দুগ্ধপণ্যের আন্তর্জাতিক নিলামে দরপতন অব্যাহত

বণিক বার্তা ডেস্ক

টানা দুই নিলাম ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর চলতি মাসের শুরুতে আন্তর্জাতিক বাজারে দুগ্ধপণ্যের গড় মূল্যসূচক কমে আসে। এ ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক নিলামেও। নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ গ্লোবাল ডেইরি ট্রেড (জিডিটি) অকশনে দুগ্ধপণ্যের গড় মূল্যসূচক আগের নিলামের তুলনায় ২ দশমিক ৯ শতাংশ কমেছে। এর আগের নিলামে সূচকমান ৪ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছিল। সর্বশেষ নিলামে মাখন, ননিযুক্ত ও ননিবিহীন গুঁড়ো দুধসহ সব ধরনের দুগ্ধপণ্যের দাম কমতির দিকে ছিল। শুধু পনিরের দাম আগের তুলনায় বেড়েছে। খবর রয়টার্স ও নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড।

জিডিটি প্রাইস ইনডেক্স অনুযায়ী, সর্বশেষ আন্তর্জাতিক নিলামে সর্বোচ্চ ২৯ হাজার ৮৮০ টন দুগ্ধপণ্য সরবরাহ হয়েছে। এর মধ্যে বিক্রি হয়েছে ২৮ হাজার ১৮১ টন। আগের নিলামের তুলনায় দুগ্ধপণ্যের বেচাকেনা কমেছে ২ দশমিক ৮ শতাংশ। সর্বশেষ নিলামে প্রতি টন দুগ্ধপণ্যের গড় দাম দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৭৬ ডলার। একই সঙ্গে দুগ্ধপণ্যের গড় মূল্যসূচক আগের নিলামের তুলনায় ২ দশমিক ৯ শতাংশ কমেছে।

এ নিলামে ননিযুক্ত গুঁড়ো দুধের দাম আগের নিলামের তুলনায় ২ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে। দুগ্ধপণ্যটির গড় দাম দাঁড়িয়েছে টনপ্রতি ২ হাজার ৯৬৬ ডলার। অন্যদিকে ননিবিহীন প্রতি টন গুঁড়ো দুধের গড় দাম দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮৪০ ডলারে, যা আগের নিলামের তুলনায় ২ দশমিক ৬ শতাংশ কম।

কমেছে মাখনের দামও। সর্বশেষ আন্তর্জাতিক নিলামে প্রতি টন মাখনের গড় দাম দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯০ ডলারে। আগের নিলামের তুলনায় দুগ্ধপণ্যটির গড় দাম কমেছে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ের পর থেকে জিডিটি নিলামে মাখনের দাম কখনই ৪ হাজার ডলারের নিচে নামেনি।

তবে বেশির ভাগ দুগ্ধপণ্যের গড় দাম কমতির দিকে থাকলেও বেড়েছে পনিরের। সর্বশেষ নিলামে দুগ্ধপণ্যটির গড় দাম দাঁড়িয়েছে টনপ্রতি ৪ হাজার ৫২৬ ডলারে, যা আগের নিলামের তুলনায় ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।

দুগ্ধপণ্যের আন্তর্জাতিক নিলামে টানা দরপতনের পেছনে কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। প্রথমত, নভেল করোনাভাইরাস আতঙ্ক। দ্বিতীয়ত, বেচাকেনায় মন্দা ভাব। এরই মধ্যে চীনের সীমানা ছাড়িয়ে প্রায় ৩০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস। বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জরুরি অবস্থার মধ্যে স্থবির হয়ে পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য। শ্লথ হয়ে আসছে চীনসহ সামগ্রিক বৈশ্বিক অর্থনীতি। এ পরিস্থিতিতে চীনসহ বিভিন্ন দেশে দুগ্ধপণ্যের বেচাকেনা কমেছে। এতে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

মেলবোর্নভিত্তিক অস্ট্রেলিয়া অ্যান্ড নিউজিল্যান্ড ব্যাংকের এক নোটে বলা হয়েছে, ভাইরাস আতঙ্ক বিশ্বজুড়ে চাহিদা কমিয়ে দুগ্ধপণ্যের বেচাকেনায় মন্দা ভাব তৈরি করেছে। এ কারণে দামও কমতে শুরু করেছে। প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস আতঙ্ক দীর্ঘমেয়াদে বজায় থাকলে আগামী দিনগুলোতেও দাম কমতির দিকে থাকতে পারে।

আন্তর্জাতিক নিলামে মূল্যসূচকে পতনের জের ধরে নিউজিল্যান্ডভিত্তিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এএসবি ব্যাংক এক নোটে জানিয়েছে, আগামী দিনগুলোতে আন্তর্জাতিক নিলামে দুদ্ধপণ্যের গড় দাম বর্তমানের তুলনায় আরো কমে আসার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী দিনগুলোতে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি কেজি দুগ্ধপণ্যের গড় দাম ৭ ডলার ৪০ সেন্টে দাঁড়াতে পারে।

অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের বৃহত্তম দুগ্ধপণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফন্টেরা জানিয়েছে, চলতি বছর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি কেজি দুগ্ধপণ্যের গড় দাম সর্বনিম্ন ৭ ডলার থেকে সর্বোচ্চ ৭ ডলার ৬০ সেন্টের মধ্যে ওঠানামা করতে পারে।

এএসবি ব্যাংকের নোটে বলা হয়েছে, এবারের মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের দুগ্ধপণ্য উৎপাদনকারীরা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে সময় পার করছে। একদিকে ওশেনিয়াজুড়ে তীব্র খরা, অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানল গোখাদ্য উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। এর জের ধরে ২০১৯-২০ উৎপাদন মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে তরল দুধ ও দুগ্ধপণ্যের উৎপাদন প্রবৃদ্ধি অর্ধেকে নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাজারে দুগ্ধপণ্যের দাম বাড়তি থাকার কথা। তবে বাস্তবে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। মূলত নভেল করোনাভাইরাস আতঙ্ক ও অর্থনৈতিক শ্লথতার জের ধরে চাহিদা কমার আশঙ্কায় আন্তর্জাতিক নিলামে দুগ্ধপণ্যের গড় মূল্যসূচকে টানা পতন অব্যাহত রয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির গ্রামীণ অর্থনীতি শাখার জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ নাখান পেনি বলেন, দুগ্ধপণ্যের সাপ্লাইচেইনে চীন বড় একটি ফ্যাক্টর। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে চীনা কোম্পানিগুলো বিপুল পরিমাণ দুগ্ধপণ্য আমদানি করে। এখন নভেল করোনাভাইরাস আতঙ্কে চীনে দুগ্ধপণ্যের বেচাকেনা প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। শিগগিরই পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বেচাকেনা বাড়বে না। ফলে দুগ্ধপণ্যের দাম দীর্ঘমেয়াদে কমতির দিকে থাকতে পারে। এমনকি চলতি মাস শেষে আন্তর্জাতিক নিলামে ননিযুক্ত গুঁড়ো দুধের দাম বর্তমানের তুলনায় ৮ দশমিক ৬ শতাংশ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন