আধুনিক মানুষের নতুন ৫ মানসিক বিকার

বণিক বার্তা অনলাইন

ফোবিয়া বা মনস্তত্বের ভাষায় যাকে বলা যায় অমূলক ভীতি। হোমোফোবিয়া, জেনোফোবিয়া, ইসলামোফোবিয়া এমন শব্দ প্রায়ই শোনা যায়। বাংলায় উচ্চতাভীতি, মাকড়সাভীতি ইত্যাদি মানসিক বিকারগুলোর সঙ্গে সবাই কমবেশি পরিচিত। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মানুষের মধ্যে নতুন কিছু ফোবিয়া শনাক্ত করেছেন মনোবিদরা। এতোদিনের বিভিন্ন চেনা ফোবিয়ার বাইরে বিগত কয়েক বছরে যুক্ত হয়েছে এসব ফোবিয়া। আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের সর্বশেষ ‘ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিক্যাল ম্যানুয়াল অব মেন্টাল ডিজঅর্ডার’ বা ডিএসএম-৫ এ এগুলোকে নতুন ফোবিয়া হিসেবে অনুমোদনও দেয়া হয়েছে। নিচে এ মানসিক বিকারগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:

নোমোফোবিয়া

সেলফোন এখন মানুষের একটি প্রত্যঙ্গের মতো হয়ে গেছে। বিশেষ করে কিশোর বা তরুণ বয়সীদের কাছ থেকে এটিকে বিচ্ছিন্ন করা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু এ নিয়ে কারো মধ্যে অতি উত্তেজনা থেকে উদ্বেগ তৈরি হয়। যেমন: নোটিফিকেশন আর মিসড কল দেখলেই বুকের মধ্যে চিন চিন করে ওঠে। কিন্তু ফোন ছাড়া এক দণ্ড থাকতে পারে না। ফোন ছাড়া কিছু সময় কাটালেই মনে হয়- কতো না নোটিফিকেশন, কল আর মেসেজ এসে বসে আছে। এ কারণে তারা ফোন ছাড়া থাকতেই ভয় পায়। এভাবেই এক পর্যায়ে তা পরিণত হয় ‘নোমোফোবিয়ায়’। 

এডিটোভালটাস ফোবিয়া

বেশিরভাগ মানুষই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে আত্মপ্রচারের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করে। লাইক পাওয়ার নেশা তাদের এমনভাবে পেয়ে বসে যে এর জন্য জীবনের ঝুঁকি নিতেও দ্বিধা করে না। অন্যদিকে ভার্চুয়াল জগতের সামনে নিজের ভাবমূর্তি নিয়ে সবসময় উদ্বেগে থাকে কিছু মানুষ। উদ্বেগ এমন পর্যায়ে চলে যায় যে, পোস্ট করা ছবি নিয়ে কে কী ভাবল, কোন পোস্টে বা কমেন্টে কে কী মনে করল এগুলো ভাবতে ভাবতেই দিন চলে যায়। ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ এ ভেবে ছবি বা মন্তব্য পোস্ট করতে গিয়েও হাত গুটিয়ে নেয়! এটিকেই বলা হচ্ছে এডিটোভালটাস ফোবিয়া। আক্ষরিক অর্থে বলা যায়, ফেসবুক ফোবিয়া।

ইকো অ্যাংজাইটি

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বহু বছর ধরেই সচেতন মানুষদের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। এর ফলে ঋতু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে যাওয়া, উদ্ভিদ ও প্রাণীর নতুন রোগবালাই এবং আচরণে পরিবর্তন দিন দিন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এসব মিলে জন্ম দিয়েছে এক ফোবিয়া। বিশ্বজুড়ে তরুণ প্রজন্মই এতে বেশি প্রভাবিত হয়েছে। এর মধ্যে প্রায়ই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে চলচ্চিত্রও নির্মাণ হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে জেঁকে বসছে অভাবনীয় বিপদের শঙ্কা। এটিকেই বলা হচ্ছে ‘ইকো অ্যাংজাইটি’।

ফুড নিওফোবিয়া

ব্যস্ততা হোক বা অন্য কোনো কারণে হোক খাওয়ার জন্য সময় দেয়ার প্রতি অনীহা বাড়ছে। খাওয়াটাকে চরম বিরক্তিকর কাজ বলে বিবেচনা করছে মানুষ। অনেকে সাপ্লিমেন্ট ফুড বা ট্যাবলেটের কথাও চিন্তা করছে। খাবারের নতুন কোনো পদ দেখলে এ ভীতি আরো বেড়ে যায়। খাবার দেখলেই পালিয়ে যায়। এই ভীতিই ধীরে ধীরে উদ্বেগের আকার নেয়। তখনই জন্ম নেয় ‘ফুড নিওফোবিয়া’।

কার্বোফোবিয়া

শরীরের ওজন নিয়ে এতো সচেতন আর কখনো ছিল না মানুষ। ওজন কমানোর জন্য কি-না করছে! খাবার খাচ্ছে খুব সতর্ক হয়ে। কার্ব ছাড়া, খুবই কম চর্বিযুক্ত খাবার বেছে নিচ্ছে। ডায়েট এখন ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। এই অতিসচেতনতার কারণে কার্বোহাইড্রেট দেখলেই বিশেষ করে স্বাস্থ্যসচেতন (বলা ভালো ওজন সচেতন) মেয়েরা ভয়ে সিঁটিয়ে যায়! তারা ধরেই নেয় কার্বোহাইড্রেট মানেই ক্ষতিকর। এরকম আচরণ থেকেই এক সময় পেয়ে বসে ‘কার্বোফোবিয়া’।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন