বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা তাপস পালের প্রয়াণ

ফিচার ডেস্ক

দাদার কীর্তি থেকে সুরের ভুবন, সাহেব থেকে অবোধএর চেয়েও যত দূর চোখ যায় তত দূর তিনি নিজেকে ধারণ করেছিলেন নিপাট সব চরিত্রে হিরোইজম বলতে চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে যে শব্দটি আজও প্রবলভাবে হাজির, তথাকথিত সেই শব্দটিকে তিনি তার সরল অভিনয়শৈলী দিয়ে একেবারে ভেঙেচুরে দিয়েছিলেন আটপৌরে সাধারণ পারিবারিক ছবিও তার কারণে ব্যাপক বাণিজ্যিক সফলতা পেয়েছিল, যার অভিনয় নৈপুণ্যের মুগ্ধতা সীমানা ভেদ করে দেশের মানুষের কাছেও পৌঁছেছিল অপরাজেয় সেই অভিনেতা তাপস পালকে হারিয়ে গোটা বাংলা চলচ্চিত্রের জগত্টাই যেন শোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে সাধারণ দর্শক, দেব, সোহম, কোয়েলের মতো তরুণ অভিনেতা, বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের মতো নির্মাতা কিংবা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মমতা ব্যানার্জিপ্রত্যেকেই তাপস পালের প্রয়াণে দুঃখ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এর আগে সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে তাপস পাল মুম্বাইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন দীর্ঘদিন ধরে স্নায়ুরোগে ভুগছিলেন তিনি মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬১ বছর

১৯৫৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর হুগলির চন্দননগরে জন্মগ্রহণ করেন তাপস পাল চলচ্চিত্রজগতে পা রাখার সময় তাপস পালের বয়স ছিল ২২ বছর তরুণ মজুমদার পরিচালিত দাদার কীর্তি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি জগতে পা রাখেন এরপর গুরুদক্ষিণা, সাহেব, ভালোবাসা ভালোবাসাসহ উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ব্যবসাসফল ছবি উপহার দিয়ে পৌঁছে যান জনপ্রিয়তার শীর্ষে অভিনেতা হিসেবে তিনি বাংলাদেশেও সমান জনপ্রিয় ছিলেন সাহেব ছবির জন্য তিনি ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার পান তাপস পাল বলিউড তারকা মাধুরী দীক্ষিতের সঙ্গে অবোধ নামে হিন্দি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন

দেবশ্রী-তাপস বাংলা ছবির অন্যতম জুটি অভিনীত ছবির মধ্যে রয়েছে অর্পণ, সুরের সাথী, সুরের আকাশে, নয়নমণি, চোখের আলোয়, তবু মনে রেখো মূলত আশি থেকে নব্বইয়ের দশকের বাংলা চলচ্চিত্রের প্রেম, অভিমান, অনুরাগ লড়াইয়ে বাঙালির যাবতীয় আবেগের সঙ্গে মিশে ছিলেন তাপস পাল দেবশ্রীর পর শতাব্দীর সঙ্গে জুটি বাঁধেন অভিনেতা হরনাথ চক্রবর্তী, তরুণ মজুমদারের হাত ধরে জুটির একের পর এক ছবি হিট হয় বক্স অফিসে ইন্দ্রাণী হালদার রচনা ব্যানার্জির সঙ্গেও জুটি বেঁধেছেন তিনি দেবাদিত্যের আটটা আটের বনগাঁ লোকাল ছবিতে শেষবারের মতো দেখা গিয়েছিল তাকে

অভিনেত্রী রচনা ব্যানার্জির প্রথম ছবির নায়ক ছিলেন তাপস পাল তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে রচনা একবাক্যে বলেছেন, উত্তম কুমারের পর অন্যতম সেরা অভিনেতা তাপস দা

বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের উত্তরা জানলা ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তাপস পাল তার মৃত্যুর পর বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত স্মৃতিচারণ করেন তিনি বলেন, আজ একটা অদ্ভুত দৃশ্য আমার চোখের সামনে ভাসছে উত্তরার জন্য আমি আর তাপস পাল ভেনিসে পৌঁছেছি পুরস্কার নিতে এতটাই খুশি হয়েছে যে ভেনিসের রাস্তায় নাচতে শুরু করে দিল আমি তাপসকেই চিনি ওর প্রজন্মের অন্যতম সেরা অভিনেতা ওকে ঠিকমতো ব্যবহার করা হলো না এই আফসোস থেকে যাবে চিরকাল বুদ্ধদেব আরো যোগ করেন, ওকে আমি খুব অদ্ভুত চরিত্র দিয়েছিলাম আমার ছবিগুলোয় উত্তরায় কুস্তিগীর অন্যদিকে জানলায় চোর অসামান্য অভিনয় করেছিল আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম তাপসের অভিনয়ের শক্তিমত্তা নিয়ে তিনি বলেন, আসলে বেশির ভাগ মানুষই জানে না যে সে জীবনে কী চায় তাপসের ক্ষেত্রেও রকমটাই হয়েছিল আরো অনেক নজরকাড়া গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করে সারা বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে পারত ওর মধ্যে এই ক্ষমতা ছিল অথচ সেটা নিজে জানত না


অভিনেতা তাপস পাল রাজনীতির ময়দানেও সফল ছিলেন ২০০১ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের হাত ধরে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন তিনি একই বছর আলিপুর কেন্দ্র থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন ২০০৯ সালে লোকসভা ভোটে কৃষ্ণনগর কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হন ২০১৪ সালে একই কেন্দ্র থেকে পুনরায় জয়ী হন তিনি

তাপস পালের প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন পশ্চিবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি রাজ্যের তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের তরফে এক শোকবার্তায় তিনি লিখেছেন, বিশিষ্ট অভিনেতা প্রাক্তন সাংসদ তাপস পালের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি সময় মমতা তাপস পালের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নিয়েও কথা বলেন

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন