সংসদে প্রধানমন্ত্রী

উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দেশবাসীর সহযোগিতা চাই

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেক কষ্ট, ব্যথা-বেদনা বুকে চেপে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি বাংলাদেশের মানুষ যেন একটু সুখের মুখ দেখে, তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেসে লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে চলেছি বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, ইনশাআল্লাহ এগিয়ে যাবে

গতকাল একাদশ জাতীয় সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনা সমাপনী ভাষণে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শেষে রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে আনীত প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয় এরপর স্পিকার তার সমাপনী বক্তব্য শেষে অধিবেশনের সমাপ্তিসংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ পাঠ করেন

জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অগ্রযাত্রার ধারা অব্যাহত রাখতে দেশবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রয়োজন দেশবাসীকে বলব জঙ্গি-সন্ত্রাস, মাদক ব্যবসায়ী ধর্ষণকারীদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরিয়ে দিন

রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, রাষ্ট্রপতি তার ভাষণের মধ্য দিয়ে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেছেন উন্নয়নের বিস্তারিত চিত্র তিনি তুলে ধরেছেন প্রত্যেক এমপি এই ভাষণ ভালোভাবে পড়লে দেশের জন্য আমরা যে উন্নয়ন করেছি, তা জানতে পারবেন আমি

কারো প্রতি বিদ্বেষ নিয়ে চলতে চাই না কারো প্রতি প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে চাই না 

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এটা আজ সর্বজনস্বীকৃত আগে মানুষের জীবনে কোনো নিরাপত্তা ছিল না, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ শিক্ষাঙ্গনে অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিল আগে বাংলাদেশকে অনেকে করুণার চোখে দেখত, কিন্তু এক দশকে বাংলাদেশের সেই অবস্থান পরিবর্তন করতে পেরেছি কারণ আমরা জাতির পিতার আদর্শে দেশকে পরিচালনা করছি তার পথ ধরে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি এত উন্নয়নের পরও যদি কেউ না দেখে, সেটা তাদের দেখার ভুল কিন্তু আমরা গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত দেশের উন্নয়ন করেছি, যার সুফল দেশের মানুষ পাচ্ছে

বিরোধী দল সংসদে উপস্থিত থেকে সংসদকে প্রাণবন্ত করে রাখায় ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাঝে মাঝে কিছু সমস্যা দেখা যায়, সেগুলোরও আমরা দ্রুত সমাধান করছি করোনাভাইরাস মোকাবেলায় আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছি বিমানবন্দরসহ সব জায়গায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আগতদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে, তার পরই তাদের দেশে ঢোকার অনুমতি দেয়া হচ্ছে যেন কেউ করোনাভাইরাস নিয়ে দেশে আসতে না পারে ভাইরাসের বিস্তার না ঘটতে পারে   

গত বছর দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপের বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আবারো মশার উপদ্রব দেখা দিচ্ছে সবাইকে সচেতন হতে হবে, যেন ডেঙ্গু মশা জন্ম নিতে না পারে এর বিস্তার ঘটতে না পারে মশার সমস্যা সমাধানে দেশবাসীকে নিজেদের বাড়ি-ঘর পরিষ্কার করার অনুরোধ করব নিজেরা ঘরবাড়ি পরিষ্কার করতে পারলে মশার উপদ্রব থাকবে না

সংসদ নেতা বলেন, যারা শিশু-কিশোরীদের ধর্ষণ করে তারা মানুষ নামে পশু এরা পশুরও অধম তাদেরও তো মা-বোন-মেয়ে আছে এমন জঘন্য চরিত্রের মানুষ কীভাবে হতে পারে? জঙ্গিবাদ-মাদক-ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে দেশবাসীও যেন এদের ধরিয়ে দিতে সহযোগিতা করেন

রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, রমজান এলেই অনেকে অনেক রকম খেলা খেলার চেষ্টা করে কেউ যেন গুজবে আতঙ্কে না পড়েন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধে টিসিবির মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মজুদ রাখা হচ্ছে কাজেই নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই

এর আগে দেশের অর্থনীতি নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে রিজার্ভ এখন ৩২ বিলিয়ন ডলার সাধারণত দেশে কোনো দুর্যোগ এলে যেন সেটা মোকাবেলা করা যায়, সেজন্য তিন মাসের খাদ্যশস্য ক্রয়ের মতো অর্থ রিজার্ভ রাখা হয় এখন দেশে যে পরিমাণ রিজার্ভ রয়েছে, তা দিয়ে ছয় মাসের খাদ্যশস্য ক্রয় করা সম্ভব

টানা ১০ বছরে দেশ জাতির কল্যাণে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত এক দশকে দেশের অর্থনীতি অনেক শক্তিশালী অবস্থানে এসেছে ব্যাংকে টাকার কোনো সমস্যা নেই প্রণোদনা দিচ্ছি বলেই ১৮ বিলিয়ন রেমিট্যান্স এসেছে সামাজিক নিরাপত্তা, অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাপকভাবে হচ্ছে টাকা যদি নাই থাকত তবে এত উন্নয়ন হচ্ছে কীভাবে? দারিদ্র্যের হার ৪০ ভাগ থেকে ২০ দশমিক ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছি এটাও দেশের জন্য একটা বড় অর্জন

বিরোধী দলের নেতার বক্তব্যের জবাবে তিনি আরো বলেন, কিছু ক্ষেত্রে তিনি হতাশা প্রকাশ করেছেন কিন্তু রাষ্ট্রপতির ভাষণ যদি তিনি ভালো করে পড়েন, তবে হতাশ না হয়ে উজ্জীবিত হবেন

বিএনপি-জামায়াত জাতীয় পার্টি সরকারের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখনই যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারাই আওয়ামী লীগকে নির্যাতন করেছে জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় থাকতে ১৯৮৮ সালে আমাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছেন খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়েছেন অগ্নিসন্ত্রাস করে শত শত মানুষকে হত্যা করেছেন এসব বৈরী অবস্থা মোকাবেলা করে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে

তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে এটা শুধু আমরা বলছি না বিশ্বের বড় বড় গবেষকও তা স্বীকার করছেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাংলাদেশ হচ্ছে সবচেয়ে বিনিয়োগের নির্ভরযোগ্য জায়গা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশ থেকে অর্থনৈতিকভাবে আমরা এগিয়ে রয়েছি

জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে দেশের চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত মুজিব বর্ষ উদযাপন করব জাতির পিতার নাম একসময় ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা হয়েছিল, ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছিল বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের মানুষ মাথা উঁচু করে চলবে

তিনি বলেন, দেশের মানুষকে একটু সুন্দর জীবন দিতে সারা জীবন কষ্ট করে গেছেন জাতির পিতা তার নেতৃত্বেই আমরা দেশের স্বাধীনতা পেয়েছি অথচ বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচার না করে পুরস্কৃত করা হয়েছে খালেদা জিয়া ভোট চুরি করে বঙ্গবন্ধুর খুনি ফারুক-রশীদকে সংসদে বসিয়েছেন, বিরোধী দলের নেতা পর্যন্ত বানিয়েছেন জেনারেল এরশাদও ফ্রিডম পার্টি গঠন করে বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনিকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করেছিলেন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে কী কষ্ট স্বীকার করতে হয়েছে তা আমি জানি সব ব্যথা বুকে চেপে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি একটাই কারণ, আমার বাবা জাতির পিতা দেশের মানুষের জন্য সারা জীবন ত্যাগ স্বীকার করেছেন মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে, তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে সমস্ত জীবনটা বিলিয়ে দিয়েছেন তাই আমি নিজের সুখের কথা চিন্তা না করে, দেশের মানুষ যেন ভালো থাকে, তারা যেন সুখের মুখ দেখে, দেশটা যেন এগিয়ে যায়, সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি শুধু চাই দেশের মানুষ যেন সুন্দর জীবন পায়, বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে মর্যাদা নিয়ে চলতে পারে

শেষ হলো সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশন

একটানা দীর্ঘ ২৮ কার্যদিবস চলার পর গতকাল শেষ হয়েছে চলমান একাদশ জাতীয় সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশন গত জানুয়ারি এই অধিবেশ শুরু হয় অধিবেশনের প্রথম দিন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সংসদে ভাষণ দেন এরপর রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সরকারি বিরোধীদলীয় ২২৭ জন এমপি মোট ৫৪ ঘণ্টা ২৪ মিনিট আলোচনা করেন তবে ভাষণের ওপর কেউ কোনো সংশোধনী প্রস্তাব আনেননি ফলে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয় এর আগে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা চিফ হুইপ নূর--আলম চৌধুরী বক্তব্য রাখেন

অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে স্পিকার জানান, এই অধিবেশনে মোট সাতটি বিল পাস হয় প্রধানমন্ত্রীর জন্য ১২৪টি প্রশ্ন জমা পড়ে এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ৫৫টি প্রশ্নের জবাব দেন

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন