চলতি বছরের শুরুতেও চীনের প্রেসিডেন্ট
শি জিনপিং যখন তার প্রথম মিয়ানমার সফরে নতুন অবকাঠামো চুক্তিতে সই করেছিলেন, তখনো
বিশ্বকে জুড়তে রেল, বন্দর ও সড়কপথ নিয়ে চীনের পরিকল্পনার কোনো প্রতিবন্ধকতার আভাস পাওয়া
যায়নি। কিন্তু এ মুহূর্তে এ চিত্রপট বদলে গেছে কেবল চীন থেকেই ছড়িয়ে পড়া নভেল
করোনাভাইরাসের কারণে।
কভিড-১৯ রোগের বিস্তার রোধে ভ্রমণ
নিষেধাজ্ঞা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতিটির অনেকটাই স্থবির করে তুলেছে। একই
সঙ্গে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নিজস্ব উদ্যোগ বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) গুরুত্বপূর্ণ
অংশে বড় ধাক্কা দিয়েছে। নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বিদেশী
প্রকল্পগুলোয় যোগ দিতে পারছেন না চীনা কর্মীরা। একই সঙ্গে প্রকল্প অব্যাহত রাখার
জন্য প্রয়োজনীয় চীনা আমদানি থেকেও কারখানাগুলো বঞ্চিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এক
ডজনের বেশি কোম্পানির নির্বাহী ও কর্মকর্তারা।
ডাকারফ্রন্টিয়ারের চীন বিশ্লেষক
বোইয়াং জুয়ে বলেন, চীনে বহু কারখানা বন্ধ হয়ে আছে। আর যেগুলো খোলা হয়েছে, সেগুলোও
পূর্ণ সক্ষমতায় পৌঁছাতে পারেনি। যেহেতু বিআরআই প্রকল্পগুলোর বহু সরঞ্জাম ও
মেশিনারির প্রধান উৎস চীনভিত্তিক ম্যানুফ্যাকচারারসরা, তাই
দেশটির শিল্প উৎপাদন ও সরবরাহ শৃঙ্খলের ব্যাঘাত প্রকল্পগুলোর আরো বিলম্বের কারণ
হয়ে উঠতে পারে।
বিআরআইয়ের একটি বৃহদায়তন প্রকল্প, ইন্দোনেশিয়ায়
চায়না রেলওয়ে ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপের ৬০০ কোটি ডলারের হাই-স্পিড রেলপথ
নির্মাণ প্রকল্প ঝামেলায় পড়তে যাচ্ছে। নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার পর্যবেক্ষণে
একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগটি। একই সঙ্গে চান্দ্র নববর্ষের ছুটি
পালনে দেশে ফেরা চীনা কর্মীদের ইন্দোনেশিয়ায় না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বলে
কোম্পানির এক জ্যেষ্ঠ নির্বাহী জানিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ নির্বাহী জানান, কোম্পানিটি
১০০ জনের বেশি চীনা কর্মকর্তাকে,
যাদের অধিকাংশই দক্ষ শ্রমিক বা ব্যবস্থাপক
জাকার্তার টেক্সটাইল কেন্দ্র বান্দুংয়ের প্রকল্পটিতে ফিরে আসতে বাধা দিয়েছে।
জ্যেষ্ঠ নির্বাহী জানান, প্রধান
ব্যক্তিরা কাজে ফিরে আসার আগ পর্যন্ত রেল প্রকল্পটির কম গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে কাজ
করা হচ্ছে। একটি বাজে পরিস্থিতি দিয়ে চলতি বছর শুরু করতে হলো আমাদের। বিলম্ব আর
বিতর্কে জর্জরিত হয়ে পড়া প্রকল্পটিতে নভেল করোনাভাইরাস আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ
হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বেশকিছু
বিদেশী প্রকল্প ও বিনিয়োগে
‘জটিলতা’ তৈরি হয়েছে বলে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে চীনের রাষ্ট্র পরিচালিত
কোম্পানিগুলোর শীর্ষ নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানিয়েছে। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত অ্যাসেট
সুপারভিশন অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কমিশনের মহাসচিব পেং কিয়াংহু জানান, যতদ্রুত
সম্ভব সহায়তা ও পরিস্থিতি সম্পর্কে উপলব্ধির জন্য চীন এরই মধ্যে বিদেশী কোম্পানি, বৈদেশিক
মালিক ও সরকারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
চলতি মাসের শুরুতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার
বৃহত্তম অর্থনীতিটি চীন থেকে আগত ফ্লাইটের ওপর নিষেধাজ্ঞা করায় সিংসান হোল্ডিং
গ্রুপ, জেম কোম্পানি লিমিটেড ও ঝেজিয়াং হওয়াউ কোবাল্টের মতো ইন্দোনেশিয়ায়
অবস্থিত বেশকিছুসংখ্যক চীনা কোম্পানি নিকেল ও কোবাল্ট সরবরাহ সংকটে পড়েছে।
তবে নতুন প্রকল্পগুলো সামান্যই পেছাতে
পারে বলে একটি কোম্পানির নির্বাহী জানিয়েছেন।
চায়না ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন এজেন্সির
তথ্য অনুসারে, নভেল করোনাভাইরাস বিস্তারের জেরে বিশ্বের ১৩৩টির বেশি দেশ চীনা নাগরিক
বা চীনে ভ্রমণে যাওয়া ব্যক্তিদের দেশে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
তবে ভাইরাসের কারণে এখন পর্যন্ত কোনো
প্রভাব না পড়ার কথা জানিয়েছে পাকিস্তানে চলমান ৬ হাজার ২০০ কোটি ডলারের চায়না-পাকিস্তান
ইকোনমিক করিডোর (সিপিইসি)। যদিও
কর্মকর্তারা জানান, চীন থেকে ফেরার পর বেশকিছু ব্যবস্থাপককে কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছে।
২০১৮ সালে বেল্ট অ্যান্ড রোড নিয়ে
সমালোচনার পর উদ্যোগটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে নভেল করোনাভাইরাস। সে সময়
ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকাসহ বেশকিছু দেশের সরকারি কর্মকর্তারা ব্যয়বহুল ও অপ্রয়োজনীয়
প্রকল্পগুলোর সমালোচনা করেছিলেন। সূত্র:
রয়টার্স