উচ্চশিক্ষা

মানোন্নয়নে বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা আমলে নিন

বিগত দুই দশকে দেশে উচ্চশিক্ষায় সংখ্যা অবকাঠামোগত উল্লম্ফন ঘটেছে বটে, মানে রয়ে গেছে প্রশ্ন নিয়মিত বিরতিতে তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে বরাবরের মতো সম্প্রতি প্রকাশ হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিংয়ের জন্য বিশ্বখ্যাত যুক্তরাজ্যভিত্তিক কিউএস জরিপের প্রতিবেদন পশ্চিমের উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দূরে থাক, ২০২০ সালের সর্বসাম্প্রতিক জরিপে শীর্ষ ২০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, জাপান, মালয়েশিয়া ভারতসহ আমাদের অদূরবর্তী দেশগুলোর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয় জায়গা করে নিয়েছে এমনকি রাজনৈতিকভাবে সংঘাতময় অঞ্চল মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরবের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও উল্লিখিত ২০০-এর তালিকায় স্থান পেয়েছে সাংহাই, স্কপাস টাইমসের মতো অন্য স্বীকৃত বৈশ্বিক র্যাংকিংয়েও এশিয়ার উল্লিখিত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অব্যাহতভাবে ভালো করছে অন্যদিকে হতাশাজনক বিষয় হলো, উচ্চশিক্ষার বৈশ্বিক প্রবণতার উল্টো পথে চলছে বাংলাদেশ কিউএসের সর্বশেষ জরিপে (২০২০) দেশের সবচেয়ে প্রাচীন উচ্চশিক্ষার বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশ্বিক অবস্থান ৬০১তম থেকে ৮০১তম ধাপে নেমে এসেছে  অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থানও নিম্নগামী সময়ের চাহিদায় দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে প্রায় অর্ধশত সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দেশব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য বিপুল অংকের উন্নয়ন বাজেটও রাখছে সরকার শিক্ষা খাতে বাস্তবায়ন করা হয়েছে বিভিন্ন প্রকল্প আশা করা হয়েছিল, আলোচ্য প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার মানে লক্ষণীয় পরিবর্তন আসবে তবে দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, বিভিন্ন সূচকে দেশের উচ্চশিক্ষার মান তো বাড়েইনি; বরং কয়েকটি সূচকে কমেছে এটি উচ্চশিক্ষার নৈরাশ্যজনক মানেরই পরিচায়ক কাজেই সময় এসেছে গৃহীত প্রকল্পগুলোর কার্যকারিতা পর্যালোচনার শুধু প্রকল্পভিত্তিক অর্থ খরচ করলেই হবে না, এর সর্বোচ্চ সুফল নিশ্চিতে উদ্ভাবনী পথ অন্বেষণ কর্তৃপক্ষের কঠোর তদারকি বৃদ্ধিও জরুরি প্রয়োজন উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে প্রতিবন্ধকগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোর সুষ্ঠু সমাধান

লক্ষণীয়, যেকোনো দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য উচ্চশিক্ষা অন্যতম তাত্পর্যজনক ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচ্য ইতিহাসজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নতুন জ্ঞান সৃষ্টি পুরনো জ্ঞানের বিস্তার, মানবজাতি মানবসভ্যতার প্রভূত সুফল নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে বাংলাদেশেও বিশেষত রাষ্ট্র জাতি গঠনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান অনস্বীকার্য কিন্তু জ্ঞান বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে সমাজ-রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যেভাবে ভূমিকা রাখার কথা ছিল, সেভাবে পারেনি, পারছে না মানের দিক থেকেও ক্রমে পিছিয়ে পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বর্তমান জ্ঞাননির্ভর অর্থনীতির যুগে বিশ্ববিদ্যালয়কে এখন আর শিক্ষার্থীদের সাদামাটা পাঠদান সনদ প্রদানের কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনার সুযোগ নেই ঐতিহ্য নিয়ে পড়ে থাকার দিনও শেষ বিশ্ববিদ্যালয় এখন ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধির চালক মূল্যবান তথ্য বা জ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ উৎস বিশ্ববিদ্যালয় তারা দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করে নতুন ধারণার জন্ম দেয় আরেকটি বিষয়, উচ্চশিক্ষা দেশ বা আঞ্চলিক গণ্ডির মধ্যেও আটকে নেই উচ্চশিক্ষার বিশ্বায়ন ঘটেছে তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যকার প্রতিযোগিতা এখন বৈশ্বিক বিভিন্ন সংস্থার করা র্যাংকিং উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় নতুন মাত্রা এনেছে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সম্মানের, সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলার প্রতিযোগিতায় অংশ না নেয়ার অর্থ পিছিয়ে পড়া নতুন বাস্তবতায় বিভিন্ন দেশের সরকারেরও টনক নড়েছে তারা বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, র্যাংকিংয়ে অন্তর্ভুক্তি অগ্রগতির জন্য উদ্যোগ নিচ্ছে খাতে বিপুল অর্থ ব্যয় করছে উদাহরণ হিসেবে চীন, ভারত, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, জাপান, ফ্রান্স, জার্মানির কথা উল্লেখ করা যায় আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানে উন্নীতের ঘোষণা দিয়েছে এমনকি নাইজেরিয়ার মতো দারিদ্র্যপীড়িত দেশও অদূর ভবিষ্যতে অন্তত দুটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বের শীর্ষ ২০০টির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্য ঠিক করেছে আমাদেরও ধরনের লক্ষ্য নির্ধারণ এখন সময়ের দাবি

দেশে বৈশ্বিক র্যাংকিংকে গুরুত্ব না দেয়ার একটি প্রবণতা লক্ষ করা যায় এজন্য অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষগুলো ওইসব র্যাংকিংয়ে বিবেচ্য বিষয়-সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে না বলে অভিযোগ রয়েছে প্রবণতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে আমাদের উচ্চশিক্ষায় জ্ঞানসম্পদ প্রাপ্তি যতটুকু আছে, তা যদি ভালোভাবে উপস্থাপন করা যায়, তাহলে বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান কিছুটা উন্নতি হবে বৈকি আর কিছু না হোক, তাতে অন্তত আমাদের প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতার উন্নয়ন ঘটবে বর্তমানে মানসম্পন্ন শিক্ষক আধুনিক শিক্ষা সরঞ্জাম এবং গবেষণা ঘাটতিমোটাদাগে তিনটিই হলো বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার মান না বাড়ার প্রধান প্রতিবন্ধক এসব প্রতিবন্ধক দূরীকরণে অন্য দেশগুলো কীভাবে বৈশ্বিক জ্ঞানজগতে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে, সেই অভিজ্ঞতা আমলে নিতে হবে প্রয়োজনে বিভিন্ন দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে পারস্পরিক জ্ঞান বিনিময়ের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সরকার দেশে উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে বলে প্রত্যাশা

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন