত। সেলফোন অপারেটরগুলোর
চাপিয়ে দেয়া এ আর্থিক বোঝা দূর করার জুতসই পদ্ধতি বের করার বিকল্প নেই। ডিওটির
দাবির বকেয়া অর্থ পরিশোধ করার মতো অবস্থায় নেই ভারতী এয়ারটেল, ভোডাফোন
আইডিয়া ও রিলায়েন্স কমিউনিকেশন্সসহ অন্য অপারেটরগুলো।