মজুদ প্রবণতায় অনিশ্চয়তা বাড়ছে চীনা পণ্যের বাজারে

সুজিত সাহা ও ওমর ফারুক চট্টগ্রাম ব্যুরো

নভেল করোনাভাইরাসের কারণে দেশে পণ্য সরবরাহে তেমন একটা বিঘ্ন ঘটেনি এখনো যদিও এরই মধ্যে ব্যবসায়ীদের পণ্যের মজুদ প্রবণতা বেড়েছে চীনা পণ্যকে কেন্দ্র করে বাজারে উদ্ভব ঘটেছে এক ধরনের ফড়িয়া ব্যবসায়ীর, যাদের কারণে বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহ চেইনে তৈরি হয়েছে একধরনের অনিশ্চয়তা

দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র খ্যাত খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জ, চাক্তাই, পাহাড়তলী রিয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ এখনো না কমায় সামনের দিনগুলোয় সরবরাহ চেইনে ব্যাঘাত ঘটতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে অনেক ব্যবসায়ী বাজারে চীনা পণ্যের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন আবার অতিমুনাফার লোভেও পণ্য কিনে মজুদ করছেন অনেক ব্যবসায়ী ক্রেতাদের মধ্যেও আগাম পণ্য সংগ্রহের প্রবণতা রয়েছে ফলে অধিকাংশ পণ্যই বিক্রি করা হচ্ছে বেশি দামে

ভোগ্যপণ্য: চীন থেকে আমদানীকৃত পণ্যের মধ্যে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে মসলাপণ্য রসুন আদার দাম গত তিন সপ্তাহে খাতুনগঞ্জে রসুনের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় দ্বিগুণে একই সময়ে কেজিতে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে আদার দাম নভেল করোনাভাইরাসের কারণে ২০ দিন ধরে আমদানি বন্ধ থাকায় পণ্য দুটির বাজারে অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা

খাতুনগঞ্জে বর্তমানে পাইকারিতে প্রতি কেজি চীনা রসুন বিক্রি হচ্ছে ২০০-২১০ টাকার মধ্যে জানুয়ারির শেষ দিকেও পণ্যটির মূল্য ছিল ১০০-১২০ টাকার মধ্যে ওই সময় পাইকারিতে প্রতি কেজি চীনা আদার মূল্য ছিল প্রায় ৯০ টাকা বর্তমানে একই আদা ১৩০-১৪০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে

কভিড-১৯-এর কারণে আমদানিকারকরা বাজারে রসুনসহ কয়েকটি ভোগ্যপণ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন এতে বাজারে সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে তাছাড়া দেশী রসুনের মৌসুমও শেষ ফলে সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে দাম আরো বাড়বে রসুনের পথে আছে আদা পেঁয়াজও

খাতুনগঞ্জের কাঁচা পণ্য আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে রসুনের উৎপাদন অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি হলেও এখনো চীননির্ভরতা রয়েছে কভিড-১৯-এর কারণে আগে যেসব আমদানিকারক এলসি খুলেছিলেন, তাদের চালানও আসছে না নতুন করে কেউ এলসি খুলতে পারছেন না এতে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে আমদানিতে

তবে খাতুনগঞ্জের কয়েক ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, নভেল করোনাভাইরাসকে পুঁজি করে বাড়তি লাভের আশায় বাজারে চীনা রসুন সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন অনেকে চীন থেকে জাহাজে পণ্য তুললে তা দেশে আসতে ২০-২৫ দিন সময় লাগে এখন বাজারে যেসব রসুন রয়েছে, তা আগের আমদানি করা

প্রযুক্তি পণ্য: দেশে চীন থেকে মোবাইলের পার্টস আমদানি বন্ধ তিন সপ্তাহ ধরে কারণে মোবাইলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশী কোম্পানিগুলো নিয়ে বাংলাদেশ মোবাইল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন গত সপ্তাহে বৈঠক করে এর পর থেকেই দেশে মোবাইল ফোনের দাম বাড়তির দিকে

এরই মধ্যে বাজারে কয়েকটি কোম্পানির তৈরি সেলফোনের দাম বেড়ে গেছে দেশী ব্র্যান্ডের মধ্যে ওয়ালটনের স্মার্টফোনের দাম বেড়েছে মডেলভেদে ২৫০-৫০০ টাকা একই কোম্পানির ফিচার ফোনের দাম বেড়েছে ৫০-১০০ টাকা পর্যন্ত দুয়েকদিনের মধ্যে দাম বৃদ্ধির ঘোষণা আসতে পারে সিম্ফোনি কোম্পানির মোবাইলের ক্ষেত্রেও

এছাড়া ইলেকট্রনিকস মোবাইল পণ্যের বড় বাজার চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারে এমআই-শাওমি, হুয়াওয়ে, স্যামসাং, ভিভো, অপো মোবাইলের প্রতিটি সেটে মানভেদে ১০০ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে

রিয়াজউদ্দিন বাজার তামাকুমন্ডি মোবাইল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আরিফুর রহমান বলেন, মোবাইল মোবাইল অ্যাকসেসরিজের প্রধান রফতানিকারক দেশ চীন দেশটিতে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসের ফলে আমদানি বন্ধ থাকা সেলফোনের বাজারে কিছুটা প্রভাব এরই মধ্যে শুরু হয়েছে কবে নাগাদ পুনরায় আমদানি শুরু হবে, তা স্পষ্ট না হওয়ায় আমদানিকারক পাইকারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে পণ্য মজুদের প্রবণতা বাড়ছে কিছু পণ্যের দামও এরই মধ্যে বেড়েছে তবে মোবাইল যেহেতু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নয়, ব্যবহারকারীদের সচেতনতা সদিচ্ছার মাধ্যমে বাজার স্থির রাখার সুযোগ রয়েছে

এছাড়া চীন থেকে আমদানীকৃত অন্যান্য পণ্যের মধ্যে বিভিন্ন খাদ্যপণ্য, রাসায়নিক, ক্রোকারিজ, ফলমূল ইত্যাদিরও দাম এখন বাড়তির দিকে বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে রিয়াজউদ্দিন বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মাহবুবুল আলম বণিক বার্তাকে বলেন, রিয়াজউদ্দিন বাজারের ৮০ শতাংশ পণ্য আসে চীন থেকে নভেল করোনাভাইরাসের কারণে গোটা বাজারে একটা চাপা আতঙ্ক কাজ করছে আমদানিকারক ব্যবসায়ীদের মনে কারণ চীন থেকে আসা পণ্যের বিকল্প বাজার খুুঁজতেই অনেক সময় লাগবে এছাড়া এমন কিছু পণ্য আছে, যেগুলোর ক্ষেত্রে চীনের কোনো বিকল্প নেই বললেই চলে

শিল্প মালিকরা বলছেন, চীন থেকে আমদানীকৃত পণ্যের মধ্যে ভারী শিল্পের মূলধনি যন্ত্রপাতি, গার্মেন্টস শিল্পের অ্যাকসেসরিজসহ কিছু শিল্পপণ্যের সংকট দেখা দিতে পারে তবে অধিকাংশ চীনা পণ্যের বিকল্প বাজার রয়েছে ফলে এখন থেকে উদ্যোগ নেয়া গেলে বাংলাদেশ দ্রুত আসন্ন সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে তাছাড়া চীন থেকে আমদানি হওয়া অধিকাংশই বিলাসী পণ্য ভোগ্যপণ্য বা অতি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি কম হওয়ায় সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে দেশের বাজারে বড় ধরনের সমস্যা হবে না

চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম বণিক বার্তাকে বলেন, নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাংলাদেশে চীন থেকে কাঁচামাল বিভিন্ন পণ্য আমদানি কার্যত বন্ধ রয়েছে চীন থেকে যথাসময়ে পণ্য সরবরাহের বিষয়ে আশ্বস্ত করা হয়েছে তবে বিশ্বব্যাপী ক্রেতাদের কাছে যথাসময়ে পণ্য সরবরাহের প্রয়োজনে বিকল্প খুঁজতে হবে বাংলাদেশকে বিষয়ে এরই মধ্যে এফবিসিসিআইকে চিঠি দেয়া হয়েছে চীনের সংকট না কাটা পর্যন্ত ভারতসহ প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশ থেকে বিকল্প হিসেবে পণ্য আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হলে দেশের শিল্প ব্যবসা-বাণিজ্যে নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়বে না

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন